নাটোর: লাঠিসোঁটা হাতে কাউকে দেখেনি পুলিশ

আজ সোমবার ভোরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ। লাঠি দিয়ে তাকে পেটানোর বিষয়টি স্বীকার করেন এমপি শিমুলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা রাশিদুল ইসলাম কোয়েল।
বেসবল ব্যাট ও বাঁশের লাঠি হাতে পুলিশের গাড়ির কাছেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অবস্থান। ছবি: বুলবুল আহমেদ/স্টার

নাটোর শহরে জেলা বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ঠেকাতে সকাল থেকেই লাঠিসোঁটা হাতে মাঠে ছিলেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নাটোর সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলও বিএনপির 'নাশকতা' ঠেকাতে দলের কর্মীদের মাঠে রাখার কথা জানান।

আজ সোমবার ভোরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহিম নেওয়াজ। লাঠি দিয়ে তাকে পেটানোর বিষয়টি স্বীকার করেন এমপি শিমুলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা রাশিদুল ইসলাম কোয়েল।

এরপরেও পুলিশের ভাষ্য হলো, শহরে লাঠিসোঁটা হাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এমন কোনো মহড়া তাদের চোখে পড়েনি।

এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় দেখা যায়, নাটোর শহরের রেলগেট এলাকায় লাঠিসোঁটা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের অনুসারী যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এর নেতৃত্বে আছেন শিমুলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত যুবলীগ নেতা রাশিদুল ইসলাম কোয়েল।

এর কিছুক্ষণ আগে হাফরাস্তা এলাকায় জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া সেলিমের নেতৃত্বে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি গ্রুপকে মহড়া দিতে দেখা যায়। অল্প সময়ের মধ্যে সেখানে লাঠির বোঝা কাঁধে নিয়ে হাজির হয় আরেকটি গ্রুপ।

এরপর ওই ২ গ্রুপ এক হয়ে দলীয় স্লোগান দিতে দিতে হাজির হয় আলাইপুরের বিএনপি অফিসের সামনে। দলের কারও হাতে ছিল বেসবল ব্যাট, কারও হাতে কাঠের লাঠি। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

লাঠি হাতে মোটসাইকেলে মহড়া। ছবি: বুলবুল আহমেদ/স্টার

খানিক বাদে সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তারুল আলমের নেতৃত্বে বিএনপি অফিসের অদূরে মৌচাক মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে অবস্থান নেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের আরও কিছু কর্মী। তাদের হাতেও বেসবল ব্যাটের পাশাপাশি ছিল কাঠের তৈরি লাঠি।

এ সময় সেখানে যুবলীগ সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া, তার ছেলে ও নাটোর পৌরসভার কাউন্সিলর আকিব চৌধুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল সাকিব বাকি, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুম এবং সৈনিক লীগ সভাপতি আমিরুল ইসলাম জনিসহ আরও অনেক নেতাকে দেখা যায়।

এদিন ভোর ৫টার দিকে শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজের ওপর হামলা করেন যুবলীগ নেতা রাশিদুল ইসলাম কোয়েল ও তার সহযোগীরা, যাদের সকাল সাড়ে ৮টার দিকেও রেলগেট এলাকায় মহড়া দিতে দেখা যায়।

কোয়েল নিজেও হামলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'বিএনপির নৈরাজ্য প্রতিহত করার জন্য রাজপথে ছিলাম। রহিম নেওয়াজকে পিটিয়েছি। তার দুই পায়ে আঘাত করেছি লাঠি দিয়ে।'

এমন পরিস্থিতিতে দিনের কর্মসূচি বাতিল করার কথা জানিয়ে নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, 'বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে সকাল থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠিসোটা এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছে। কর্মসূচির চেয়ে নেতাকর্মীদের জীবনের গুরুত্ব বেশি। তাই কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।'

বিএনপিকে ঠেকাতে দলের নেতাকর্মীদের মাঠে রাখার কথাও স্বীকার করেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বিএনপি নাশকতা করার চিন্তা করেছিল, পরবর্তীতে আমি আমার দলীয় নেতাকর্মীকে মাঠে রেখেছি।'

বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে এভাবেই লাঠি হাতে অবস্থান নেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ছবি: বুলবুল আহমেদ/স্টার

তবে রহিম নেওয়াজের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন, 'ভোর ৫টার দিকের ঘটনা। ওই সময় আমাদের ডেপ্লয়মেন্ট হয় নাই। আমাদের ডেপ্লয়মেন্ট ছিল ৭টায়। তারপর থেকে কোন ঘটনা ঘটেনি।'

এ সময় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মহড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, 'এসবের কোনো আলামত আমি দেখিনি।'

তবে নিজের চোখে না দেখলেও ভিডিওতে অনেককে লাঠিসোঁটা নিয়ে চলতে দেখার কথা জানান নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শারমিনা নেলী। তিনি বলেন, 'লাঠিসোঁটা নিয়ে চলাচলের মতো অভিযোগের ক্ষেত্রে যদি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বা অন্য কোন ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে।'

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, 'বিষয়গুলো আমরা ভবিষ্যতে আরও নজরদারিতে রাখব।'

 

Comments