২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে আ. লীগের ৩ সংগঠন ও বিএনপি
আগামীকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের ৩টি সংগঠনকে 'শান্তি সমাবেশ' ও বিএনপিকে 'মহাসমাবেশ' করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ বিকেলে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
তিনি জানান, ২৩ শর্তে আওয়ামী লীগের ৩টি সংগঠনকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ও বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, 'আমরা ২ দলকে মোট ২৩টি শর্তসাপেক্ষে তাদের আবেদনকৃত জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছি। প্রথমত, আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগ ২ দলকেই চৌহদ্দি নির্ধারণ করে দিয়েছি। বিএনপির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, নাইটিঙ্গেলের মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতালের মোড় পর্যন্ত জায়গার মধ্যে তাদের সমাবেশ ও মাইকিং ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তারা মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে পশ্চিমের মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত তাদের সমাবেশ ও মাইকিং ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।'
'২ দলের ক্ষেত্রেই আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশ-অনুরোধ থাকবে, তারা কোনো লাঠিসোটা কোনোভাবেই সমাবেশে আনতে পারবে না, কোনো ব্যাগ বহন করতে পারবে না, রাষ্ট্রদোহী কোনো বক্তব্য প্রদর্শন করতে পারবে না, আমাদের যে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, এর বাইরে কোনো মাইক ব্যবহার করতে পারবে না। জনদুর্ভোগ এড়াতে তারা যতটা সম্ভব স্বেচ্ছাসেবক রাখবে। একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রত্যেক দলেই তাদের স্বেচ্ছাসেবক বা শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক রাখবে, যারা পুলিশকে সহযোগিতা করবে। ২ দলের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, কোনো দলই আইন-শৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার মতো কোনো কাজ করবে না। যদি যেকোনো দলের পক্ষ থেকেই এ ধরনের কোনো বিষয় দেখি, আমরা কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব' যোগ করেন ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপির ২৩ শর্ত হচ্ছে:
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রে উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমোদিত স্থানেই সমাবেশ/মহাসমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
৪. কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোনো ধরনের জনসমাগম করা যাবে না।
৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৬. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশ/মহাসমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশ/মহাসমাবেশে আগতদের হ্যান্ড হেন্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রোচিতভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশ/মহাসমাবেশস্থলে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৯. শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করতে হবে, কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
১১. আযান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
১২. ধর্মীয় অনুভূতির উপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১৩. সমাবেশ/মহাসমাবেশের কার্যক্রম ব্যতীত মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
১৪. সমাবেশ/মহাসমাবেশ শুরুর ২ ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে সমাবেশ/মহাসমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
১৬. কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
১৭. আইন-শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ ও বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।
১৯. উস্কানিমূলক কোনো বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
২০. কোনো ধরণের লাঠি-সোটা, ব্যানার-ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।
২১. আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবেন।
২২. উল্লেখিত শর্তাবলী যথাযথভাবে পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এই অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
বিএনপির মহাসমাবেশের জন্য পুলিশ হাসপাতাল ক্রসিং থেকে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সমাবেশের জন্য দক্ষিণ পূর্বে নাট্যমঞ্চ, দক্ষিণে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স, দক্ষিণ-পশ্চিমে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং ও উত্তর-পশ্চিমে মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত স্থানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
উভয় সমাবেশের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
বিএনপির চাওয়া ছিল আজ বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার। তবে, দিনটি 'কর্মদিবস' উল্লেখ করে এ দুই ভেন্যুতে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ডিএমপি।
পরে গতকাল জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে মির্জা ফখরুল জানিয়েছেন, দলটির মহাসমাবেশ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবার দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে এবং তাদের নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনেই তারা এই মহাসমাবেশ করতে চায়।
বিএনপির গতকালের এই ঘোষণার পর সমাবেশের তারিখ বদলের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগের ৩ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগও। তারাও গতকাল রাতে স্থান সম্পর্কিত জটিলতার কথা উল্লেখ করে বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবারে তাদের 'শান্তি সমাবেশ' করার কথা জানায়।
Comments