অনভিজ্ঞ পাইলটদের লাইসেন্স: ভুয়া ফ্লাইট রেকর্ড বানিয়েছেন পাইলটরা

লাইসেন্স পাওয়া একজন পাইলট শর্তপূরণে যে ফ্লাইট ঘণ্টার প্রয়োজন তার অর্ধেকও উড়াননি; আরেকজন নিজের সইয়ে নিজেকে দিয়েছেন উড়োজাহাজ চালানোর সর্বোচ্চ সনদ এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স (এটিপিএল)। এখানেই শেষ নয়! তৃতীয় ব্যক্তি লাইসেন্স পেতে জমা দিয়েছেন ভুয়া ফ্লাইট রেকর্ড। আরও অবাক করা তথ্য হলো, চতুর্থ ব্যক্তি এমন একটি উড়োজাহাজের 'চেক পাইলট' হয়েছেন, যেটি তিনি কখনোই চালাননি।

নথি থেকে প্রমাণ মেলে যে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অনেক আগে থেকে এসব অনিয়মের খবর জানলেও এই চার পাইলটের লাইসেন্স বহাল রয়েছে।

এদের মধ্যে একজন এখন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে পাইলট হিসেবে কর্মরত, একজন স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসে 'চেক পাইলট' হিসেবে নিয়োজিত। আরেকজন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসে কর্মরত ছিলেন। অন্যজন বর্তমানে কোথায় চাকরি করছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বেবিচকের নিরাপত্তা বিভাগের অভ্যন্তরীণ তদন্তে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেশের উড়োজাহাজ চলাচলের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO) বা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নজরদারির মুখে পড়তে হতে পারে।

নেই অর্ধেক যোগ্যতা

২০২৩ সালের ১৯ মার্চ বাংলাদেশ বিমানবাহিনী একাডেমি থেকে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়া আব্দুর রহমান আকন্দ পাইলটদের সর্বোচ্চ সনদ এটিপিএল পান।

বেবিচককে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি দাবি করেছেন যে এককভাবে, প্রধান পাইলট হিসেবে ২৬ ঘণ্টা পাঁচ মিনিট প্লেন চালিয়েছেন। একই সাথে, আরেকজনের তত্ত্বাবধায়নে প্রধান পাইলট হিসেবে ১২৮ ঘণ্টা ৩০ মিনিট উড়োজাহাজ উড়িয়েছেন, বলে তিনি দাবি করেছেন।

উড়োজাহাজ চলাচলের নিয়ম অনুযায়ী, পাইলটের লাইসেন্স পেতে একজন ব্যক্তিকে অন্তত ২৫০ ঘণ্টা উড়োজাহাজ উড়াতে হবে, যার মধ্যে কমপক্ষে ৭০ ঘণ্টা হতে হবে কারো এককভাবে, তত্ত্বাবধান ছাড়া। বাকি সময়টুকু কারো তত্ত্বাবধানে হতে পারে।

যদি ৭০ ঘণ্টা একা উড়োজাহাজ চালানো সম্পন্ন করতে না পারেন, তাহলে প্রধান পাইলট হিসেবে কারো তত্ত্বাবধানে মোট ৫০০ ঘণ্টা উড়াতে হবে।

কিন্তু বেবিচকের দাখিল করা নথি অনুযায়ী, আকন্দ এটিপিএল পাওয়ার আগে মাত্র ১৫৪ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট উড়োজাহাজ উড়িয়েছেন—যা এ ধরনের লাইসেন্স পেতে প্রয়োজনীয় শর্তের এক-তৃতীয়াংশের কম।

দ্য ডেইলি স্টার এসব নথি যাচাই করেছে।

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে আকন্দ দাবি করেন, তিনি নিয়ম মেনে ফ্লাইট ঘণ্টা পূরণ করেছেন এবং বিমানবাহিনী থেকে আসা পাইলটরা কিছু ছাড় পান।

দ্য ডেইলি স্টার ফ্লাইট রেকর্ড দেখালে তিনি বলেন, 'এগুলো আংশিক তথ্য'। তবে নিজের দাবির পক্ষে কোনো নথি দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

