সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল না করে অন্তর্বর্তী সরকার জনআস্থা হারাচ্ছে: ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক

সাইবার নিরাপত্তা আইন এখনো বাতিল না করায় অন্তর্বর্তী সরকার জনআস্থা হারাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক।
আজ সংগঠনটির দেওয়া বার্তায় বিষয়টি জানানো হয়েছে। সেই বার্তায় সই করেছেন ২৮ নাগরিক।
এতে বলা হয়েছে, আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারীরা বিগত মাফিয়া সরকারের আমলে নিবর্তনমূলক আইসিটি (৫৭ ধারা) বা ডিজিটাল নিরাপত্তা বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের মজলুম। আমরা খুবই হতাশ হয়ে লক্ষ করছি যে, গণঅভ্যুত্থানের বাংলাদেশেও কুখ্যাত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল তো হয়ই নাই, বরং এই আইনে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মামলা করা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন থেকে এই আইনে মামলা নেওয়া বন্ধ করার পরিবর্তে নিয়মিত মামলা নেওয়া হচ্ছে, তদন্ত ছাড়াই গ্রেপ্তারের তোড়জোড় করা হচ্ছে।
'অন্তর্বর্তী সরকারের একটা প্রথম ও প্রধান কমিটমেন্ট ছিল সাইবার নিরাপত্তাসহ সব নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করার। সেই আগস্টেই তারা তা ঘোষণা করেন। এরপর বিভিন্ন সময় সরকার অন্তত চারবার সময় নিলেও সাইবার নিরাপত্তা আইন এখনো বহাল আছে। সর্বশেষ বিগত ২১ জানুয়ারি আইন উপদেষ্টা স্পষ্ট ঘোষণা দেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে আইন মন্ত্রণালয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। আর তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেটা সম্পন্ন করে তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আইন বাতিলের ঘোষণা দিবেন। এরপর আবারও প্রায় দেড় মাস পার হলেও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাকি কাজ সম্পন্ন হয় নাই। আইনও বাতিল হয় নাই। মামলা বাতিলের কোনো তালিকাও আমরা পাই নাই। বরং নিত্যনতুন মামলা নেওয়া হচ্ছে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা ক্রমেই মনে করছি, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলে প্রকৃতভাবে সরকারের আন্তরিকতা, সিরিয়াসনেস, কর্মতৎপরতার ঘাটতি আছে। এই অবহেলা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে হত্যা করছে। সরকারের এই অযোগ্যতা, অদক্ষতার ফলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমেই জনগণের আস্থা হারাচ্ছে। এর বিপরীতে ষড়যন্ত্রকারীরা আইন হাতে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে খুনের ঘোষণা, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, মব জাস্টিস ইত্যাদির তাণ্ডপ চালাচ্ছেন। পুলিশও সাইবার নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার, জুলুম করতে অতি উৎসাহী। এবং তারা উপরোক্ত ফৌজদারি অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিচ্ছেন।
'আমরা আরও মনে করি বর্তমান সরকার প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইন আবারও একটি ভুল উদ্যোগ হতে যাচ্ছে। জনমনে সর্বশেষ সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে যে আতঙ্ক আছে, প্রস্তাবিত সাইবার সুরক্ষা আইন তার প্রভাব মুক্ত থাকবে না। বরং সাইবার হ্যাকিং, অনলাইনে নারী নির্যাতন, পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত নিয়মিত আইনগুলোর আধুনিকায়ন বা একান্ত প্রয়োজনে সেগুলোর নতুন আইন বানানোই জনমনে আস্থার সঞ্চার করতে পারে। গণঅভ্যুত্থানের বাংলাদেশে জনগণ তাই প্রত্যাশা করে। সর্বোপরি, অবিলম্বে সরকারকে সাইবার নিরাপত্তাসহ সব নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করতে হবে। এসব আইনের আওতায় গ্রেপ্তার সব বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং সরকারের নিবর্তনমূলক আইন বানানোর একচ্ছত্র ক্ষমতা কাঠামোকে জবাবদিহিমূলক করতে হবে।'
এতে সই করেছেন—
১। শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী
২। খাদিজাতুল কুবরা, শিক্ষার্থী, ঢাকা
৩। প্রীতম দাশ, সদস্য সচিব, ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক
৪। মঞ্জিলা ঝুমা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৫। জামাল মীর, সাংবাদিক, বরগুনা
৬। এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান, শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক, মালয়েশিয়া
৭। মাইদুল ইসলাম, পিএইচডি গবেষক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র
৮। আল মামুন জীবন, ঠাকুরগাঁও
৯। নাঈম বিশ্বাস, কুষ্টিয়া
১০। এহসান হাবীব, ময়মনসিংহ
১১। মো. রাকিব, কুড়িগ্রাম
১২। আহসান হাবীব তছলিম, খাগড়াছড়ি
১৩। নুসরাত জাহান সোনিয়া, সহকারী শিক্ষক (২০১৮ থেকে সাময়িক বরখাস্ত), সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলাপাড়া, পটুয়াখালী
১৪। রিতা দেওয়ান, বাউল শিল্পী, মানিকগঞ্জ
১৫। রহিম শুভ, সংবাদকর্মী
১৬। বায়েজিদ আহমেদ, বিশেষ প্রতিনিধি, প্রথম আলো
১৭। মো. আলফাত হোসেন, সাতক্ষীরা
১৮। রাহাত শান্তনু, অস্ট্রেলিয়া
১৯। আহমেদ সাব্বির, রাজনৈতিক কর্মী ও প্রবাসী, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
২০। সোনিয়া আক্তার স্মৃতি, সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক কর্মী
২১। সাইদুল হক, শিক্ষার্থী, ফেনী
২২। শাহনেওয়াজ চৌধুরী, চট্টগ্রাম
২৩। রহিম শুভ, সংবাদকর্মী
২৪। সাধনা মহল, রাজনৈতিক কর্মী
২৫। মোহাম্মদ আবুল বাশার, সৌদি আরব
২৬। ফজলে এলাহী, সাংবাদিক
২৭। গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার, আহ্বায়ক, ডিএসএ ভিক্টিমস নেটওয়ার্ক
২৮। দিদারুল ভূঁইয়া, অর্থ সমন্বয়ক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
Comments