যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপ হয়। ছবি: সংগৃহীত

সরকার হটানোর আন্দোলন, নির্বাচন ও রাষ্ট্র রূপান্তরে একসঙ্গে কাজ করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে সাত রাজনৈতিক দলের জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপি।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এ কথা জানান।

বিএনপির সঙ্গে ঐক্যকে 'ঐতিহাসিক ঘটনা' আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে ভোট চুরি করে যারা অনৈতিকভাবে, অবৈধভাবে ক্ষমতায় আছে তাদেরকে সরানোর জন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ঐক্য স্বৈরাচারের পতন ঘটানোর পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামত করবে, সংস্কার করবে, সংবিধান সংস্কার করবে এবং আন্দোলন ও নির্বাচন দুটোই একসঙ্গে করবে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলেন, 'এই সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে একটা গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করতে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করব-এ ব্যাপারে আজকে বৈঠকে আমরা একমত হয়েছি। ইতোমধ্যে এই কাজ আমরা শুরু করেছি।'

'আমরা রাষ্ট্রের পরিবর্তনের যে কথা বলেছি সেই পরিবর্তনগুলো আমরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করে একমত হতে পারব বলে আশা করি। আমরা এই বিষয়টাকে দ্রুত করার জন্যে পরবর্তীতে আরও কয়েক দফা আলোচনায় বসব।'

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি যে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে যুগপৎভাবে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলর জন্য এখন থেকেই, আজকে থেকেই, আমরা আন্দোলনে আছি সেই আন্দোলনে থাকব।'

তিনি জানান, বিএনপির ভিশন-২০২০ তে বর্ণিত বিভিন্ন প্রস্তাবনার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রস্তাবনার মিল রয়েছে।

'লিয়াজোঁ কমিটি গঠন হবে'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনারা জানেন যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতনের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে প্রচণ্ড রকমের আগ্রহ-উদ্যম সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এই বিষয়কে তরান্বিত করার জন্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে আমরা দ্রুত একটা লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করব। যার মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য, আমাদের দফাগুলো, আমাদের কর্মসূচি, রূপরেখা সবগুলো থাকবে। এই ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।'

'আমরা বিশ্বাস করি যুগপৎভাবে আমরা আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে পারব এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা এদেরকে (সরকার) পরাজিত করতে সক্ষম হব।'

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, 'এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা কেউ যাব না। আমাদের দাবি হচ্ছে এই সরকারের পদত্যাগ, সংবিধান সংস্কারের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা গুণগত পরিবর্তন।'

আজ মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে দুই ঘণ্টার বেশি সময় আলোচনা হয়। বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন জেএসডির আ স ম আবদুর রব, শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ফারুক হাসান, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, হাবিবুর রহমান রিজু এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ইমরান ইমন ও সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন প্রমুখ।

বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বিদেশে ও সদস্য সচিব নুরুল হক নূর একটি দূতাবাসে সাক্ষাৎকারে থাকায় তারা বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি বলে জানান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।

এ বছরের ৮ আগস্ট জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন-এই ৭টি দল নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবি করে আসছে।

সরকার পতনের আন্দোলনের দাবিনামা চূড়ান্ত করতে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সংলাপ করল বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের এটি প্রথম বৈঠক।

এর আগ চলতি বছরের মে-জুন মাসে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জনসংহতি আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলাদাভাবে সংলাপ করেছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago