রাজনীতি

ইতিহাস বলে অগ্নিসন্ত্রাস পুরোটাই আওয়ামী লীগের: ফখরুল

অগ্নিসন্ত্রাস পুরোটাই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

অগ্নিসন্ত্রাস পুরোটাই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবৈধ সরকারের মন্ত্রীরা দুটি কথা খুব জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করছেন। একটি হলো, 'আর অগ্নিসন্ত্রাস হতে দেওয়া হবে না।' ইতিহাস বলে, অগ্নিসন্ত্রাস পুরোটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের। তারা ২০০১-০৬ এর দিকে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলন শুরু করে, তখন ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছে। সে সময় যত রকম জ্বালাও-পোড়াও আছে; ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে আগুন দিয়েছে, শেরাটনের সামনে একটি বাসে গান পাউডার দিয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছে। একটা না, অসংখ্য ঘটনা এ রকম। একই ধারাবাহিকতা '১৩-১৪-১৫তে...একই ঘটনা ঘটেছে। তাদের উদ্দেশ্য অগ্নিসন্ত্রাসের কথা বলে '১৩-১৫ সালে মানুষকে, আন্তর্জাতিক মহলকে বিভ্রান্ত করেছিল, এখন আবারও যখন জনগণের আন্দোলন শুরু হয়েছে তখন তারা একই কাজ ‍শুরু করেছে। 

আরেকটি বিষয় হলো জঙ্গি। আমরা তো জঙ্গি দেখি না। এটাকে ইস্যু করার জন্য এর মধ্যে তারা বেশ কিছু গ্রেপ্তারও করেছে। চিকিৎসক আছেন বেশ কয়েকজন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে তারা অভিযান শুরু করেছে। আমরা বা জনগণ জানে না সত্য ঘটনা কী। আমাদের মধ্যে যে সন্দেহের উদ্রেগ হয়, এটাকে ইস্যু করে তারা আবারও সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন শুরু করবে। গণতন্ত্রের জন্য যারা আন্দোলন করছে তাদের ওপর আক্রমণ করবে কি না, বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, বিএনপি আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশ বিশেষ করে ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা দায়িত্বহীন, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে গণসমাবেশ নস্যাৎ করার হীন চক্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শত প্রভোকেশনের মুখেও আমরা কোথাও কোনো সহিংসতা বা এটাকে প্রতিরোধ-পাল্টা প্রতিরোধ—এ ধরনের আমরা কিছুই করিনি। মার খেয়ে, খোলা আকাশের নিচে থেকে, নদী সাঁতরে, পায়ে হেঁটে জনগণ সমাবেশ সফল করেছে। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই সমাবেশগুলো নস্যাৎ করার জন্য, বন্ধ করার জন্য আমার মনে হয়েছে বালখিল্য আচরণ করছে।

ফখরুল বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ থেকে প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে এভাবে চক্রান্ত করে এটাকে বন্ধ করা যাবে না।

আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে আমলা ও গোয়েন্দা নির্ভর দলে পরিণত হয়েছে। যে কারণে এত বড় বড় মারাত্মক রকম ভুল সিদ্ধান্ত তারা নিচ্ছে। জনগণ চায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সেটাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেছে। জনগণের অংশগ্রহণ ঠেকানোর জন্য সরকার যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করছে তার কোনোটাই কাজে আসছে না, ভবিষ্যতেও আসবে না।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু কর্মকর্তা সরকারের প্রত্যেক্ষ নির্দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন। কোথাও নিজেরাই গুলি করে বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে, আবার কোথাও গ্রেপ্তার করে পুরাতন মামলায় জেলে পাঠাচ্ছে। কোথাও কোথাও নিজেরাই বোমা পেতে রেখে বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের নামে বিষ্ফোরক আইনে মামলা দিচ্ছে। যা ইতোমধ্যে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের বক্তব্যে উঠে এসেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল রাতে আমি জানতে পারি হবিগঞ্জে লাখাইতে আমাদের ২০০ নেতা-কর্মী পার্টি অফিসে আটক হয়ে আছেন। পুলিশ গুলি করছে, অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছে। আমি খোঁজ নিয়ে জানলাম, সিলেটের সমাবেশকে কেন্দ্র করে তারা প্রচারণা চালাচ্ছিল। ওই সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগ তাদের আক্রমণ করে। সে সময় পুলিশের একটি দল এসে তাদের ওপর গুলি ছোড়ে। এটা অনভিপ্রেত।

