‘ওয়াসিমকে হারিয়েছি এক বছর, অথচ বিচার আগাচ্ছে না’

শহীদ ওয়াসিম আকরাম। ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে প্রথম শহীদ ওয়াসিম আকরামের শাহাদাতবার্ষিকী আজ। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কক্সবাজারের পেকুয়ার মেহেরনামা বাজারপাড়া এলাকার শফিউল আলম ও জ্যোৎস্না বেগমের সন্তান ওয়াসিম। দুই ভাই, তিন বোনের তিনি ছিলেন তৃতীয়। বড় ভাই প্রবাসজীবন শেষে এখন দেশে, ছোট দুই বোন অধ্যয়নরত।

ওয়াসিম আকরাম ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী। তার শাহাদাতের তিন মাসের মাথায় প্রকাশিত সমাজবিজ্ঞান (অনার্স) তৃতীয় বর্ষের ফলাফলে দেখা যায়, তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার স্বপ্ন ছিল কানাডা গিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার।

ওয়াসিমের বাবা শফিউল আলম বলেন, 'আমারও ইচ্ছা ছিল ওকে বিদেশে পাঠাব। ওয়াসিমের স্বপ্ন ছিল কানাডায় গিয়ে পড়ালেখার। তা আর হলো না।'

ছেলের মৃত্যুর বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'শুধু আমার ছেলে নয়, যেসব মা-বাবা তাদের সন্তান হারিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, সবার পক্ষ থেকে আমি বিচার দাবি করছি। আমাদের চাওয়া–পাওয়ার কিছু নেই। শুধু চাই, প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাক।'

ওয়াসিমের কথা মনে করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও তার সহযোদ্ধা আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, 'ওইদিন (২০২৪ সালের ১৬ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রামের ষোলশহর রেলস্টেশনের পাশে মিছিলের পরিকল্পনা ছিল আমাদের। ওয়াসিম জানায়, ছাত্রলীগের কর্মীরা এলাকায় অবস্থান নিয়েছে, তাই মিছিলের স্থান পরিবর্তন করা দরকার। পরে আমরা মুরাদপুর মোড়ে অবস্থান নিই। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের সশস্ত্র অবস্থানেও আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলি।'

নোমান জানান, একপর্যায়ে ত্রিমুখী হামলা শুরু করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে উঠলে আন্দোলনকারীরা তিন দলে বিভক্ত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সামনে আন্দোলনরত অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন ওয়াসিম আকরাম।

'তাকে দ্রুত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন।'

নোমান আরও বলেন, 'শিক্ষার্থীদের এই ক্ষোভ নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই দিন সন্ধ্যায় বহদ্দারহাট মোড়ের পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে মুরাদপুর ও ষোলশহর এলাকায়।'

'দিন গড়িয়ে বছর হয়ে গেল। ওয়াসিমকে হারিয়েছি এক বছর হয়ে গেল। অথচ হত্যাকারীদের বিচার আগাচ্ছে না। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
child victims of July uprising Bangladesh

Child victims of July uprising: Of abandoned toys and unlived tomorrows

They were readers of fairy tales, keepers of marbles, chasers of kites across twilight skies. Some still asked to sleep in their mother’s arms. Others, on the cusp of adolescence, had just begun to dream in the language of futures -- of stethoscopes, classrooms, galaxies. They were children, dreamers of careers, cartoons, and cricket.

11h ago