শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নিন্দা, প্রত্যাহারের দাবি

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

শিল্পখাতে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে 'রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন'।

সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জানায়, 'বিনিয়োগ সামিট থেকে অনেক উচ্চ প্রত্যাশা ও প্রতিজ্ঞার পর নতুন শিল্প গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সরকারের মধ্যকার অস্থিরতা, অসামঞ্জস্যতা প্রকাশ করে।'

'এই সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, বিনিয়োগের পরিবেশ এবং সাধারণ মানুষের জীবনমানের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি। নিম্নোক্ত যুক্তিসহ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ তুলে ধরা হলো—

১. করোনা মহামারি থেকে ২০২৪-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর্যন্ত অর্থনৈতিক সংকটের পুনরাবৃত্তি

করোনা মহামারি থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিক সংকটে জর্জরিত। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের সাফ মন্তব্য, সরকার বিভিন্ন প্যাকেজ ও নীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দাবি করলেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা সতর্ক করেছেন, এই সিদ্ধান্ত নতুন শিল্পে বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং এটি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমানোর ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে। যেখানে সরকার একদিকে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলছে, ঠিক সে সময়ে এই গ্যাসের দাম বাড়ানো "উল্টো নীতি" হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

২. বিনিয়োগবান্ধব নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক

সরকার একদিকে "সার্বিক বিনিয়োগ বাড়ানোর" অঙ্গীকার করলেও অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে শিল্পখাতকে চাপের মুখে ফেলেছে। শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটারপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩১.৫০ টাকা থেকে ৪২ টাকা করা হয়েছে। এই বৈষম্যমূলক নীতি, যেখানে পুরনো ও নতুন শিল্পে ভিন্ন দাম রাখা হয়েছে, এটি আইনি বৈধতা ও ন্যায্যতার প্রশ্নে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এ ছাড়া, নতুন শিল্প স্থাপনকারী উদ্যোক্তাদের জন্য এর চেয়ে বড় বাঁধা আর কী হতে পারে?

৩. সুষ্ঠু তদারকি ও যৌক্তিকতার অভাব

বিইআরসি নিজেই স্বীকার করেছে যে, তারা মূল্যবৃদ্ধির পক্ষে কোনো স্পষ্ট অর্থনৈতিক বা রাজস্বভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি। কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী, "রাজস্ব চাহিদা" বিবেচনা না করে মন্ত্রণালয়ের অনির্দিষ্ট "পরামর্শে" এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি জুলাই গণঅভ্যুত্থানজাত সরকারের প্রতিশ্রুত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক শাসনব্যবস্থার পরিপন্থী।

৪. ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের উপেক্ষা

গণশুনানিতে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করলেও তাদের আপত্তি উপেক্ষা করা হয়েছে। বিইআরসির দাবি অনুযায়ী, "সিস্টেম লস" কমানোর জন্য দাম বাড়ানো হলেও এই লসের কারণ ও সমাধান নিয়ে কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ নেই। বরং শিল্প মালিকদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করবে।'

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রস্তাব

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন গঠনতান্ত্রিক সংস্কার ও ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে একটি মানবিক রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা নিম্নলিখিত দাবিগুলো উত্থাপন করছি—

১. তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

২. শিল্পখাতসহ সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সহনীয় মূল্য কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।

৩. জ্বালানিখাতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং দুর্নীতি ও অপচয় রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. নতুন ও পুরনো শিল্পের মধ্যে বৈষম্য দূর করে একই মূল্যনীতি চালু করতে হবে।'

সংগঠনটির মতে, 'গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের অগ্রাধিকারহীনতা, ব্যবসায়ী ও জনগণের প্রতি দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের অদূরদর্শিতাকে প্রকাশ করে।'

'রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জোরালোভাবে দাবি করে যে, জনগণের অর্থনৈতিক স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক এবং ভবিষ্যতে কোনো নীতি প্রণয়নের আগে সব স্তরের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও তাদের সম্মতি নিশ্চিত করা হোক।'

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

3h ago