নির্বাচনী আমেজে নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ

নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে। জাতীয় পার্টিও এগিয়ে চলছে সমান তালে।

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ হিসেবে নয়, বরং এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ও সম্ভাব্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ২ আগস্ট রংপুরে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় থাকতে, নির্বাচনী এলাকার দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে এবং দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে বলেছেন।

এই নির্দেশনার দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ-৩ আসনে গত জুলাইয়ে দুই দিন অবস্থান করেছেন।

ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের প্রায় সব সদস্য আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিকে তারা পুরোপুরি মনোযোগী।

তিনি বলেন, 'আমরা নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছি। গণসংযোগ, সরকারের সাফল্য তুলে ধরা, যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করার জন্য তথ্য সংগ্রহ, সারা দেশে সমাবেশ, বিরোধ মিটিয়ে তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, ঘরে ঘরে যাওয়া, ভোটারদের আকৃষ্ট করা, নির্বাচনী ইশতেহারের খসড়া—সবই করছি।'

নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণ, দুটি নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং ভোট কেন্দ্রের খসড়া তালিকা তৈরির কাজ শেষ করেছে।

নির্বাচনী আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনীও করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান গতকাল রোববার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের সেপ্টেম্বরে আমাদের ঘোষিত রোডম্যাপের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য নিজস্ব পরিকল্পনা আছে।'

গতকাল কিশোরগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।

তিনি বলেন, 'নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ আমাদের ওপর নির্ভর করে না। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে দলগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। তবে আমরা নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করব।'

বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৯ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। এই ৯০ দিনের গণনা শুরু হবে ১ নভেম্বর থেকে।

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিশন নতুন দুটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিয়েছে এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেছে। এ ছাড়া, ১০টি নির্বাচনী এলাকা পুনর্গঠন করা হচ্ছে এবং ৪২ হাজার ৩৫০টি ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ৬৬টি স্থানীয় পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে অনুমোদিত পর্যবেক্ষকের সংখ্যা কম মনে হওয়ায় আগ্রহী আরও সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কমিশন।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের অনুমোদন দিতে কমিশন তাদের নীতি পরিবর্তন করছে এবং তা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

কমিশন ব্যালট পেপার, মনোনয়ন পত্র এবং অন্যান্য উপকরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, অমোচনীয় কালির কলম, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিলসহ নির্বাচনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার প্রক্রিয়া চলতি মাস থেকে শুরু হয়ে নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রচারণা

সরকারের অর্জন তুলে ধরে ক্ষমতাসীন দল তাদের ইশতেহার তৈরি করছে। নিজেদের অর্জন প্রচারের জন্য প্রতিটি জেলা শহরে কনসার্টের আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের প্রচারণা চালাতে এবং 'বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসন' তুলে ধরতে সারা দেশে টিম তৈরি করছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ উপযুক্ত প্রার্থী খুঁজে বের করতে জরিপ করেছে এবং এখন আরেকটি জরিপ চলছে। দলটি নিশ্চিত করতে চায় যে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী যেন দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন না করে। তবে, দলটি ডামি প্রার্থী প্রস্তুত রাখবে। কেননা, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে এই ডামি প্রার্থীদের মাধ্যমে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক দেখানো সম্ভব হবে।

দলটির শীর্ষ নেতারা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন, যেন তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়।

আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে আওয়ামী লীগের।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গতকাল বলেন, 'আমরা জেলা পর্যায় থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করছি। আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা চলছে, কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।'

আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার পর সারা দেশে নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রচারণা শুরু হবে।'

ভোটারদের আকৃষ্ট করতে নভেম্বরের আগে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ একজন বলেন, 'নভেম্বরের প্রথমার্ধে মন্ত্রিসভার অল্প কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে পারে।'

জাতীয় পার্টির প্রস্তুতি

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বলছে।

যেসব নির্বাচনী এলাকায় দলটির জনপ্রিয়তা কম বলে মনে করা হয়, সেখানে শক্তিশালী প্রার্থীর খোঁজে আছে দলটি।

দলের এক নেতা বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে সংসদে তাদের সদস্য সংখ্যা কম হলে জাতীয় পার্টি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা তৃণমূল কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে প্রাণবন্ত করতে চাই। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে এবং এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেব।'

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

3h ago