‘ড. ইউনূস হতাশ, পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন’

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এমন কী, তিনি পদত্যাগের বিষয়টিও বিবেচনা করছেন বলে জানা গেছে।

গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বাসভবন যমুনায় যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো সম্পর্কে জানেন এমন কয়েকটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্ররা জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ড. ইউনূস পদত্যাগ করার এবং এ বিষয়ে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি তার সরকারের কার্যকারিতা ও দায়িত্ব পালন নিয়ে অপবাদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে নানা জল্পনাকল্পনা ছড়িয়ে পড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ড. ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির তিন নেতা তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

পরবর্তীতে বিবিসি বাংলাকে নাহিদ জানান, প্রধান উপদেষ্টা 'পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন।'

তিনি বলেন, 'দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারেরতো পদত্যাগের একটা খবর আমরা আজকে সকাল থেকে শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সাথে দেখা করতে গেছিলাম।'

প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন নাহিদ।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, 'স্যার বলছেন আমি যদি কাজ করতে না পারি... যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণ অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার.....। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে।'

ড. ইউনূসের বরাত দিয়ে বিবিসিকে নাহিদ আরও জানান, 'আমিতো এভাবে কাজ করতে পারবো না। যদি রাজনৈতিক দলগুলা তোমরা সবাই একটা জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো।'

এ কথা শুনে প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানান জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন গঠিত দল এনসিপির নেতা নাহিদ।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, 'আমাদের গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যৎ সবকিছু মিলিয়ে উনি যাতে শক্ত থাকেন। এবং সবগুলা দলকে নিয়ে যাতে ঐক্যের জায়গায় থাকেন। সবাই তার সাথে আশা করি কো-অপারেট করবেন।'

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নাহিদ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন।

আরিফ বলেন, 'তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা তার ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করার কথা ভাবছেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে নাহিদ কোনো ধরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও ঐক্যের বিষয়গুলো বিবেচনার অনুরোধ জানান।'

সম্প্রতি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। এর পেছনে একাধিক রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভ, সামাজিক মাধ্যম ও রাজনৈতিক সমাবেশে উত্তপ্ত বক্তব্য ইন্ধন জুগিয়েছে।

ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে চাপ অব্যাহত রেখেছে বিএনপি। পাশাপাশি, গতকাল দলটি উপদেষ্টা পরিষদ ছোট করে আনার দাবি জানিয়েছে। অবিলম্বে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের অপসারণেরও দাবি জানিয়েছে বিএনপি। 

অপরদিকে, বুধবার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী। দলটি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করেন।

বর্তমান কমিশন 'পক্ষপাতদুষ্ট' বলে অভিযোগ করে নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, বর্তমান ইসি যদি পুনর্গঠন না করা হয়, তাদের অধীনে এনসিপি নির্বাচনে অংশ নেবে না।

এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী চায় সংস্কার প্রক্রিয়া শেষে এবং নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েই নির্বাচন হোক।

অপরদিকে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। বুধবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে তিনি এ কথা বলেন। 

সেনাপ্রধানের বরাত দিয়ে এক সূত্র জানান, 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এটা শুধু নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সম্ভব'।

এক সরকারি সূত্র জানিয়েছে, বুধবার সকালে ড. ইউনূস তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে উপদেষ্টা ছাড়া বাকি সবাইকে কক্ষ ছেড়ে যেতে বলেন। এরপর তিনি তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন।

এই আলোচনায় তিনি উল্লেখ করেন, অনেকেই অনেক মন্তব্য করছে এবং দাবিদাওয়া জানাচ্ছে। কেউ কেউ এমন কথাও বলছে যে আসন্ন নির্বাচনের আয়োজন করাই অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র দায়িত্ব।

ড. ইউনূস বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা নির্বাচন আয়োজনে তার অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে না পারলে তার বর্তমান পদে থাকার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কী না, সেটা জানতে চান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টার আবেগের বিষয়টি সবাই মেনে নিলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এক-দুই দিন সময় নেওয়ার অনুরোধ করেন উপদেষ্টারা।

তবে সরকারি বাসভবনে ফিরেও নিজের অবস্থানে অটল ছিলেন ড. ইউনূস। ইতোমধ্যে এনসিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সামাজিক মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন বার্তায় জল্পনাকল্পনার মাত্রা বাড়তে থাকে।

Comments

The Daily Star  | English

Salehuddin urges all to work together to overcome challenges of economy

'We are in the midst of all sorts of challenges,' says the finance adviser

2h ago