হাসপাতালগুলোতে আবারও শুরু হচ্ছে করোনা পরীক্ষা
বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগামী ১০ দিনের মধ্যে প্রধান হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষার সুবিধা বাড়াতে কাজ করছে।
বর্তমানে, খুব কম সরকারি হাসপাতালই করোনা পরীক্ষা করে।
গত মাসে কোভিড সংক্রমণের হার ২৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং দীর্ঘ বিরতির পর গত ৫ জুন করোনার কারণে একজনের মৃত্যুর সরকার এই পরীক্ষা সুবিধা বাড়াতে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) কোভিড-১৯ নজরদারি ডেটা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মে মাসে সংক্রমণের হার তীব্রভাবে বেড়েছে। মে মাসে পরীক্ষা করা ১,৪০৯টি নমুনার মধ্যে ৯.৫১ শতাংশ কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে, যা জানুয়ারি ২০২৩ এর পর সর্বোচ্চ।
আইসিডিডিআর,বি-ও জানিয়েছে, গত মাসে কোভিড রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে তাদের বিজ্ঞানীরা জোর দিয়ে বলেছেন যে, বর্তমানে জনসাধারণের বড় ধরনের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই এবং কোভিড-১৯ এর সাধারণ সতর্কতাগুলো মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
আইসিডিডিআর,বি এবং আইইডিসিআরের যৌথভাবে পরিচালিত হাসপাতাল-ভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা নজরদারি গবেষণায় দেখা গেছে এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো দুটি নতুন ওমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি শনাক্ত হয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত আইসিডিডিআর,বি-র এক প্রতিবেদন অনুসারে, গবেষণায় অংশ নেওয়া হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষা হওয়া রোগীদের প্রায় ৭ শতাংশের মধ্যে নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস মিলেছে। বছরের শুরুর দিকে যখন সংক্রমণ প্রায় ছিলই না, তার তুলনায় এই হার অনেক বেশি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, 'যেসব হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, করোনা পরীক্ষা পুনরায় চালু করার প্রস্তুতি নিতে তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় কোম্পানিগুলো থেকে করোনা পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে টেস্ট কিট আনতে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোকে (সিএমএসডি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
'আমরা আশা করছি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা আবার চালু করা যাবে—তবে তা সীমিত পরিসরে হবে,' বলেন অধ্যাপক হালিমুর।
প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু আরটি-পিসিআর সুবিধাসম্পন্ন মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা শুরু হবে। যেসব রোগীর কোভিড-১৯-এর উপসর্গ থাকবে বা যাদের ডাক্তাররা পরীক্ষার পরামর্শ দেবেন, শুধুমাত্র তারাই পরীক্ষা করাতে পারবেন।
'তবে, সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলে এর পরিধি আরও বাড়ানো হবে,' বলেন তিনি।
এদিকে, গত ৪ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে যেন সব স্থল, নদী ও বিমানবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নজরদারি ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো, করোনাভাইরাসের নতুন উপ-ধরন – বিশেষ করে ওমিক্রন এলএফ.৭ (LF.7), এক্সএফজি (XFG), জেএন.১ (JN.1), এবং এনবি.১.৮.১ (NB.1.8.1) – যেগুলো ভারতসহ বেশ কিছু প্রতিবেশী দেশে শনাক্ত হয়েছে, সেগুলোর সংক্রমণ রোধ করা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে, সব প্রবেশপথে থার্মাল স্ক্যানার বা ডিজিটাল হ্যান্ডহেল্ড থার্মোমিটার ব্যবহার করে শরীরের তাপমাত্রা মাপতে হবে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক, গ্লাভস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) মজুত নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও, জনসচেতনতা বাড়াতে এবং ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সংক্রমণ প্রতিরোধের নির্দেশিকা প্রচার করতে হবে।
এছাড়াও খুব প্রয়োজন না হলে ভারতসহ যেসব প্রতিবেশী দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়েছে, সেখানে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
গত ৬ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশিকা জারি করেছে। এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষও যাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় এবং এর দশ দিন পর প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এরপর থেকে দেশে ২০ লাখ ৫১ হাজারের বেশি আক্রান্ত ও ২৯,৪৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে ২০২১ সাল ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী।
Comments