সরকারে আসার পর গুলি দিয়ে অত্যাচারের জবাব দিতে পারতাম: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না উল্লেখ করে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১-এ যে অত্যাচার আমাদের ওপর করেছে, আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর গুলি দিয়ে সেই অত্যাচারের জবাব কিন্তু দিতে পারতাম। সে ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমরা তো সেটা করিনি! আমরা তো কখনো এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করতে যাইনি! মারতেও যাইনি।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথ সভায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এদিন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং ২ সিটির মেয়রদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তৃণমূলের জনগণকে ক্ষমতা দেওয়ার জন্য অর্থাৎ একটি রাষ্ট্র পরিচালনায় গ্রামের মানুষের যেন অধিকার থাকে—সেভাবে এই ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি এবং পাকিস্তানি শক্তি; ব্রিটিশ-পাকিস্তানি মিলিটারি ডিকটেটরদের করা সিস্টেম পরিবর্তন করে তৃণমূল মানুষদের সংগঠিত করে সারা বাংলাদেশে প্রত্যেকটা মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করে সেখানে ক্ষমতাটা দিতে চেয়েছিলেন। প্রত্যেকটা জেলায় গভর্নর নিযুক্ত করে দিয়েছিলেন। জেলাভিত্তিক উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে সেটা বাস্তবায়ন করবে। দ্রুত বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে। আমাদের সংবিধান বর্ণিত অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা; মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। এত বড় পরিবর্তন এনে বাংলাদেশকে তিনি চেয়েছিলেন সুপরিকল্পিতভাবে গ্রামকে সাজাতে। সেই কাজগুলো তো তাকে করতে দেওয়া হলো না, উল্টো মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হলো। তৃণমূলের মানুষ ক্ষমতাসীন হোক সেটা অনেকেই চায় না। একমাত্র আওয়ামী লীগে সেটা বিবেচনা করে।

সে কারণে '৯৬ সালে আমরা যখন জনগণের সেবক হিসেবে কাজ শুরু করলাম এবং একেবারে তৃণমূল থেকে উন্নয়ন শুরু করলাম, এরপর ২০০১ এর নির্বাচন...তখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সিস্টেম ছিল। আমরা কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। এর আগে কিন্তু কেউ করেনি। যদিও বিএনপি '৯১ সালে ক্ষমতায় আসার পর '৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটা ইলেকশান করল। সব জায়গায় আর্মি ডেপ্লয় করল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা—সবাইকে ব্যবহার করে যে নির্বাচন করল, জাতির পিতার খুনি রশিদকে নিয়ে এলো সংসদে, হুদাকে নিয়ে এলো। ঠিক যেভাবে জিয়াউর রহমান যেভাবে যুদ্ধাপরাধী যাদের আমি ফাঁসি দিয়েছি, তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে যত রকমের রাজাকার, আল বদর হয়ে গেল মন্ত্রী অথবা উপদেষ্টা। আওয়ামী লীগ আসার পরে সত্যিকার গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখলো। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি ভোট চুরি করেছিল বলেই কিন্তু আমাদের আন্দোলনটা সফল হয়েছিল, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণ ভোট দিতে পারেনি। ভোট চুরি করে নিয়ে গেছে। জনগণের ব্যাপক সাড়া আমরা পাই। যে কারণে আন্দোলণ সফল হয়। তখন খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়। সে (খালেদা জিয়া) যদি ভোট চুরি না করতো তাহলে তো পদত্যাগে বাধ্য হতো না। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট কখনো চুরি করে না। জনগণের ভোট সংরক্ষিত করে। ভোটের অধিকার জনগণের হাতে আওয়ামী লীগ তুলে দেয় এবং এটা আমরা প্রমাণ করেছি। আর প্রমাণ করেছি বলেই আমাদের সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি।

