ঈদের আগে কি ঢাকার কোরবানির পশুর হাটগুলো প্রস্তুত হবে?

পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র ১২ দিন বাকি থাকলেও রাজধানীতে অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসাতে এখনও দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
দুই সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, এ বছর গাবতলীর স্থায়ী হাটসহ ঢাকায় মোট ২০টি পশুর হাট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আগের বছরগুলোতে এই সময়ের মধ্যেই ইজারা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে যেত। কিন্তু এবার নানা কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৭ জুন ঈদুল আজহা উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে প্রস্তুতির জন্য হাতে খুব বেশি সময় আর নেই।
বিশেষ করে ডিএসসিসি এই দিক দিয়ে আরও পিছিয়ে আছে। কারণ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করানোর দাবিতে চলমান আন্দোলনের কারণে নগর ভবনের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিক্ষোভে নগর ভবন তালাবদ্ধ থাকায় এ বছর ডিএসসিসি এলাকায় পশুর হাটের কোনো ইজারা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সাধারণত সিটি করপোরেশনগুলো হাটের ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করে এবং দরপত্র সন্তোষজনক না হলে পুনরায় আহ্বান করে। তবে চলমান আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসির জন্য সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
ডিএসসিসি কর্মকর্তাদের মতে, এ বছর তাদের আওতাধীন ১১টি নির্ধারিত কোরবানির হাটের মধ্যে আফতাবনগরের হাট সীমানা সংক্রান্ত বিরোধের কারণে বাতিল করা হয়েছে, এবং মেরাদিয়া হাট আইনি জটিলতার কারণে বসানো হচ্ছে না।
বাকি ৯টি হাটের কোনোটিরই দরপত্র এখনও চূড়ান্ত করা যায়নি প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায়।
ডিএসসিসির এস্টেট বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, পাঁচটি হাটের জন্য ইজারা প্রক্রিয়ার ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে, কেবল ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া বাকি। এই হাটগুলো হলো— উত্তর শাহজাহানপুরে মৈত্রী সংঘ ক্লাবের পাশের খোলা জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম তীর, রহমতগঞ্জ ক্লাবের খোলা মাঠ, আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তরের মাঠ এবং হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজির পূর্ব পাশের জায়গা।
আরও তিনটি হাট- দনিয়া কলেজের পূর্বদিক, চান টেক মহিলা মাদ্রাসার কাছে এবং ধোলাই খালে সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠের জন্য দরপত্র খোলা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ দরদাতাদের নির্বাচন করা হয়েছে, তবে এর বাইরে আর কোনো কাজ হয়নি।
শ্যামপুরের কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড এবং কমলাপুরের পূর্বাংশের খোলা জায়গার জন্য আরও দুটি হাটের দরপত্র বাক্স ২২ মে খোলার কথা ছিল কিন্তু বিক্ষোভের কারণে মুলতুবি রয়েছে, যার ফলে এই হাটগুলো স্থাপন করা হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
ডিএসসিসির এস্টেট বিভাগের হাসিবা খান বলেন, 'বিক্ষোভের কারণে নগর ভবনে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমরা ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারিনি। বিক্ষোভ শেষ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করব।'
ডিএসসিসির প্রশাসক শাহজাহান মিয়াও চলমান প্রশাসনিক অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, 'কয়েক দিন ধরে আমরা কোনো সেবা দিতে পারছি না। এমনকি আমাদের ফাইলও দেখতে পারছি না। অবরোধের কারণে, আমরা পশুর হাটের ইজারা চূড়ান্ত করতে বা ওয়ার্ক অর্ডার দিতে পারছি না।'
এদিকে, ডিএনসিসির আংশিকভাবে কাজ এগিয়েছে। তাদের ১১টি হাটের মধ্যে দুটি – মোস্তুল (৩০০ ফিট) এবং তেজগাঁও – এর দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
ছয়টি হাটের জন্য পুনঃদরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এগুলো হলো ভাটারা-সুতিভোলা খালের কাছে, উত্তরা দিয়াবাড়ি, ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা, মোহাম্মদপুর বসিলা, ভাটুরিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসার কাছে, এবং কালশী বালুরমাঠ।
কাঁচকুড়া বাজার এবং খিলক্ষেতের কাছে খোলা জায়গার জন্যও নতুন দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
গাবতলী হাটের জন্যও পুনঃদরপত্র জারি করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে, ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, তারা ২৮ মে এর মধ্যে সমস্ত গরুর বাজারের দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার লক্ষ্য রেখেছেন।
Comments