মানুষের জন্য আমাদের রিজার্ভ ব্যবহার করে চলতে হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধ ও করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। তার ধাক্কাটা আমাদের দেশে এসেও পড়েছে, মূল্যস্ফীতির কারণে সব দেশ হিমশিম খাচ্ছে। প্রত্যেককে রিজার্ভ ব্যবহার করেই চলতে হচ্ছে। আমাদেরও করতে হচ্ছে এবং সেটা মানুষের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: সংগৃহীত

সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধ ও করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। তার ধাক্কাটা আমাদের দেশে এসেও পড়েছে, মূল্যস্ফীতির কারণে সব দেশ হিমশিম খাচ্ছে। প্রত্যেককে রিজার্ভ ব্যবহার করেই চলতে হচ্ছে। আমাদেরও করতে হচ্ছে এবং সেটা মানুষের জন্য।

বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এ সময় যুব সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

আজ শনিবার সকালে জাতীয় সমবায় দিবস ২০২২ উদযাপন এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার ২০২১ বিতরণ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ করাই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের উন্নয়ন করতে গেলে আমি মনে করি সমবায়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সেই সঙ্গে প্রত্যেক মানুষের একটা নিজস্ব চিন্তা থাকতে হবে নিজের জীবন-জীবিকা উন্নত করার। সে কাজগুলো করার সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিতে চাই। আমরা বেসরকারি খাতে সব উন্মুক্ত করে দিয়েছি যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে।

তিনি বলেন, আমাদের কৃষি উৎপাদন বা মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য সমবায় একান্তভাবে অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। কারণ এত ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশে সমবায় অনেক সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। সেদিকে লক্ষ রেখেই সমবায়কে আরও শক্তিশালী করতে হবে। দুধ-আমিষের ঘাটতি যাতে পূরণ হয়, তারও ব্যবস্থা কিন্তু আমরা নিতে পেরেছি।

সাধারণ মানুষের খাদ্য কেনা বা আমাদের চাষ যাতে ঠিকমতো হয়। সার-তেল-ভোজ্যতেল কিনতে হচ্ছে উচ্চ মূল্যে। পরিবহন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। সে দিকে লক্ষ রেখে আমাদের সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে। আমি আবারও বলবো, আমাদের যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। যদি যুব সমাজ এগিয়ে আসে এবং সমবায়ের মাধ্যমে কার্যক্রম করতে পারে সমস্ত গ্রামের মানুষকে এক করে, তাহলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান যুগে সারা বিশ্বে খাদ্যাভাব, জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। উন্নত দেশ আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপের কথাই বলছি। সে ক্ষেত্রে আমাদের উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে এবং সঞ্চয় করতে হবে। যাতে করে এই অভিঘাত থেকে আমাদের দেশের মানুষ রক্ষা পায়, সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি প্রতি ঘরে ঘরে। যদিও এখন এই ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা নিজস্ব গ্যাস যেটুকু ব্যবহার করতে পারছি, অতিরিক্ত গ্যাস যেটা আমরা ক্রয় করতাম, অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায়... আমি আশা করি এ অবস্থা থাকবে না। আমরা সোলার প্যানেল দিচ্ছি। তা ছাড়া আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। নেপাল-ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ ক্রয় করার পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। যদিও সময় সাপেক্ষ, তবে এ অবস্থার আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারব। আমাদের দেশের সবাইকে একটু সঞ্চয়ের দিকে নজর দিতে হবে। কারো এতটুকু জমি যেন পড়ে না থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করছি।

সমবায় কার্যক্রমে নারীদের সম্পৃক্ততা আরও বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলাদের হাতে টাকা-পয়সা গেলে সেটার যথাযথ ব্যবহার হয়, অপচয় হয় না। এটাও বাস্তব। তার সুফলটা পরিবারও পায়, আর দেশবাসীও পাবে। আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ ব্রডব্যান্ড সব ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন-১ উৎক্ষেপণ করেছি। তার ফলে এখন অনলাইনে ডিজিটাল যোগাযোগের সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে, কৃষক মাটি পরীক্ষা করা বা পাতা হলুদ হয়ে গেলে কী সার ব্যবহার করতে হবে, মোবাইল ফোনে ছবি তুলে কৃষি তথ্যকেন্দ্র করা হয়েছে, সেখান থেকে জানতে পারে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার ব্যবস্থাটা আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি। এটা আমরা শুধু শহরের জন্য করিনি, গ্রামের মানুষের জন্যও করেছি। আমাদের সমস্ত উন্নয়নের পরিকল্পনা তৃণমূল মানুষকে কেন্দ্র করে। সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের যুব সমাজ শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরাই কাজ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব আর সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সাবলম্বিতা অর্জন করতে পারবো। এটা আমি বিশ্বাস করি। আমি চাই, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন কোনোমতেই ব্যাহত না হয়। আমরা যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, কোভিড, যুদ্ধ আর স্যাংশনের কারণে কিছুটা আমাদের থমকে দাঁড়াতে হয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু এ অবস্থা অতিক্রম করে আমরা এগিয়ে যাব। এটাই আমাদের লক্ষ্য, জাতির পিতার সোনার বাংলা আমরা কায়েম করবো।

Comments

The Daily Star  | English
No respite from heat wave for five days: BMD

Heat takes a toll on expecting mothers

The ongoing heatwave has exacerbated the challenges faced by everyone in the country, but the situation has become particularly difficult for expecting mothers.

42m ago