সোনাহাট সেতু: মেয়াদোত্তীর্ণ কাঠামোয় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল, নিয়মিত দুর্ভোগ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার নদের ওপর ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সোনাহাট রেলসেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত ভারী যানবাহন চলাচল করে। লোহার এই সেতুটিতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
গতকাল রোববার সকালেও লোহার সেতুর একটি পাটাতন ভেঙে পড়ে, ফলে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে প্রায় ২৫ ঘণ্টা ধরে সেতুতে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। আজ সকাল ৯টার দিকে পাটাতনটি মেরামতের পর পুনরায় সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়।
সোনাহাট স্থলবন্দরের সঙ্গে দেশের একমাত্র সংযোগ সড়ক সোনাহাট সেতু হওয়ায় এর বিকল্প রাস্তাও নেই।
সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন আমদানি করা পণ্যবাহী প্রায় ২০০-২৫০ ট্রাকসহ এক হাজারের বেশি ভারী ও হালকা যানবাহন চলাচল করে। গেল ছয় মাসেই এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর পাটাতন ভেঙে ট্রাক আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১৭ বার। প্রতিবারই যান চলাচল বন্ধ থেকেছে ৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক সুলতান আহমেদ জানান, সেতুটির ওপর এক সঙ্গে দুই পাশ থেকে গাড়ি চলতে পারে না। এক পাশ দিয়ে গাড়ি চললে অন্য পাশের যানবাহন ও পথচারীদের ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি, একটি ট্রাক আটকে গেলে পুরো এলাকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গসোনাহাট, বলদিয়া, চর ভূরুঙ্গামারী, আন্ধারীঝাড় ও তিলাই ইউনিয়ন এবং নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা, কেদার, বল্লভেরখাস ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের মানুষ এই সেতু ব্যবহার করে উপজেলা ও জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। সেতুতে যানবাহন আটকে গেলে রোগী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।
সেতুর আয়ুষ্কাল শেষ
সোনাহাট এলাকায় অবস্থিত এই ৩৬৬ মিটার দীর্ঘ রেলসেতুটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেতুটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরে তা মেরামত করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। তবে ২০০১ সালেই এর নির্ধারিত আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যায়। এরপরও বছরের পর বছর ধরে সেটি দিয়ে যান চলাচল অব্যাহত রয়েছে।
২০১২ সালে সোনাহাট স্থলবন্দর চালু হওয়ার পর থেকে যানবাহনের সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যায়। ফলে সেতুটিতে অতিরিক্ত চাপ পড়তে থাকে, যা নিয়মিত ক্ষয়ক্ষতির অন্যতম কারণ।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, '১৯৪৭ সালের আগে সোনাহাট এলাকায় ব্রিটিশরা এই রেলসেতুটি নির্মাণ করে, যেখানে ট্রেন চলত। পরে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে এটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। স্থানীয়দের ব্যবহারের জন্য সেতুটি একটি ফুটওভার ব্রিজ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এর ওপর ডেক বসিয়ে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়। তবে ২০০১ সালেই এর আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে।'
সোনাহাট স্থলবন্দর সি অ্যান্ড এফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আকমল হোসেন বলেন, 'অনেক চালক ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হতে চান না। এতে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনে সমস্যায় পড়ছি আমরা। নতুন সেতুর কাজ বিলম্বিত হওয়ায় ব্যবসা ও সামগ্রিক অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।'
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানান, 'দুধকুমার নদের ওপর ৬৪৫ মিটার দীর্ঘ একটি কংক্রিট সেতু নির্মাণের কাজ চলছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি টাকা। আগামী বছর (২০২৬) জুনের মধ্যেই সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।'
তিনি আরও জানান, 'বর্তমানে লোহার সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত পাটাতনগুলো আমরা নিয়মিত মেরামত করে চলাচল চালু রাখছি।'
Comments