তিনি বলেন, আমি আমার কর্মসূচির জন্য গণতান্ত্রিকভাবে লিফলেট বিলি করতে পারবো না! এরা আবার আমাদের গণতন্ত্রের ছবক দেয়। উনারা নাকি গণতান্ত্রিক দল, গণতান্ত্রিকভাবে তারা চলে এসেছেন। এখন তারা সাংবাদিকদের হুমকি দিতে শুরু করেছেন। তাদের মন্ত্রীরা বলছেন, আপনারা বিরোধীদলের প্রচার বেশি করছেন। সরকারি দলের প্রচার করছেন না। যে সরকারি দল তাদের কাউন্সিলের মধ্যে মারামারি করে মানুষ হত্যা করে। তারা নিজেরা নিজেদের হত্যা করে এরা কীভাবে গণতান্ত্রিক দল হতে পারে। গত ১৫ বছরে এ দেশের তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে এবং একদলীয় রাষ্ট্র চালু করেছে। 

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের গণসমাবেশে অংশ নিতে নোয়াখালী, ফেনী, মীরসরাই, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি থেকে আসা প্রায় ২ শতাধিক নেতা-কর্মীদেরকে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আহত করেছেন। ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহের গণসমাবেশের আগের রাতে মোশারফ হোসেনের বাসভবনে বোমা হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। পাগলা থেকে আসা নেতা জসিম উদ্দিনসহ ১০ জনকে আহত করে। সারা রাত তারা ময়মনসিংহে ভয় দেখিয়েছে। ২২ অক্টোবর খুলনার গণসমাবেশে অংশ নিতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীদের আওয়ামী সন্ত্রাসী ও সরকারি বাহিনী আহত এবং গ্রেপ্তার করেছে। খুলনা মহানগরে আহত প্রায় ৩০০; খুলনা জেলায় আহত প্রায় শতাধিক, গ্রেপ্তার অর্ধশতাধিক; যশোর জেলায় আহত শতাধিক ও গ্রেপ্তার শতাধিক; চুয়াডাঙ্গা জেলায় আহত ১৪; কুষ্টিয়া জেলায় আহত ১৮ জন; বাগেরহাট জেলায় আহত ২ শতাধিক ও গ্রেপ্তার শতাধিক; নড়াইল আহত ২৬ জন; ঝিনাইদহে আহত শতাধিক; মাগুরায় প্রায় ২০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলায় আহত ১০ জন ও গ্রেপ্তার ২০ জন; এ ছাড়া, বাগেরহাট জেলা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম ভূইয়া তনুকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে। ৫ নভেম্বর বরিশাল বিভাগে গণসমাবেশে যাওয়ার পথে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের গাড়ি বহরে হামলা; স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েরের গাড়ি বহরে হামলা, ভোলা থেকে আসা লঞ্চে হামলা, পটুয়াখালী পার্টি অফিস ও কলাপাড়া পার্টি অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গৌড়নদী, আগৈলঝরায় বিএনপি নেতাদের মালিকানাধীন ২৮টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা করে ২ শতাধিক নেতা-কর্মীদের আহত করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীকে। ১২ নভেম্বর ফরিদপুর বিভাগে গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ২০ নেতা-কর্মীকে আহত এবং ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বলেন ফখরুল।

তিনি আরও বলেন, ১৯ নভেম্বর সিলেট বিভাগের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার ও হামলা অব্যাহত রেখেছে।

গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাপানের রাষ্ট্রদূত চরম সত্যি কথা বলেছেন। ভিয়েনা কনভেনশন এখন দেখেন, যখন আপনারা মানুষ হত্যা করেন, গুম করে দেন, দিনের ভোট রাতে করেন, ভোট না করে নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন দেন—তখন কোথায় থাকে! আমাদের ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির চোখ খুলেছে। তারা এখন দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশে কী চলছে। বাংলাদেশ তো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়! গোটা বিশ্বের অংশ। এখন আর সেই দিন নেই যা খুশি করে যেতে পারবে, কেউ কিছু বলবে না। অংশীজনরা তো তাদের কথা বলবেই।

আন্তর্জাতিক মহল যদি আমাদের কথা শোনে তাহলে বুঝতে হবে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে গেছি, আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা এমন কোনো কর্মসূচি নেব না যাতে জনগণের কষ্ট হবে। তারা বিপদগ্রস্ত হবে। আমরা আন্দোলন করছি শান্তিপূর্ণভাবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

Comments