তিনি আরও বলেন, বারবার তারা চেষ্টা করেছে; অগ্নি সন্ত্রাস, আন্দোলন, মাসের পর মাস-বছরের পর বছর অবরোধ, কোনোটাই কাজে আসেনি। ভোট চুরির অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। জনগণ জানে তারা ভোট দিয়েছে, তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে কেন! বিএনপির খাসলত তো যায় না! ২০০১-এ গ্যাস বিক্রি মুচলেকা দিয়ে তারা এলো ক্ষমতায়। গ্যাস তো দিতেই পারলো না, চুরি-চামারি, ভোট চুরি শুরু করল, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, গ্রেনেড-বোমা হামলা, একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব বাংলাদেশে কায়েম করল। বাংলা ভাই, জঙ্গি, ৫০০ জায়গায় বোমা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং আওয়ামী লীগের এমন কোনো জনসভা নেই যেখানে হামলা না করেছে। আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর যে অত্যাচার তারা করেছে...নাসিম, সাবের হোসেন চৌধুরী থেকে শুরু করে আমাদের বহু নেতাকর্মীদের নিয়ে দিনের পর দিন নির্যাতন করে, যখন দেখেছে যে মরে যাবে, জেলখানা ফেলে এসেছে। কোথায়,  আমরা তো বিএনপি কাউকে এমন কিছু করিনি এখন পর্যন্ত! আমাদের নেতারা বিএনপির আমলে লাঠির বাড়ি খাননি, এমন কেউ আছেন? নাই।

খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে গুলি হলো, রকিবুল হুদা সরাসরি গুলি করেছিল আমাকে। সব সময় আমার কর্মীরা আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে। তখন এরশাদ ক্ষমতায় ছিল। খালেদা জিয়া তাকে কেন পদোন্নতি দিয়ে আইজিপি পর্যন্ত বানালো, এই জবাব কি তিনি দিতে পারবেন? তার মানে ওই ঘটনার সঙ্গে এরাও জড়িত ছিল। এ রকম বহু ঘটনা আছে।

আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০১-এর পরে নির্বাচন শুরু হওয়ার পর পর আমাদের ওপর অত্যাচার। একেক জনের বাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে ফেলেছে। ৬ বছর থেকে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত ওদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। তারপর এলো অগ্নি সন্ত্রাস। ২০০১-এ যে অত্যাচার আমাদের ওপর করেছে, আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর গুলি দিয়ে সেই অত্যাচারের জবাব কিন্তু দিতে পারতাম। সে ক্ষমতা আওয়ামী লীগ রাখে। কিন্তু আমরা তো সেটা করিনি! আমরা তো কখনো এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করতে যাইনি! মারতেও যাইনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা নির্বাচনী ইশতেহার রূপকল্প-২০২১ আমরা বাস্তবায়ন করেছি, বিএনপি দেখাতে পারবে একবারও? তারা তো এতবার ক্ষমতায়, বড় বড় করে বলে ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী। একবারও দেখাতে পারবে যে, তারা নির্বচনী ইশতেহারে যে কথা দিয়েছিল তারা কথা রেখেছে? একটাও বাস্তবায়ন করেছে? তাদের কোনো ভবিষ্যত প্রোগ্রাম অথবা আশু করণীয় বা কর্মসূচি ছিল দেশের জন্য? ছিল না। তারা কখনো এ ধরনের কর্মসূচি নেয়নি। তারা শুধু কথাই বলতো, একটাও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এটা হলো বাস্তবতা।

গণমাধ্যমের মালিকদের ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে আছে বিএনপিকে তেল মারছে। এত তেল মারা কিসের জন্য। কত তেল আছে, আমি তাদের দেখব।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারকে বলব তারেক রহমানকে ফেরত পাঠাতে। সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি।

বিএনপি বিআরটিসির একটি বাস পুড়িয়েছে এমন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এর পর আগুন দিতে গেলে সবার হাতে মোবাইল ফোনে ভিডিও করে যে হাত দিয়ে আগুন দিতে যাবে, ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy in early 2025

According to the latest data from the United Nations High Commissioner for Refugees (UNHCR), 2,589 Bangladeshis landed in Italian shores in January and February this year while 1,206 went to the European country in the two months last year

2h ago