কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

নির্মাণ শুরুর এক যুগ পর হাসপাতাল চালু, এখনই মিলছে না ‘পূর্ণাঙ্গ’ সেবা

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: স্টার

নির্মাণ শুরুর এক যুগ পর চালু হলো কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কার্যক্রম। মেডিসিন ও শিশু বিভাগে ৯০টি শয্যায় রোগীদের দেওয়া হবে চিকিৎসা। তবে চাইলেই মিলবে না সেবা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রতিষ্ঠার পর হাসপাতালের আবাসিক কার্যক্রম শুরু হলেও তা সবার জন্য নয়। শুধুমাত্র ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার হওয়া রোগীরা এখানে চিকিৎসা পাবেন। সেই সঙ্গে রোগীদের খাওয়ার ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র কিংবা পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিশ্চয়তাও দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে হাসপাতালটি চালুর উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধন ঘিরে হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. রিজওয়ানুর রহমান। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে তিনি হাসপাতালের দুটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখেন, রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। সেই সময় তার সঙ্গে ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল কবীরসহ স্থানীয় অনেকেই।

রোগীদের খাবার বা ভর্তির ব্যবস্থা না থাকা সত্ত্বেও এভাবে হাসপাতাল চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক ডা. মো. আনোয়ারুল কবীর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে আমরা দুটি ওয়ার্ড চালুর বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলাম। সেই মোতাবেক দুটি ওয়ার্ডে ৯০ শয্যার আবাসিক কার্যক্রম শুরু হলো।

সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের লোকবলসহ বেশকিছু সংকট রয়েছে। সেসব বিষয়ে কাজ চলছে। ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হবে হাসপাতাল। আপাতত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে পাঠানো রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে। কোনো রোগীকে সরাসরি ভর্তি নেওয়া হবে না।

উল্লেখযোগ্য আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই গতকাল হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়। দুপুরে হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু বিভাগ পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. রিজওয়ানুর রহমান, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আনোয়ারুল কবীর, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও চিকিৎসকরা।

এর আগে, রোববার ও সোমবার সকালে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে বেশ কিছু রোগী নতুন এই হাসপাতালে আনা হয়। রোগীরা হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করলেও ওষুধ ও খাবার পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

হাসপাতালে ভর্তি ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে আসা আমজাদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, শুক্রবার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। এরপর গতকাল এখানে পাঠিয়েছে। এখানে চিকিৎসা অনেক ভালো। কিছুক্ষণ পরপরই চিকিৎসক এসে খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে ওষুধ ও প্রয়োজনীয় খাবার বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে।

২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুরে ২০ একর জমিতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা হয়নি।

পরে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১১ কোটি টাকায়। দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকায়। তৃতীয়বারের মতো ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষ হয়। ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর হাসপাতাল ভবনের একটি অংশে আংশিক বহির্বিভাগ চালু হয়।

উদ্বোধন শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. রিজওয়ানুর রহমান বলেন, একটা বড় কাজ শুরু হলো এখন থেকে। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি অন্তত শুরু হলো। এখন ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গরূপ দেওয়া প্রচেষ্টা চলমান থাকবে। রোগীদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হবে।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আপাতত আমরা রেফার্ড রোগী ভর্তি নিচ্ছি। আর সেক্ষেত্রে একাডেমিক কেসগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে কোন প্রক্রিয়ায় রোগী নির্ধারণ করা হবে এখানে পাঠানোর জন্য, তা নিয়ে ডা. আল মামুন বলেন, কিছু ক্রাইটেরিয়া থাকবে। যে রোগীগুলো খুব বেশি সিরিয়াস থাকবে না। ক্রনিক রোগী হবে, যারা অনেকদিন হাসপাতালে থাকতে পারবে। আমাদের স্টুডেন্ট যারা আছে তারা শিখতে পারবে; এমন রোগীদের সিলেক্ট করে এখানে ভর্তি করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

The cut-off rate was Tk 121.5 per US dollar

3h ago