সংলাপ বা আন্দোলন নয়, আওয়ামী লীগের নজর নির্বাচনের দিকে

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তারা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে।
৭ টি আসন ছাড়ার ঘোষণা আওয়ামী লীগের

বিএনপির এক দফা দাবির আন্দোলন নয়, শেষ মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের সম্ভাবনাকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

যদিও বিএনপি বলছে, তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না, কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বিএনপি ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তারা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা এও মনে করছেন, দলের অস্তিত্ব সংকটের কথা মাথায় রেখে আড়ালেই প্রার্থী চূড়ান্ত করছে বিএনপি।

তাদের বিশ্বাস, অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, তখন বিএনপিও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।

গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের খবর গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশ পেলেও সংলাপ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় আওয়ামী লীগ। আর বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগ কোনো ধরনের উদ্যোগ নেবে না বলেও দলটির সূত্রে জানা গেছে।

বরং ক্ষমতাসীন দল তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল সমাধানের দিকেই এখন বেশি মনোনিবেশ করছে, যাতে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন দলের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। সব দল অংশ নেবে—এমন একটি নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বানই জানিয়েছেন তিনি।

দলীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে আসা মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আওয়ামী লীগ স্বস্তি বোধ করছে।

দ্য ডেইলি স্টারকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উজরা জেয়া অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করলেও মার্কিন প্রতিনিধিদলের কোনো সদস্যই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেননি।

তারা আরও জানান, প্রতিনিধি দলের কোনো বৈঠকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি।

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দল বিশ্বাস করে, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও অন্য দলগুলো তা করবে না।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার বারবার তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে একই প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন এবং ঢাকায় সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আজকের বৈঠকেও আওয়ামী লীগ একই বার্তা দেবে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মার্কিন প্রতিনিধিদলের সুপারিশ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।

বিএনপিসহ অন্যান্য দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ যেমন গণতান্ত্রিক অধিকার, তেমনি নির্বাচনে অংশ না নেওয়াও একটি দলের অধিকার। এজন্য আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করার কোনো চেষ্টা করব না।

শেষ মুহূর্তে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে হানিফ বলেন, কোনো বিকল্প না থাকায় বিএনপি গোপনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

তার মতে, বিএনপির এক দফা আন্দোলন নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডি কার্যালয়ে বৈঠক শেষে মার্কিন প্রতিনিধিদলের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, আমাদের বিদেশি বন্ধুরা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা তারা বলেনি।

দলীয় সূত্র আরও বলেছে, নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি আওয়ামী লীগ তাদের শক্তি প্রদর্শন ও বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় রাজপথে নামবে।

বিএনপির দুই দিনের রাজপথের আন্দোলন মোকাবিলায় কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগও এরই মধ্যে ১৮ ও ১৯ জুলাই মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দলীয় সূত্রের ভাষ্য, নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা পর্যায়ে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। আগামী ৩০ জুলাই রংপুরে জনসভার মাধ্যমে এর সূচনা হবে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আগস্টজুড়ে সারাদেশে আলোচনা সভা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করবে এবং সেসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপ, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাসীন দল এই অর্জনগুলো সারা দেশে প্রচার করবে।

আগামী সেপ্টেম্বরে দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দল দুটি বিষয়ের ওপর জোর দেবে—একটি হচ্ছে সরকারের অর্জন এবং অন্যটি ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় শাসনামলের দুঃশাসন।

অক্টোবরে শেখ হাসিনা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন। তিনি দেশে ফেরার পর দলটি নির্বাচনের পূর্ণ প্রস্তুতি শুরু করবে বলে আশা করছেন নেতারা। কারণ অক্টোবরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

Comments