ঘরের কাজেই আটকে থাকছেন নারীরা, চাকরি করা হচ্ছে না

রয়টার্স ফাইল ছবি

শিক্ষিত হয়েও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের বাইরে থেকে যাচ্ছেন বাংলাদেশের নারীদের বড় একটি অংশ। পরিবারের সেবাযত্নের দায়িত্ব বর্তানোয় বাইরে কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও সাজেদা ফাউন্ডেশনের এক নতুন গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস-এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে 'কেয়ার রেসপনসিবিলিটিস অ্যান্ড উইমেনস ওয়ার্ক ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৮১ শতাংশ নারী কর্মসংস্থানে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে গৃহস্থালির কাজকে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, ৪৮ শতাংশ পুরুষ শিক্ষার অভাবকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

গবেষণায় দেখা যায়, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘরের কাজ করেন, যা তাদের সমবয়সী পুরুষদের চেয়ে চার গুণ বেশি। এমনকি ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নারীরাও পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ সময় গৃহস্থালির কাজে ব্যয় করেন।

২০১৬ সালের শ্রমশক্তি জরিপের (এলএফএস) তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে নারীশ্রমিকের অংশগ্রহণ বাড়লেও তা মূলত গৃহভিত্তিক কাজের মাধ্যমে বাড়ছে, অফিস-কারখানা বা কৃষিকাজের মতো প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান দিয়ে নয়। কর্মজীবী নারীদের একটি বড় অংশ শিশু, বয়স্ক বা অসুস্থ সদস্যদের যত্ন এবং সংসারের কাজ সামলে আয় করছেন।

এখনো ৬৬ শতাংশ নারী শ্রমশক্তির বাইরে রয়েছেন, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ২০ শতাংশ।

দেখা যায়, গ্রামীণ নারীদের ঘরের বাইরের কৃষিকাজে অংশগ্রহণ ২০১০ সালের ৬৪ শতাংশ থেকে কমে ২০১৬ সালে ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তারা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজের দিকে ঝুঁকেছেন। অন্যদিকে, শহুরে নারীদেরও ঘরের বাইরের কাজে অংশগ্রহণ কমেছে।

গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, বাংলাদেশে যৌথ পরিবারের ইতিবাচক প্রভাব। যৌথ পরিবারে থাকলে অন্য সদস্যরা সন্তানদের দেখভাল ও ঘরের কাজে সহায়তা করায় নারীদের ঘরের বাইরে কাজ করার সুযোগ বাড়ে, যা প্রতিবেশী দেশ ভারতের চিত্রের বিপরীত।

উচ্চশিক্ষার সঙ্গে নারীদের আনুষ্ঠানিক খাতে যুক্ত হওয়ার সম্পর্ক উঠে আসে গবেষণায়। এটা নারীদের মধ্যে অবৈতনিক ঘরের কাজে ব্যয় হওয়া সময় কমায়। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা এক্ষেত্রে খুব সামান্যই প্রভাব ফেলে।

সেমিনারে বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, পাঁচ বছরের কম বয়সী সন্তান থাকলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কমে যায়। তাই দিবাযত্ন কেন্দ্রের সহজলভ্যতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি উল্লেখ করেন, 'তৈরি পোশাক কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোও অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত সুফল দিতে ব্যর্থ হয়, কারণ মায়েরা সন্তানদের সেখানে নিয়ে যেতে পারেন না। কারখানাকেন্দ্রিক ব্যবস্থার চেয়ে বাড়ির কাছাকাছি অবস্থিত ডে-কেয়ার সেন্টার কর্মজীবী মায়েদের জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক।'

এ ছাড়া, শহরের অনিরাপদ গণপরিবহন ব্যবস্থাকেও তিনি নারীদের চাকরির ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।

ইউএন উইমেনের উপপ্রতিনিধি নবনিতা সিনহা বলেন, সেবাযত্নের মতো মৌলিক পরিষেবা খাতে বিনিয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়। একটি গবেষণার উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, এর মাধ্যমে নারীদের কর্মসংস্থান ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Groundwater crisis deepens in coastal Chattogram

Tube wells run dry as salinity and iron contamination rise far above safe limits, leaving residents struggling for drinkable water

2h ago