নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ হয় সেই ব্যবস্থা করেছি, আবার কেন প্রশ্ন ওঠে: শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করা লাগে না। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট পায় আওয়ামী লীগের কাজের মধ্য দিয়ে, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মধ্য দিয়ে।
শেখ হাসিনা
বক্তব্য রাখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করা লাগে না। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট পায় আওয়ামী লীগের কাজের মধ্য দিয়ে, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মধ্য দিয়ে।'

আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শুরুর আগে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি এ দেশের ভোট চুরির কালচার শুরু করে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'বিএনপি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল একটি মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে ক্যান্টনমেন্টে বসে। ক্ষমতায় বসে থেকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে, জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমেই কিন্তু জিয়াউর রহমান তার অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার প্রয়াস পায়।'

'অবৈধভাবে মার্শাল ল' দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেটার বৈধতা আনার জন্য সংসদে দু-থার্ড মেজরিটি দরকার। সে সময় সংবিধান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেয়, পরবর্তীতে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে হ্যাঁ-না ভোট করিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার পরে রাজনৈতিক দল যাতে কাজ করতে পারে সেই সুযোগ দেয়। তখন তাদের খায়েশ হয়, আবার সংবিধান পুনরুজ্জীবিত করে, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে মার্শাল ল' অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে অবৈধ কার্যক্রম বৈধ করা বা অবৈধ ক্ষমতা দখল বৈধ করার প্রচেষ্টার জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে এই ভোট চুরির একটা কালচার এ দেশে শুরু করে। সেভাবেই বিএনপির জন্ম,' বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি আরও বলেন, 'একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখেছি ১৯৮২ সালে। জিয়ার মৃত্যুর পরে ১৯৮১ সালে একটি নির্বাচন হলো, সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন জাস্টিস সাত্তার। সেখানেও ব্যাপকভাবে ভোট কারচুপি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন। এমনকি ঘর-বাড়ি পোড়ানো থেকে শুরু করে এহেন কাজ নাই তারা না করেছে। এভাবে করে যখন ক্ষমতায় এলো কিন্তু সে ক্ষমতা বেশি দিন টেকাতে পারেনি।'

মানুষের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার; আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে, তখনই এবং বিরোধী দলে থেকে সংগ্রাম করেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'বিএনপি একটি দল! কী দল? জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে এই দলটি সৃষ্টি করে। ঠিক একইসঙ্গে যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল—সেই যুদ্ধাপরাধী; যাদের বিচার জাতির পিতা শুরুও করেছিলেন। যাদের সাজা হয়েছিল এবং অনেকে কারাবন্দি ছিল। অনেকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়েছিল বা বিদেশে চলে গিয়েছিল। বাংলাদেশকে যারা স্বীকারই করেনি। তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। তার জন্য সংবিধানে যে বাধা ছিল; ১২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে দেওয়া এবং ৩৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এদের ভোটের অধিকার পর্যন্ত দিয়েছিল। ভোটের অধিকার নিষিদ্ধ ছিল যুদ্ধাপরাধীদের।'

তিনি বলেন, 'যে খুনীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে তাদের বিচার না করে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স দিয়ে তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। আমরা যারা ১৫ আগস্ট আপনজন হারিয়ে ছিলাম, আমাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল, কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকারই ছিল না। আমরা বিচার চাইতে পারতাম না। আমি জানি না, সে সময় বিশ্বে এখন যারা মানবাধিকার নিয়ে এত সোচ্চার আর সচেতন, তারা তখন কেন নিশ্চুপ ছিল সেটা আমার কাছে বোধগম্য নয়।'

আমরা কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন না, মানবাধিকার সুরক্ষা করেছি বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

বিএনপি দল মানে একটি সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী দল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'এটা শুধু আমার কথা না, কানাডার কোর্টে এটার একটি রায় আছে। কানাডা কোর্ট কিন্তু বিএনপিকে জঙ্গিবাদী সংগঠন হিসেবেই ঘোষণা দিয়েছে। কারণ কিছু বিএনপির সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা; মানুষ হত্যা, অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, লুটপাট করেছে তারা ওখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিল। কানাডা কোর্টে যখন সেটা ওঠে তখন তারা ঘোষণা দেয় যে, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল, জঙ্গিবাদী দল। কারণ তাদের কাছে তখনকার এসব ঘটনা উল্লেখ ছিল। আমার মনে হয়, দেশবাসী এটা ভুলে যাবেন না।'

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'সেই সন্ত্রাসী সংগঠন আজকে আন্দোলন করে, আজকে তারা আমাদের ভোট চোরও বলে। আওয়ামী লীগের ভোট চুরি করা লাগে না। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট পায় আওয়ামী লীগের কাজের মধ্য দিয়ে, জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জনের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগকে যতবার হারানো হয়েছে ততবার একটা চক্রান্ত করেই হারানো হয়েছে। বরং জনগণের ভোট ডাকাতি করে নিয়ে আওয়ামী লীগকে ভোট পেতে দেয়নি বা সিট পেতে দেয়নি বা আওয়ামী লীগকে হারানোর চেষ্টা করা হয়েছে।'

