‘যারা বিরোধিতা করেছিল তারাই প্রস্তাব দেয় যমুনায় নতুন রেলসেতু করতে’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর সঙ্গে আমরা রেলসেতু করে দিই, যারা এক সময় এর বিরোধিতা করেছিল আবার তারাই প্রস্তাব দেয় নতুন রেলসেতু করতে।'
বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ৬ হাজার ২০ কিলোমিটার রেলওয়ে পথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা দেখেছি রেলকে নিয়ে নানা খেলা চলেছে। জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যার পর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে মিলিটারি ডিকটেটররা ক্ষমতা দখল করেছিল তারা আসলে এ দেশের কোনো মঙ্গল চায়নি, উন্নতিও চায়নি।'
'যার কারণে সাধারণ মানুষের যে পরিবহন ছিল একে একে সবই ধ্বংস করার চেষ্টা করে। এমনকি রেল লাভজনক না এই অজুহাতে বন্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। রেলের লোকবল গোল্ডেন হ্যান্ডসেকের মাধ্যমে বিদায় দেওয়া হয়। অনেক রেললাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়ত সরকার অর্থাৎ যখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিল তখন এটা করা হয়,' বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, '২১ বছর পরে ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। আমরা সরকারে এসেই রেলকে গুরুত্ব দেই। যমুনা নদীর ওপর যে সেতু আমরা নির্মাণ করি, এটা বহুমুখী সেতু করা হয়। সেখানে আমি রেললাইন সংযুক্ত করে দিয়েছিলাম। রেলকে পুনর্গঠন করার পদক্ষেপ আমরা নেই। আমরা দ্বিতীয়বার যখন সরকারে আসি, যেহেতু রেলের বাজেট আলাদা দেওয়া হতো না, রেল ছিল সড়কের সঙ্গে। বেশিরভাগ টাকা চলে যেত সড়কে। তখন ২০১১ সালে আমি রেলের আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করি গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন যেন সুলভ মূল্যে করা যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'সেই থেকে এ পর্যন্ত গত ১৪ বছরে আমরা ৬৫০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, ২৮০ কিলোমিটার মিটারগেজকে ডুয়ালগেজে রূপান্তর, ১ হাজার ২৯৭ কিলোমিটার লাইন পুনর্বাসন-পুনঃনির্মাণ করেছি। ১২৬ নতুন স্টেশন ভবন ও ২২৩টি স্টেশন ভবন পুনর্বাসন-পুনঃনির্মাণ করেছি। ৭৩২টি নতুন রেলসেতু, ৭৭৪টি রেলসেতু পুনর্বাসন-পুনঃনির্মাণ এবং ৫০টি ব্রডগেজ ও ৫০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন করা হয়েছে।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমরা ১০৬টি লোকোমোটিভ, ২০ সেট ডিইএমইউ, ৫৩৫টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ এবং ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন সংগ্রহ করেছি। ১৩০টি স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করেছি। ইতোমধ্যে ৪৪টি নতুন এবং বর্ধিত রুটে মিতালী এক্সপ্রেসসহ মোট ১৪২টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে।'
দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'পদ্মা সেতু আমরা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছি এবং পদ্মা সেতুতেও ঢাকা থেকে যশোরের রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কক্সবাজারের মানুষের বহুদিনের প্রত্যাশা ছিল রেললাইন হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় এটা কেউ উদ্যোগ নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে উদ্যোগ নিয়েছে। আজকে কক্সবাজারের দুটি ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করি, দ্রুত এটা শেষ হবে।'
তিনি বলেন, 'যেহেতু বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর সঙ্গে আমরা রেলসেতু করে দিই, যারা এক সময় এর বিরোধিতা করেছিল আবার তারাই প্রস্তাব দেয় নতুন রেলসেতু করতে। তাই যমুনা নদীর ওপর এখন নতুন রেলসেতু আমরা নির্মাণ করছি। বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে।'
'তাছাড়া খুলনা-মোংলা ব্রডগেজ রেললাইন খালেদা জিয়ার সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা নতুন করে লাইন ও সেতু নির্মাণ করছি। আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন নির্মাণ, ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ এক সময় রেল যোগাযোগ ছিল, মাঝখানে সেটা প্রায় বন্ধ...আমরা আবার চালু করেছি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা বন্দর রেললাইন, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন, খুলনা-দর্শনা ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। তাছাড়া, জয়দেবপুর- ময়মনসিংহ-জামালপুর ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র রেল-লিংক, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন, ধীরাশ্রম আইসিডি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।
Comments