এখন শুধু চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষা: মির্জা ফখরুল

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেডআরএফ। 
গুলশানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'আমাদের অনেক সমস্যা আছে। আজকে যারা ক্ষমতাসীন তারা ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট। আর ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াইটা খুব সহজ নয়।'

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিএনপি গণতান্ত্রিকভাবে লড়াই করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখানে মৌলিক পার্থক্য হলো, অস্ত্র-শস্ত্র, রাষ্ট্র ক্ষমতা সবকিছুকে নিয়ে সে আক্রমণ করে। আর আমরা জনগণকে নিয়ে সেই আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা করি। এখানে আমি মনে করি আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেছি। আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো দেশের সমগ্র মানুষকে এক করতে পেরেছি। দেশের রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ (ডান-বাম) সবাইকে আমরা এক করতে পেরেছি। এখন শুধু চূড়ান্ত বিজয়ের অপেক্ষা।'

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) ২৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেডআরএফ। 

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী বলেন, 'আজকে দেশের রাজনীতি চরম সংকটে আছে। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে আমরা এখন সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছি। এই সংকট ও শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদেরকে দেশের মানুষ ও দল এবং আমরা যারা জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করি, তারা মোকাবিলা করছি। এসবকে মোকাবিলা করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।'

তিনি বলেন, 'আজকে শুধু দেশে নয়, বাইরের যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারাও কিন্তু আমাদের চাওয়ার ব্যাপারে একমত। এটা নিঃসন্দেহে আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে অর্জন করতে পেরেছি। এখন প্রয়োজন যারা দলের বাইরে থেকে কাজ করেন তারা এই বোধটাকে সাধারণ মানুষের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে আরও ঐক্যবদ্ধ করতে চেষ্টা করবেন। তবে আমরা আশাবাদী। প্রতিদিনই আমাদের সমর্থক বাড়ছে। আগে কর্মসূচি করতে গেলে কর্মীদের বেশি সক্রিয় হতে হতো। এখন কিন্তু সাধারণ মানুষ আগে আসছেন। আমি মনে করি যেসব নেতাকর্মী তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তার অবদান বৃথা যাবে না।'

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'জেডআরএফ ২৪ বছর ধরে যেসব কাজ করেছে সেগুলো সামনে আনতে হবে। এটার নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে উন্নতমানের বীজ, গবাদি পশু বিতরণসহ নানাবিধ সামাজিক কার্যক্রম করেছেন। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে প্রাধান্য দিয়ে কার্যক্রম করা উচিত। যদিও বিগত সময়ে দেশের দুঃখ-দুর্দশায় বিশেষ করে করোনা ভাইরাস, বন্যা দুর্গত মানুষের মাঝে অসাধারণ সেবামূলক কর্মকাণ্ড করেছে। সম্প্রতিকালে জেডআরএফ ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করেছে। এটা নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী কাজ। এই ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলার মাধ্যমে মেধাবী ও ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা সবার সামনে উঠে আসছে। যা জর্জ ওয়াশিংটন ফাউন্ডেশন, লিঙ্কন ফাউন্ডেশন, স্বামী বিবেকানন্দ ফাউন্ডেশন করে থাকে। তারা গবেষণামূলক কর্মকান্ডও করে থাকে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনকেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বেশি উদ্যোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন শুধু জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড করছে।'

ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খানের পরিচালনায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী, ২০১৩ সালে গুমের শিকার দারুস সালাম থানা ছাত্রদল সিনিয়র সহসভাপতি মো. রাশেদের ছোট ছেলে রিমন রাশেদ, বংশাল থানা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক মো. পারভেজে ছোট মেয়ে হৃদি, ২০১৮ সালে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো সিরাজগঞ্জ মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেরি বেগম, ২০২২ সালে মুন্সিগঞ্জের মোক্তারপুর ফেরিঘাটে পুলিশের গুলিতে আহত জাহাঙ্গীর মাতবর, ২০২২ সালে গুলিবিদ্ধ হয়ে চোখের কর্ণিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক এজিএস মো. আরিফ বিল্লাহ, ২০১৩ সালে গুম হওয়া তেজগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মো. কাউসারের মেয়ে মিমসহ কয়েকজন তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে জেডআরএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে সম্মিলিতি পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, জেডআরএফ'র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ডা. এ এইচ এস পারভেজ, অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, অধ্যাপক ড. আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মাহবুব আলম, অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম, ডা. এম এ সেলিম, কৃষিবিদ শফিউল আলম দিদার, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুল, অধ্যাপক ড. ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার, অধ্যাপক তোজাম্মেল হোসেন, অধ্যাপক আতাউর রহমান, আমিরুল ইসলাম কাগজী, ড. এমতাজ হোসেন, ড. আবু জাফর খানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Comments