নরসিংদী ছাত্রদলের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ: গুলিতে নিহত ১

গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরও ১ জন।  
নিহত সাদেকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীতে জেলা ছাত্রদলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ২ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিতে ১ জন নিহত হয়েছেন এবং গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরও ১ জন।  

আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় শহরের চিনিশপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের কাছে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান (৩২) ও ছাত্রদল নেতা আশরাফুল ইসলাম (২০) গুলিবিদ্ধ হন। তারা সম্প্রতি ঘোষিত জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতা।

সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২ ছাত্রদল নেতাকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে সাদেকুরের মৃত্যু হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আহত দুজনকে ঢামেকে আনা হলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়। তার মাথায় গুলি লেগেছিল।'

অন্যজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানান তিনি।

আগামী ২৭ মে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে নরসিংদীতে।

পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতারা জানান, গত ২৬ জানুয়ারি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদকে সভাপতি, মাইনুদ্দিন ভূইয়াকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা ছাত্রদলের ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

এরপর থেকে ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আন্দোলন করে আসছিলেন। এর জেরে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবীর খোকনের চিনিশপুরের বাসভবনে—যেটি জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবেও ব্যবহৃত হয়—একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটে।

ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে আজও চিনিশপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয় সংলগ্ন স্থানে মোটরসাইকেল শোডাউন করে বিক্ষোভ দেখান পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।

এ সময় ছাত্রদলের অপর গ্রুপের নেতাকর্মীরা অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালান। ২ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে মাথায় ও পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন পদবঞ্চিত ছাত্রদল গ্রুপের ২ নেতা সাদেক ও আশরাফুল।

গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানেই মারা যান সাদেক।

জেলা ছাত্রদলের সদ্য বহিষ্কৃত সহসভাপতি মাইন উদ্দিন ভূইয়া বলেন, 'জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদের নেতৃত্বে এই হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে।'

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলে ই খোদা বলেন, 'খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জেলা হাসপাতালে গিয়ে ১ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়, অপরজনকে আগেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানতে পারি। কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'

এ ঘটনার পর খায়রুল কবির খোকনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র ও হাতবোমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, তার বাড়ি থেকে ৮টি ধারালো ছুরি ও দা, একটি হাতুড়ি এবং ৩টি হাতবোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূইয়া বলেন, 'সংঘর্ষের খবর পেয়ে বিএনপির কার্যালয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আমরা সেখান থেকে কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে খায়রুল কবির খোকন বলেন, 'হামলাকারীরা সন্ত্রাসী। তারা সরকারি দল ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এই বর্বর হামলা চালিয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বারবার সন্ত্রাসীদের এসব হামলায় প্রমাণ হয় প্রশাসন তাদের ছত্রছায়া দিচ্ছে। আমরাও এদেশের নাগরিক, আমাদের নিরাপত্তা দেওয়া প্রশাসনের দায়িত্ব। অথচ তাদের প্রশাসন ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছে। একের পর এক হামলা করা হচ্ছে কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার।'

অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তিনি জানেন না। কে বা কারা এগুলো রেখেছেন, খোঁজ নিয়ে কথা বলতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago