রাজনীতি

নোয়াখালীতে বিএনপির সমাবেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার অভিযোগ, আহত ৩০

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে বিএনপির সমাবেশে হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দলের জ্যেষ্ঠ ৫ নেতাসহ কমপক্ষে ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে বিএনপির সমাবেশে হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দলের জ্যেষ্ঠ ৫ নেতাসহ কমপক্ষে ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

আজ শুক্রবার দুপুরে চাটখিল কামিল মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

বিএনপি সূত্র জানায়, নিত্যপণ্য, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, লোডশেডিং এবং ভোলায় ছাত্রদল সভাপতি নূরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহিম হত্যার প্রতিবাদে চাটখিল উপজেলা ও পৌর বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এসময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় এবং সমাবেশস্থল ভাঙচুর করে।

এই হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে চাটখিল বাজারের পূর্ব পাশে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। পরে তাদের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত চাটখিল কামিল মাদ্রাসা ও চাটখিল-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্ব বাজারে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়।

বিএনপির দাবি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় তাদের অন্তত ৩০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পৌরসভার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

চাটখিল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু হানিফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিক্ষোভ সমাবেশে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন ও মামুনুর রশিদ মামুনসহ উপজেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন বলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে চাটখিল কামিল মাদ্রাসা মাঠে মঞ্চ তৈরি করা হয়। জুমার নামাজের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা ঝটিকা মিছিল সহকারে এসে মঞ্চ ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ পাশে দাঁড়িয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।'

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শাহজাহান রানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে হামলা চালায় এবং মঞ্চ ভাঙচুর করে। আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশকে বানচাল করতে তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মোটরসাইকেল মহড়া দেয়।'

'আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আমাকে গুলি করলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়। পরে তারা আগ্নেয়াস্ত্রের বাট দিয়ে আমাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে', বলেন তিনি।

শাহজাহান রানা বর্তমানে জেলা সদরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

চাটখিল পৌর বিএনপির সদস্যসচিব আহছানুল হক মাসুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার দলীয় ক্যাডারদের তাণ্ডবে বিক্ষোভ সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বিএনপি এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। ওই মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হেলমেট ও মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবু হানিফ, উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহজাহান রানা, চাটখিল পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তফা কামাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক ওমর ফারুক এবং জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা আহত হন।'

পরে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মাহাবুব উদ্দিন খোকন নেতা-কর্মীদের নিয়ে চাটখিল পৌর সদর থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে হালিমা দিঘির পাড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

মাহাবুব উদ্দিন খোকন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমারে পূর্বনির্ধারিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই সভামঞ্চ ও ব্যানার-ফেস্টুন ভাঙচুর করেছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। তাদের হামলায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ ৫ নেতাসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন।'

পুলিশের উপস্থিতিতে এ হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

তবে বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে চাটখিল উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে মাহাবুব উদ্দিন খোকন ও মামুনুর রশিদ মামুন গ্রুপের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এ সংঘর্ষ হয়েছে। ওই হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগ সম্পৃক্ত নয়।'

চাটখিল পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিএনপির সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই মাহাবুব উদ্দিন খোকন ও তার প্রতিদ্বন্দ্বি মামুনুর রশিদের একটি ছবিকে কেন্দ্র করে তাদের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সংঘর্ষ ও আহত হওয়ার ঘটনা স্থানীয় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ।'

বিএনপির সমাবেশে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের দৃশ্যধারণকালে হামলাকারীরা স্থানীয় দৈনিক বঙ্গবাজার'র সম্পাদক নুর আলমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসব বিষয়ে চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামলা কিংবা ভাঙচুরের কোনো ঘটনা দেখিনি। শান্তিপূর্ণভাবেই বিএনপি তাদের কর্মসূচি পালন করেছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।'

এদিকে, বিকেলে সমাবেশে যোগ দিতে আসা বিএনপির একদল নেতা-কর্মী উপজেলার নোয়াখলা ইউনিয়নের সিংবাহুড়া আজিম সাহেবের পোলের কাছে ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান দিদারের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, রেজওয়ানুল পাটোয়ারী ও মজিদের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছেন আতাউর রহমান দিদার।

সেসময় বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় বলেও জানান তিনি।

আহত আওয়ামী লীগ নেতাকে চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

National polls: EC orders withdrawal of two police commissioners

The Election Commission (EC) has ordered to withdraw commissioners of two metropolitan units of police, one deputy commissioner, and five superintendents of police.

1h ago