সরকারি চাকরির নতুন অধ্যাদেশ নিয়ে সচিবরাও অখুশি, বিব্রত

সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫' নিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মচারী সচিবরাও খুশি নন। অধ্যাদেশটিকে কেন্দ্র করে অপেক্ষাকৃত নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে হওয়া অনানুষ্ঠানিক সচিবসভার বৈঠকে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে তুলে ধরেন সচিবরা।

বৈঠকে উপস্থিত অন্তত তিন সচিবের সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন মনোভাবের কথা জানা গেছে।

সচিবালয়ের কর্মচারীরা টানা চারদিন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের পর সরকারের আশ্বাসে আজ বুধবার অর্থাৎ একদিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সচিবসভায় উপস্থিত ছিলেন এমন এক সচিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের কেন প্রয়োজন হলো, সেটা আমরা বুঝতেই পারলাম না। এই আইনটির সঙ্গে প্রায় ১৫ লাখ কর্মচারীর ভালো-মন্দ জড়িত। এমন স্পর্শকাতর একটি আইন সংশোধনে কেন এত তাড়াহুড়া হলো—এই প্রশ্নগুলো বৈঠকে উঠেছে।'

সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে সব সচিবকে ডেকে তাৎক্ষণিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ। মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সচিবদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শুরু হয়। আধা ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত বৈঠকে কয়েকজন সচিব এই সময়ে 'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫' করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

সচিবালয়ের বাইরে অবস্থিত একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রশ্ন তোলেন, এত দ্রুত কেন অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করতে হয়েছে?

এ সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন। এরপর আরও কয়েকজন সচিব একই মত দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের সচিব কমিটি করে কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কমিটি গঠনের কয়েক ঘণ্টা পর মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক শুরু হয়ে ৪টায় শেষ হয়।

বৈঠক শেষে ভূমি সচিব সালেহ আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, সদ্য পাস হওয়া অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন কর্মচারীরা। এই দাবির বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানানো হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বার্তাটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানাবেন। এরপর সরকার থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, তা সবাইকে জানানো হবে।

সচিবদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে সচিবালয়ের কর্মচারী নেতাদের অন্যতম নজরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা স্যারদের সামনে অধ্যাদেশের ত্রুটিগুলো তুলে ধরেছি। স্যাররাও আমাদের যুক্তিগুলোর সঙ্গে দ্বিমত করেননি। আশা করি ভালো ফল আসবে।'

কর্মচারীদের অপর নেতা বাদিউল কবীর বলেন, 'আমরা বুধবারের বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেছি। সরকার দাবি না মানলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।'

বৈঠকে উপস্থিত অপর একটি সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাঁচ সচিব অধ্যাদেশটি বাতিলের বিষয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই কর্মচারীরা একদিনের কর্মসূচি স্থগিত করতে রাজি হন।'

মঙ্গলবার দিনভর সচিবালয়

অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবারসহ টানা চারদিন সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। নিজেদের দপ্তর ছেড়ে শত শত কর্মচারী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

মঙ্গলবার ডিএমপির পক্ষ থেকে সচিবালয়ের ভেতরে কোনো ধরণের কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও তা উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা।

কর্মচারীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। সচিবালয়ের প্রধান গেটে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট ও বিজিবি মোতায়েনের পাশাপাশি অন্যান্য গেটে এপিবিএন, র‍্যাব ও পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।

দুপুর ১টা পর্যন্ত সচিবালয়ের কর্মচারী ও বিভিন্ন বৈঠকে আমন্ত্রিতরা ছাড়া কেউ সচিবালয়ে ঢুকতে পারেননি। সাংবাদিকদের ঢোকার বিষয়ে আগে থেকে নিষেধাজ্ঞার কথা না জানালেও দুপুর ১টার আগে সাংবাদিকরাও সচিবালয়ে ঢুকতে পারেননি।

সচিবালয়ের মূল গেটের বিপরীত পাশে আন্দোলন দমনে ব্যবহার করা হয় এমন দুটি এপিসিও রাখা ছিল।

যেভাবে এই অধ্যাদেশ

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলোচ্য অধ্যাদেশটি প্রণয়নে প্রথমে স্বরাষ্ট্রসচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন। কিন্তু জনপ্রশাসন সচিব সরকারি চাকরি আইনে এমন সংশোধন করতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন কট্টরপন্থী উপদেষ্টা এমন অধ্যাদেশ প্রণয়নের চাপ দিলে গত এপ্রিলে আলোচ্য অধ্যাদেশটির খসড়া হয়।

তখন থেকেই কর্মচারী নেতারা এমন উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে কথা বলেছিল।

এ ছাড়া, গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে আন্দোলনে নামার হুশিয়ারিও দিয়েছিলেন তারা।

তারপরও গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

এরপর থেকে এই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আন্দোলনের মধ্যেই গত রোববার রাতে অধ্যাদেশটি জারি ও কার্যকর করে সরকার।

Comments

The Daily Star  | English

Japan to recruit 1 lakh workers over 5 years

The chief adviser witnessed the signing of two key MoUs

12m ago