৪ বছরে উকিল আব্দুস সাত্তারের নগদ অর্থ বেড়েছে ৩ গুণ
একাদশ জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার সম্পদ ৪ বছরে প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে।
সাবেক এই সংসদ সদস্যের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। নির্বাচনের হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তৎকালীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকা দেখিয়েছিলেন ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪ টাকা।
বর্তমানে তার নগদ অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৫২ টাকা। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে আব্দুস সাত্তারের সম্পদ বৃদ্ধির এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দলীয় সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর আবদুস সাত্তারসহ বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দেন।
পদত্যাগের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি শূন্য হলে তিনি দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে আসেন। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এখানে উপ-নির্বাচন হবে।
গত নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় তিনি আইএফআইসি ব্যাংকে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ১২৮ টাকা এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে ৫ লাখ ৮ হাজার ২৭৮ টাকা জমা থাকার কথা উল্লেখ করলেও, এ বছর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দেখিয়েছেন ১৮ হাজার ৯২২ টাকা।
আগের হলফনামায় ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ৫২ হাজার ৮০৬ টাকা দেখালেও, এবার এই খাতে কোনো আয় নেই বলে উল্লেখ করেছেন।
এর আগে অন্যান্য খাতে আয় মাত্র ৫ হাজার ৬৪৪ টাকা দেখালেও, এবার সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানি ভাতা ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন আব্দুস সাত্তার।
এছাড়া, স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে সরাইল উপজেলাধীন নিজ গ্রাম পরমানন্দপুরে ২৭ বিঘা জমি থাকার যে তথ্য আগের হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন, তা এবারও অপরিবর্তিত আছে।
তবে বিগত হলফনামায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেরুড়া মৌজায় তার নিজের নামে সাড়ে ৭ শতক জমিতে এক তলা ভবন আছে, যার মূল্য ১০ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। এবার একই জায়গার মূল্য দেখানো হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেওয়ার পর বিএনপি ত্যাগ করে আবারও উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আলোচনায় আসেন আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া। এ আসনে তার সঙ্গে আরও তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারা হলেন-জাতীয় পার্টি মনোনীত আব্দুল হামিদ ভাসানী, আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল। তবে ক্ষমতাসীন মহাজোট এই আসনে কোনো প্রার্থী দেয়নি। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি।
হলফনামার তথ্যানুযায়ী, আব্দুস সাত্তার স্নাতকোত্তর এবং জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ ভাসানী এলএলবি সম্পন্ন করেছেন। বাকি দুজনের মধ্যে বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ উচ্চ মাধ্যমিক এবং জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল স্বশিক্ষিত।
চার প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি নেতা আবু আসিফ আহমেদ ছাড়া বাকি তিনজনের নামে কোনো মামলা নেই। আবু আসিফের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫টি মামলা চলমান। এর মধ্যে তিনটি মামলা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে।
আব্দুস সাত্তারের নামে ২০০৯ ও ২০১০ সালে দুটি বিশেষ আইনে মামলা হলেও ২০২১ সালের জানুয়ারি ও মার্চ মাসে এসব মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।
হলফনামায় চারজন প্রার্থীই তাদের নিজেদের এবং স্ত্রীদের নামে স্বর্ণালংকার থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
আব্দুস সাত্তার তার আগের হলফনামায় বিয়ের উপহারস্বরূপ ৪০ ভরি স্বর্ণের উল্লেখ করেছিলেন যার মূল্য দেখিয়েছিলেন ৪০ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায়ও তিনি একই পরিমাণ স্বর্ণের একই মূল্য উল্লেখ করেন।
আবু আসিফ আহমেদ তার নিজের নামে ১১ লাখ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ৬০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার, আব্দুল হামিদ ভাসানী নিজের নামে ৪০ ভরি ও স্ত্রীর নামে ৩৭ ভরি স্বর্ণ এবং জহিরুল ইসলাম জুয়েল নিজের নামে দুই লাখ ও স্ত্রীর নামে দুই লাখ টাকার স্বর্ণালংকার থাকার কথা উল্লেখ করেছেন।
Comments