বিষয়টি আরও তুলনা করতে আকন্দের এক ব্যাচমেটের ফ্লাইট লগ তথ্য সংগ্রহ করেছে দ্য ডেইলি স্টার। তার সেই ব্যাচমেট একই মডেলের উড়োজাহাজ চালিয়েছেন এবং পরবর্তীতে একজন বেসামরিক পাইলট হয়েছেন। তার ফ্লাইট লগে 'পাইলট-ইন-কমান্ড আন্ডার সুপারভিশন' নামে কিছুই নেই।

আকন্দের তথ্য অনুযায়ী, তিনি এটিপিএল পাওয়ার আগেই ২০০৯ সালে বিমানবাহিনী আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী বাহিনী ছেড়ে দেন।

আইনে 'বিমান বাহিনী প্রধান বা অন্য কোনো কর্মকর্তা কর্তৃক বরখাস্ত, অপসারণ বা পদাবনতি' শীর্ষক ২০ ধারায় বলা হয়েছে, বিমান বাহিনী প্রধান বা তার অনুমতিপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা কাউকে বাহিনী থেকে বরখাস্ত, অপসারণ কিংবা পদাবনতি দিতে পারেন।

২৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট প্রধান পাইলট হিসেবে উড়োজাহাজ উড়িয়ে কেউ এটিপিএল পেতে পারেন কি না জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়া বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া।

আকন্দের কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সের (সিপিএল) বিষয়ে তিনি বলেন, 'ক্যাপ্টেন আব্দুর রহমান আকন্দের সিপিএলের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পি-ওয়ান (প্রধান পাইলট) ঘণ্টা ছিল।'

অথচ নিয়ম অনুযায়ী, সিপিএলের ক্ষেত্রেও কমপক্ষে ৭০ ঘণ্টা প্রধান পাইলট হিসেবে উড়োজাহাজ উড়াতে হয়, যেখানে আকন্দের ছিল ন্যূনতম শর্তের অর্ধেকেরও কম।

নেই কোনো অভিজ্ঞতা!

২০২৩ সালের ৫ নভেম্বরের বেবিচকের এক চিঠিতে দেখা যায়, ক্যাপ্টেন কবির-উল-আলমকে ফকার-৫০ নামক একটি উড়োজাহাজের জন্য 'ডেজিগনেটেড চেক পাইলট' হিসেবে সনদ পেতে পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়।

ডেজিগনেটেড চেক পাইলট (ডিসিপি) একজন ফ্লাইট পরীক্ষক। তিনি বেবিচকের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমতি পান এবং বেবিচকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন।

ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কবির কখনো ফকার-৫০ উড়োজাহাজ উড়াননি। তিনি ছিলেন এই উড়োজাহাজের আগের সংস্করণের ফকার-২৭ টাইপ-রেটেড পাইলট।

ICAO এবং বেবিচক—উভয় সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, কাউকে 'চেক পাইলট' হিসেবে মনোনীত করতে হলে, প্রধান পাইলট হিসেবে অন্তত ৭৫০ ঘণ্টা সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজ উড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।

তার রেকর্ড অনুযায়ী, তিনি ফকার-৫০ উড়োজাহাজে মোটে ১৪টি ফ্লাইট সিমুলেটর সেশন সম্পন্ন করেছেন।

উড়োজাহাজের ককপিটের মতো করে কম্পিউটার-জেনারেটেড দৃশ্য ব্যবহার করে তৈরি করা হয় ফ্লাইট সিমুলেটর। সেখানে ভার্চুয়াল অভিজ্ঞতা হলেও বাস্তব অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় না।

এই 'চেক পাইলট' হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ডিসি-১০ উড়োজাহাজে 'চেক ইনস্ট্রাক্টর' ছিলেন। ফকার-২৭ এবং ডিসি-১০ সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের উড়োজাহাজ। এমনকি এগুলোর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানও আলাদা। ডিসি-১০ তৈরি করেছে মার্কিন কোম্পানি ম্যাকডনেল ডগলাস এবং ফকার-২৭ তৈরি করেছে ডাচ কোম্পানি ফকার।

২০২৩ সালের আগস্টে বেবিচককে চিঠি দিয়ে স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনস জানিয়েছিল, তাদের প্রতিষ্ঠানে জরুরি ভিত্তিতে একজন চেক পাইলট দরকার। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই কবিরকে এই ছাড় দেওয়া হয়।

