আমুর আলোচনার প্রস্তাব বিষয়ে যা বললেন মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ছবি

দেশে এখন মূল আলোচনা আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক। নির্বাচন নিয়ে এতদিন আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য ছিল, বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। তবে, গতকাল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে আজ বুধবার সকালে টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু গতকাল যা বলেছেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য ছিল, বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। আমির হোসেন আমুর বক্তব্য বিষয়ে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: এ বিষয়ে আমরা অফিসিয়ালি কিছু জানি না। আমির হোসেন আমুর বক্তব্য কি আওয়ামী লীগের বক্তব্য? তিনি কি আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলছেন? আমরা জানি না।

ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগ নেতা আমু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতা...

মির্জা ফখরুল: তিনি ১৪ দলের নেতা এবং মনে হয় তাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এখন তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামেও নেই। সেক্ষেত্রে প্রথম কথা হচ্ছে, তার কথাকে আমরা আওয়ামী লীগের বক্তব্য মনে করব কি না? দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, ১৪ দল তো সিদ্ধান্ত নেয় না, সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। এটা আদৌ আওয়ামী লীগের প্রস্তাব কি না, সেটা না জেনে মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না।

ডেইলি স্টার: আমির হোসেন আমু যা বলেছেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও যদি এ ধরনের প্রস্তাব আসে যে—আসেন আলোচনা করি, আলোচনা করে নির্বাচন প্রক্রিয়া ঠিক করি, সেক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থান কী হবে?

মির্জা ফখরুল: দুটো ব্যাপার আছে। একটা হচ্ছে, অনুমান করে রাজনীতি করা ঠিক হবে না। আবার আমাদের যে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা, ২০১৮ সালে আমাদের সঙ্গে ২ বার বসে যে কমিটমেন্টগুলো আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, তার কোনোটাই রক্ষা করেনি। সেখানে আমির হোসেন আমুও ছিলেন। তাই আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখার কোনো সুযোগ নেই। সেজন্য আমরা পরিষ্কার বলছি যে, অন্য কোনো বিষয়ের ওপর আলোচনার কোনো সুযোগই নেই। একমাত্র নিরপেক্ষ সরকার কীভাবে হতে পারে, তারা যদি রাজি হয় যে, হ্যাঁ নিরপেক্ষ সরকার করব, সরকার যদি বলে—আমরা পদত্যাগ করব, আমরা নিরপেক্ষ সরকারের ব্যাপারে আলোচনা করব কি না, সেটা আমরা তখন সিদ্ধান্ত নেব।

আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছে, এটা আরও জোরদার হবে।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র বা মার্কিন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূতের তৎপরতার বিষয়টি আলোচনায়। তারা আপনাদের সঙ্গে বারবার কথা বলছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের গুঞ্জন আছে।

মির্জা ফখরুল: যুক্তরাষ্ট্রের তো একটি ঘোষিত নীতি আছে। গণতন্ত্রকে তারা সারাবিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। যেসব দেশে গণতন্ত্র ছিল এবং গণতন্ত্র খারাপের দিকে যাচ্ছে, কর্তৃত্ববাদিতা বাড়ছে, একনায়কতন্ত্র বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা সেসব দেশে তাদের নীতি অনুযায়ী গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপারে বহুদিন ধরে বিভিন্ন কথাবার্তা চলছে। তাদের প্রত্যেক বছরের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতিবেদন দেখলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের যে নেতিবাচক পরিস্থিতি, তা নিয়ে তারা বরাবরই কথা বলে আসছে। এখানে যে সুশাসন নেই, আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে—এ বিষয়গুলো তারা সবসময় বলে আসছে। এ কারণে তারা তাদের মতো করে, মানে তাদের যেসব পদ্ধতি আছে—সেই পদ্ধতি তারা সারা পৃথিবীতে কিছু কিছু করে প্রয়োগ করে। আমরা দেখেছি, মিয়ানমারেও তারা প্রয়োগ করেছে। নাইজেরিয়া, উগান্ডাতেও প্রয়োগ করেছে। তাদের মতে যেহেতু বাংলাদেশে এখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নেই, তাই তারা যে গণতান্ত্রিক সম্মেলন করেছে, সেখানে বাংলাদেশকে ডাকেনি। সুতরাং, তারা নিশ্চিত যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। তাই এখানে গণতন্ত্র সম্প্রসারণে তারা এই কাজগুলো করছে বলে তারা জানিয়েছে। তারা বলেছে, নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হয়, সেজন্য ভিসা নীতি। আর সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে তারা এটা প্রয়োগ করবে।

ডেইলি স্টার: আপনি যে মার্কিন নীতির কথা বললেন, তারা এখন যেটা করতে চাচ্ছে, ইতোপূর্বে যা করেছে বা বাংলাদেশ বিষয়ে আগে যেসব আলোচনা হয়েছে, এগুলোর মাধ্যমে কি খুব বেশি আশাব্যঞ্জক ফলাফল আসে বা এসেছে?

