রাজনীতি

‘বাঘে ধরলে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না’

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী ১৫-২০ দিন সারাদেশে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন শামীম ওসমান।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, যারা অপরাধ সংগঠিত করছে আর অপরাধের নির্দেশ দিচ্ছে, তারা ছাড় পাবে না। 

তিনি বলেন, 'আমি যদি বলি ধর বিএনপি, পাঁচ মিনিটের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিটা বাড়িতে হামলা হবে। কারা করবে, আমার কর্মীরা করবে। তাহলে দোষটা কার হবে, আমার না আমার কর্মীদের? আমার হবে। সুতরাং যারা অগ্নিসন্ত্রাসের নির্দেশ দিচ্ছেন, তারা ছাড় পাবেন না।'

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনে একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শামীম ওসমান। সংবাদ সম্মেলনে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বক্তব্য রাখেন তিনি। এসময় দলীয় অনুসারীরা তার পাশে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগামী ১৫-২০ দিন সারাদেশে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন শামীম ওসমান।

তিনি বলেন, 'বাঘে ধরলে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না। তিনি ঘুড্ডির সুতা ছাড়তে থাকেন, তারপর একসময় টান দেবেন। জনগণকে কষ্ট দিলে তিনি মানবেন না। ধ্বংসাত্মক কাজ যেন কেউ না করে। তাহলে আমরা কাউকে রক্ষা করতে পারব না। হিমালয় পর্বত নড়ে যাবে, কিন্তু শেখ হাসিনাকে নড়ানো অনেক কঠিন।'

তিনি বলেন, '২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ওপর অনেক অত্যাচার করা হয়েছে।'

ক্ষমতায় এসে প্রতিশোধ নেননি বলেও মন্তব্য করেন শামীম ওসমান।

২০০১ সালে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে নির্বাচনের ফলাফল বদলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপি সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের বিষোদগার করেন শামীম ওসমান।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিনের প্রার্থী হওয়া নিয়ে গুঞ্জন চলছে। তার নামে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহও করা হয়েছে। যদিও এই বিষয়ে গিয়াস উদ্দিনের ভাষ্য, তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। দলীয়ভাবে তারা এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে তার নামে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।

নিজের বক্তব্যে একাধিকার গিয়াস উদ্দিনের প্রসঙ্গ আসা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, 'তাকে আসলে আমি প্রেডিক্ট করতে পারি না। প্রেডিক্ট করতে হলে একটা মানুষের আদর্শ থাকতে হয়। আমরা চাই রাজনীতিটা রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকুক।'

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া শামীম ওসমান সাংবাদিকদের সামনে নিজের নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

'বাস পোড়ানোর আন্দোলনে' কয়েকজন সাংবাদিক জড়িত আছেন বলেও অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

তিনি বলেন, 'গাড়ি-বাস পোড়ানোর আন্দোলনের সঙ্গে আপনাদের দুই-একজন সাংবাদিকও জড়িত আছেন। যাদের বাসায় অনেক কিছু রাখা হচ্ছে। আমরা কিন্তু সব খবর রাখি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা আশা করি আমার মেসেজটা বুঝতে পেরেছেন।'

এক প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান জানান, তার বিশ্বাস বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে।

তিনি বলেন, 'নিশ্চিত থাকেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। বিএনপি যদি স্টুপিড না হয়ে থাকে তাহলে তারা নির্বাচনে আসবে। আর নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।'

ইউরোপের অধিকাংশ দেশে ৩০ শতাংশ ভোট পড়ে মন্তব্য করে শামীম ওসমান বলেন, 'আমরা জনগণকে বিশেষ করে নতুন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত করব। অন্তত ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট কাস্ট হবে। গ্যারান্টি দিতে পারি, অন্তত আমার এলাকায় এক সেকেন্ডের জন্যও ভোটে কারচুপি হতে দেবো না।'

তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন সমাবেশ-মিছিলে ভোট প্রার্থনার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি এখনো প্রার্থী না। যাচাই-বাছাইয়ের পর আমি একজন প্রার্থী হব। এর আগে চাইলে আমি ভোট চেয়ে ভোটারের বাড়িতে ভাত খেয়েও আসতে পারি।'

নিজের আসনে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না বলে আত্মবিশ্বাসী শামীম ওসমান। তিনি বলেন, 'যারা বিদ্রোহী প্রার্থী বানাতে চেয়েছিলেন, তারা সফল হবেন না। কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে আমরা তো স্লোগান দিয়েছি- খেলা হবে।'

Comments