সেই চিঠিতে জানানো হয়, তারা একজন বিদেশি ফ্লাইট পরীক্ষকের ওপর নির্ভরশীল এবং তাকে বছরে একবারই পাওয়া যায়। ফলে তাদের জরুরি ভিত্তিতে চেক পাইলট নিয়োগ দিতে হবে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ফকার-৫০ উড়োজাহাজের জন্য কবিরকে পরীক্ষক হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হলে 'এই জটিল পরিস্থিতি থেকে আমরা উত্তরণ পাব'।

এ বিষয়ে জানতে কবিরের দুটি ফোন নম্বরে কল ও হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়েছিল দ্য ডেইলি স্টার। কিন্তু, তিনি কল রিসিভ করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের জবাব দেননি।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়ার মতে, এখানে কোনো নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, 'এ ধরনের উড়োজাহাজ (ফকার-৫০) বিরল। বিশ্বে এমন সিমুলেটর খুবই সীমিত। প্রশিক্ষকের সংখ্যাও কম। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের (স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনস) জন্য একজন বিদেশি প্রশিক্ষক নিতে খরচ বেশি হতো। ক্যাপ্টেন কবিরের অন্যান্য বড় উড়োজাহাজে ক্যাপ্টেন ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই উড়োজাহাজে তার দুই হাজার ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট রয়েছে। তিনি সিমুলেটরে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণেও উত্তীর্ণ হয়েছেন।'

তবে ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট স্কাই ক্যাপিটাল থেকে বেবিচককে পাঠানো ক্যাপ্টেন কবিরের সুপারিশপত্র অনুযায়ী, তার ফকার-৫০ উড়োজাহাজ উড়ানোর দুই হাজার ঘণ্টার অভিজ্ঞতা ছিল না।

ভুয়া ফ্লাইট রেকর্ড

২০২২ সালের এপ্রিলে বেবিচকের একটি তদন্ত টিম দেখতে পায়, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের পাইলট ক্যাপ্টেন নুরউদ্দিন আল মাসুদ তার ফ্লাইট ঘণ্টার রেকর্ড জালিয়াতি করেছেন এবং তার লগবুক সনদ জাল করেছেন।

২০২২ সালের ৯ মে বেবিচক তাকে চিঠি দেয়। যেখানে বলা হয়, 'আপনার লগবুক থেকে প্রাপ্ত তথ্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ' এবং এর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

পাইলটের লগবুকে তাদের ফ্লাইট অভিজ্ঞতার বিস্তারিত রেকর্ড থাকে। যেমন- তারিখ, সময়কাল, ফ্লাইটের ধরন, উড়ানো উড়োজাহাজ এবং ফ্লাইটে পাইলটের ভূমিকা (প্রধান পাইলট, সহ-পাইলট)। সেখানে মোট ফ্লাইট ঘণ্টা, একক ফ্লাইট, আন্তঃজেলা ফ্লাইট এবং রাতের ফ্লাইট ঘণ্টা পর্যন্ত উল্লেখ থাকে।

নথি থেকে জানা যায়, মাসুদ দাবি করেন, ভুলটি অনিচ্ছাকৃত। এরপর বেবিচক তাকে সংশোধিত লগ জমা দিতে সাত দিনের সময় দেয়।

তিনি ২০২৩ সালের ১০ জুন পর্যন্ত সংশোধিত লগ জমা দেননি এবং এর জন্য বিভিন্ন অজুহাত দেখান।

শেষ পর্যন্ত বেবিচক তার লগবুক পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে আসে যে, মাসুদ তার ফ্লাইট ঘণ্টা জাল করেছেন এবং তার রেকর্ডে থাকা ফ্লাইট ঘণ্টা প্রকৃত ফ্লাইট ঘণ্টার চেয়ে কয়েকশ ঘণ্টা বেশি।

তার জালিয়াতির একটি উদাহরণ হলো—তিনি উল্লেখ করেছেন, ডি হ্যাভিল্যান্ড কানাডার তৈরি ডিএইচসি-২ উড়োজাহাজ ৭৬২ ঘণ্টা চালিয়েছেন ডানদিকে বসে।

বড় উড়োজাহাজে প্রধান পাইলট বাম পাশে বসেন, আর সহকারী পাইলট থাকেন ডান পাশে। তবে ডিএইচসি-২ একটি ছোট উড়োজাহাজ এবং বাম পাশে বসে মাত্র একজন পাইলট এটি পরিচালনা করেন।