মির্জা ফখরুল: আমার তো মনে হয়, সরকারের ওপর অবশ্যই বড় একটি চাপ পড়ে। যেসব কর্মকর্তা, কর্মচারী, রাজনীতিবিদ মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচনে কারচুপির সঙ্গে জড়িত, তাদের বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করে। আমরা যতটুকু জানি, তাদের অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পদ গড়েছে। সেক্ষেত্রে তারা অবশ্যই চিন্তার মধ্যে পড়ছে। একইসময়ে যেহেতু ব্যবসা-বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে  যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আছে, তাই সরকারেরও উদ্বেগ আছে।

ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে  বলা হচ্ছে, নির্বাচনে বাধা দেওয়ার যে প্রসঙ্গ আসছে—সেই ভিসা নীতি বিএনপির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। কারণ তারা নির্বাচন করতে দিতে চায় না, তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়। এমনকি এ নিয়ে আওয়ামী লীগের একজন নেতা চিঠিও লিখেছেন।

মির্জা ফখরুল: এটা হলো মানুষকে বোকা বানানোর একটি হাস্যকর আওয়ামী যুক্তি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের অধীনে দুটো নির্বাচন হয়ে গেছে। দুই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন তারা সুষ্ঠু হতে দেবে না। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনে কী করেছে, তা সবার জানা। ১৫৪টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়ে গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করেছে। পুরো নির্বাচনের সময় তারা অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, পুলিশকে দিয়ে হয়রানি সবকিছু করেছে। বিএনপিকে তারা নির্বাচনে দাঁড়াতেই দেয়নি। তাহলে বিএনপি বাধা দিলো কোথায়?

বিএনপি নির্বাচন চায়, আমরা নির্বাচন চাই এবং সেই নির্বাচন আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে চাই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব ধরনের বাধা দিয়েছে। গত এক বছর ধরে আমরা যে কর্মসূচি পালন করছি, সেই কর্মসূচিতে কারা বাধা দিয়েছে? আওয়ামী প্রত্যেকটা সমাবেশে বাধা দিয়েছে। আমাদের অফিসে অভিযান চালিয়েছে, আমাদের গ্রেপ্তার করেছে, আমাদের নিয়ে জেলে ভরেছে। আর এখন যেটা শুরু করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে সেগুলোর স্পিডি ট্রায়াল করে আমাদের নেতাদের কনভিক্ট (দোষী সাব্যস্ত) করে দিচ্ছে। যেন নির্বাচনের আগেই আমরা সবাই নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে যাই। এটাকে আপনারা কী বলবেন? এটা কি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ? কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করছে?

গণতন্ত্রের জন্য যত বাধা আছে, সব আওয়ামী লীগ তৈরি করছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসই করে না। তারা আবার একইভাবে জোর করে নির্বাচন খেলা খেলে ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যবস্থা করতে চাচ্ছে। সবকিছু সেভাবেই সাজিয়েছে। আবার সেই লোকজনকে দিয়ে, আবার সেই পুলিশ গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে। বাধা তো তারাই দিচ্ছে। বিএনপির বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি। সুতরাং আমাদের ওপর ভিসা মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কোনো সম্ভাবনা নেই। আগের দুটি নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় ও কলুষিত নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ, আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সুতরাং মার্কিন ভিসা নীতির প্রয়োগের ভয় বলেন, আতঙ্ক বলেন—সব তাদের।

ডেইলি স্টার: আপনারা কী মনে করেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি সরকারকে মানাতে বাধ্য করতে পারবেন? মার্কিন চাপে সরকার তা মানতে বাধ্য হবে?

মির্জা ফখরুল: সরকারকে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে একটু সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাদের পদত্যাগ করতে হবে। এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের বিষয় নয়। এটা দেশের জনগণের দাবি। আমরা খুবই আত্মবিশ্বাসী। মানুষের যে সাড়া আমরা পাচ্ছি, মানুষ যেভাবে এগিয়ে আসছে, আমরা বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করতে পারব এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তৃতায় কী বললেন, তা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তারা হঠকারী ও হাস্যকর কথা বলেন। আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে শুধুমাত্র নিরপেক্ষ সরকার বিষয়ে। অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

7h ago