'যখনই এ দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তখনই কিন্তু আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। তার প্রমাণ ২০০৮ সালের নির্বাচনে; এটাও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন ছিল। আর সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিএনপির সবচেয়ে আপনজনই ছিল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব বিএনপির উপদেষ্টা, তিনি হলেন রাষ্ট্রপতি। ফখরুদ্দীন সাহেবকে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে নিয়ে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হলো—সব থেকে বেশি প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিল বিএনপির। খালেদা জিয়া বা সাইফুর রহমানের তিনি ছিলেন উপদেষ্টা। সেনা বাহিনীর ৯ জনকে ডিঙ্গিয়ে মঈনকে করা হয়েছিল সেনা প্রধান। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হলো, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট বা আমরা মহাজোট করেছিলাম, আমরা জয় লাভ করলাম। আর বিএনপির নেতৃত্বে ৪ দলীয় জোট পেয়েছিল মাত্র ২৯টি সিট। আর পরে আরেকটি সিট, এই মোট ৩০টি সিট পেয়েছিল। এটা ছিল বিএনপির প্রকৃত অবস্থা। কাজেই এই কথাগুলো আমার মনে হয় সবার মনে রাখা উচিত যে, সন্ত্রাসী বিএনপিকে কেউ ভোট দেয়নি। যে জন্য ২০১৪ সালে তারা নির্বাচন করেইনি,' বলেন তিনি।

একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'সন্ত্রাসী দল, যুদ্ধাপরাধীর দল, খুনীর দল; যে খুনী রশিদকে বিএনপি ভোট চুরি করে—ডাকাতি করে বলতে গেলে, হুদা এবং রশিদকে পার্লামেন্টের মেম্বার করেছিল। জেনারেল এরশাদও কম যায়নি! ফারুককে করেছিল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। দল করতে দিয়েছিল। এরা খুনীদের নিয়েই চলেছিল। এই খুনীর দল, সন্ত্রাসী দল বিএনপি, এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন থাকতে হবে-সজাগ থাকতে হবে। তারা মানুষের কল্যাণ চায় না। মানুষের অমঙ্গলটাই তাদের কাজ। মানুষ হত্যা করতে পারে, সেটা ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালে সবাই দেখেছেন। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি। একেবারে তাদের মাথায় করে নিয়ে চলা। পুলিশ দিয়ে পাহারা দিয়ে তাদের অস্ত্র হাতে নিয়ে মিছিল করতে দেওয়া—এ রকম বহু ঘটনা তো আমরা দেখেছি।'

আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মেয়র নির্বাচিত করায় রাজশাহী ও সিলেটবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, 'বরিশালেও আমরা জয় লাভ করেছি এবং কক্সবাজারের মেয়র ইলেকশনসহ বিভিন্ন ইলেকশনে এবং এই নির্বাচন নিয়ে কারো কোনো কথা বলা বা অভিযোগ করতে পারবে না। আজকে যারাই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে তাদের বলবো, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ হয়, নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সেভাবে আমরা যে ব্যবস্থা করতে পারি, সেটা কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি।'

'কাজেই এটা নিয়ে আর কারো কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। যে সমস্ত দেশ আমাদের নির্বাচনের দিকে শ্যেনদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, তাদেরকেও বলবো, আমাদের যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন বা আমাদের উপনির্বাচগুলো যে হলো সেই নির্বাচনগুলো দেখেন! যে কীভাবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। এর পরে আবার কেন প্রশ্ন ওঠে!' বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'বিএনপির আমলে নির্বাচন মানে কী ছিল? প্রত্যেকটা উপনির্বাচন মানে ছিল সেই ১০টা হুন্ডা, ২০টা গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা।'

তিনি বলেন, 'আমরা জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। জনগণকে সচেতন করেছি; "আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো" এটা আওয়ামী লীগের স্লোগান। আমরা এই স্লোগান মাঠে নিয়ে মানুষকে সচেতন করেছি। আগে তো মানুষের মধ্যে এই সচেতনাতাই ছিল না। ভুলেই গিয়েছিল মানুষ। সেটা আওয়ামী লীগই ফিরিয়ে এনেছে।'

'আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা মানবাধিকারে বিশ্বাস করি। আজকে যদি মানবাধিকারে বিশ্বাস না করতাম তাহলে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা এভাবে আশ্রয় দিতাম না। অনেক দেশই দেয়নি। যখন আশ্রয় দিয়েছি, কয়টা দেশ এসেছে? সারা বাংলাদেশ থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা, সাধারণ মানুষ খাবার-দাবার নিয়ে এসেছে,' বলেন তিনি।

Comments