সংলাপের সম্ভাবনা ক্ষীণ, গভীর সংকটে রাজনীতি

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান দলগুলো যদি তাদের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে অস্থিতিশীলতা ও সংঘর্ষ আরও বাড়বে। এতে সংকটে জর্জরিত দেশের অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নির্বাচন নিয়ে সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো সরকার পতনের আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছে।

এ অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

গত বুধবার জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপরই আবারও সংলাপের কথা নাকচ করে দিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সংলাপের সময় শেষ হয়ে গেছে।

তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো তফসিল প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে হরতাল ডেকেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান দলগুলো যদি তাদের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে অস্থিতিশীলতা ও সংঘর্ষ আরও বাড়বে। এতে সংকটে জর্জরিত দেশের অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এখনো আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে সংসদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নিজাম আহমেদ বলেন, 'যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হয়েছে। মনে হচ্ছে নির্বাচন একতরফা হবে। কিন্তু দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছালে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।'

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের সাবেক এই শিক্ষক আরও বলেন, 'নির্বাচনের তফসিল চিরন্তন কিছু নয়। দলগুলো রাজি হলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যেতে পারে।'

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যখন আলোচনার সুযোগ থাকে না, তখনই সহিংসতা হয়। এখন সংলাপই একমাত্র পথ।'

তফসিল ঘোষণার সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘাত এড়িয়ে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশকে অনুকূল করতে হবে।'

গতকাল এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমরা সংলাপের পক্ষে। ২০১৮ সালে (নির্বাচনের আগে) বিএনপির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দুবার সংলাপ করেছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে (বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে) ফোন করেছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে গালিগালাজ করেছেন।'

'এবার রাষ্ট্রপতি তাদের ডেকেছেন, নির্বাচন কমিশন ডেকেছে। তারা সাড়া দেয়নি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এখন সংলাপের সময় নেই,' বলেন তিনি।

এরপর বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, 'আসুন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে অংশ নিন। নির্বাচনের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। আমি বিএনপিকে বলছি, মত পরিবর্তন করে অংশগ্রহণ করুন।'

জাতীয় পার্টিও সংলাপের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, সরকার সংলাপের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সহিংসতা ও ভোট জালিয়াতির কারণে এবার অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আরও জোরদার হয়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন, 'নির্বাচনের তফসিল কোনো ইস্যু নয়। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যু। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।'

তিনি বলেন, 'ইসি এই তফসিল নিয়ে এগোলে এটি প্রহসনের নির্বাচন হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Workers rights vs corporate profits

How some actors gambled with workers’ rights to save corporate profits

The CSDDD is the result of years of campaigning by a large coalition of civil society groups who managed to shift the narrative around corporate abuse.

10h ago