বেবিচকের তদন্ত প্রতিবেদনে লেখা আছে, 'ডিএইচসি-২ একটি একক-পাইলটচালিত উড়োজাহাজ।'

আরেক উদাহরণ হচ্ছে—বেবিচকের তদন্তে দেখা যায়, মাসুদ ২০০১ সালের ২৭ মার্চ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ফিলিপাইনের একটি ফ্লাইট স্কুলে ৩৪৬ ঘণ্টা ফ্লাইট রেকর্ড করেছেন। অথচ নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিলের পর ফিলিপাইনে তার উড়োজাহাজ উড়ানোর অনুমতি ছিল না। তবুও তিনি অক্টোবর পর্যন্ত ফ্লাইট রেকর্ড করে গেছেন।

বেবিচকের চূড়ান্ত মন্তব্য ছিল, 'মাসুদ ফিলিপাইনে ৩৪৬ ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা করেননি। তার জমা দেওয়া সনদটি ভুয়া।'

২০২৪ সালে ফিলিপাইনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের বেবিচককে চিঠি দিয়ে নিশ্চিত করে যে, মাসুদ তার রেকর্ড জালিয়াতি করেছেন। বেবিচকের চিঠির জবাবে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের ডাটাবেজে মাসুদের কিছু ফ্লাইট ঘণ্টার কোনো রেকর্ডই নেই। তাদের রেকর্ড অনুযায়ী, ক্যাপ্টেন মাসুদের তথ্য ও মোট ফ্লাইট সময়ে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে।

এত কিছুর পরও মাসুদের পাইলট লাইসেন্স এখনো বলবত রয়েছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে মাসুদ বলেন, তিনি বেবিচকের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন এবং বিচারাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না।

তবে বেবিচক চেয়ারম্যান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আদালতে রিট করার পরও ক্যাপ্টেন মাসুদ বর্তমানে তার লাইসেন্সের কোনো সুবিধা ব্যবহার করতে পারছেন না।

স্বার্থের দ্বন্দ্ব

দ্য ডেইলি স্টার ২০১৮ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, তৎকালীন বেবিচকের ফ্লাইট সেফটি ও রেগুলেশনের পরিচালক চৌধুরী মো. জিয়া-উল-কবীর ২০১৭ সালে ইন্দোনেশিয়ায় বোয়িং-৭৩৭ উড়োজাহাজের 'টাইপ রেটিং' প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস লিমিটেড থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ ধরনের প্রশিক্ষণে খরচ হয় ২৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এই টাইপ রেটিং প্রশিক্ষণের জন্য ইউএস-বাংলাকে পৃষ্ঠপোষক করার প্রস্তাব বেবিচকই দেয়।

জিয়ার লাইসেন্স ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি নিজেই নিজের এয়ারলাইন ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্সে সই করেছেন।

দ্য ডেইলি স্টারের কাছে যে লাইসেন্সটি এসেছে, সেটি ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইস্যু করা হয় এবং সেখানে তার নিজস্ব সিল ও সই রয়েছে। সেখানে লেখা—'উইং কমান্ডার চৌধুরী মো. জিয়া-উল-কবীর, পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনস)'।

জিয়া যখন নিজের লাইসেন্সে সই করেন, তখন তিনি পাইলটদের লাইসেন্স যাচাইয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফ্লাইট সেফটি রেগুলেটর ছিলেন। এটা সম্পূর্ণভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্বের উদাহরণ।

এ বিষয়ে জানতে দ্য ডেইলি স্টার জিয়াকে এবাধিকবার ফোন কল ও হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।

যোগাযোগ করা হলে এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া বলেন, তৎকালীন বেবিচক চেয়ারম্যানই জিয়ার লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, 'লাইসেন্স অনুমোদনের কর্তৃপক্ষ হচ্ছেন বেবিচক চেয়ারম্যান। তবে অনুমোদনের পর ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড রেগুলেশনসের পরিচালককে লাইসেন্সে সই করতে হয়।'

সামগ্রিক উড়োজাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'এখানে এমন কোনো নিয়ম ভঙ্গ হয়নি, যার কারণে উড়োজাহাজ উড়ানোকে অনিরাপদ বিবেচনা করা যায়। ICAO-এর মান পূরণে বেবিচক সবসময়ের মতোই সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Rickshaws no longer allowed on main roads: DNCC

More than 100 illegal battery-powered rickshaws were seized during the joint operation

8m ago