নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনের জাপার সঙ্গে সমঝোতা, থাকবে না নৌকার প্রার্থী: কাদের

‘আমরা যেসব আসনগুলোতে সমঝোতায় পৌঁছাব, সেখানে নৌকা তো আমাদের প্রত্যাহার করতে হবে নীতিগতভাবে।’

জাতীয় পার্টিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন ছাড়বে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি আরও জানান, এসব আসন থেকে নৌকা মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হবে।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের উদ্দেশে কাদের বলেন, 'আপনি একটা দেশ দেখান পৃথিবীর, যে দেশে সরকার পদত্যাগ করে নির্বাচন হয়। ক্ষমতায় ক্ষমতাসীন সরকার থাকবে না! এটা তো কোথাও নেই। আপনি কোথা থেকে এটা আবিষ্কার করলেন?'

বিজয়ের দিনকে উপহাস করে বিএনপি নেতা পরাজয় দিবস বলছে উল্লেখ করে কাদের বলেন, 'পরাজয় তো আপনাদের আর জামায়াতের। একাত্তরের পরাজয় তো আপনাদের। ১৬ ডিসেম্বর আপনাদের পরাজয় দিবস। পাকিস্তানের যারা দোসর তাদের পরাজয়। মুক্তিযুদ্ধে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য এটা বিজয় দিবস।'

তিনি বলেন, 'তারা মানুষের জন্য রাজনীতি করে না। গণতন্ত্রে তারা বিশ্বাস করে না। তাদের গণতন্ত্রের ইতিহাস আমরা জানি; ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন, জেনারেল জিয়ার হ্যাঁ-না ভোট, এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার, ঢাকা-১০ এখানকার ফার্সিকাল ইলেকশন, মাগুরার প্রহসনমূলক নির্বাচন এগুলো তো বিএনপিরই সৃষ্টি! বিএনপি আবার সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে কোন মুখে! তাদের কোন নির্বাচন তারা সুষ্ঠু করেছেন?

'এই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারই শান্তিপূর্ণভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। আর কেউ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এটাই আমাদের ইতিহাস,' যোগ করেন তিনি।

আজকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। আপনারা যাদের মনোনয়ন দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে পাঁচ জনের মতো প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে, এর বাইরে আর কতটি আসনে আপনারা প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমরা যতটা নেব, আমাদের সভাপতি চিঠির মাধ্যমে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। কোনো অসুবিধা নেই। সেটা আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে জেনেছি।'

এ সময় বিকেল ৪টার পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ জানান। কাদের বলেন, '৪টার মধ্যে সব চূড়ান্ত হয়ে যাবে। চার ঘণ্টা অপেক্ষা করবেন না! ধৈর্য ধরুন।'

জাতীয় পার্টির সঙ্গে আপনাদের আলোচনা চলছে। শোনা যাচ্ছে আপনারা ২৬টির মতো আসন ছাড়তে রাজি হয়েছেন। আসলে আলোচনা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে কাদের বলেন, 'তাদের সঙ্গে সমঝোতা আমাদের আছে। এখানে কোনো প্রকার অশোভন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। আমরা বসেই আলোচনা করেছি এবং শুধুমাত্র ভাগাভাগির বিষয় নয়, বিএনপি নির্বাচন বর্জন-প্রতিরোধ করার যে ডাক দিয়েছে, সবার মধ্যে সমন্বয়-ঐক্য থাকা দরকার যারা নির্বাচন করবে—এসব নিয়েও আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। প্রার্থিতার বিষয়টা আজ বিকেল ৪টায় পরিষ্কার হয়ে যাবে।'

তিনি বলেন, 'চার ঘণ্টার মধ্যে রদবদল হতে পারে যদি হয় তখন তো আমার কথার কোনো মূল্য থাকবে না। আমি যতটুকু জানি, আমাদের পক্ষ থেকে আমরা একটা নির্দিষ্ট সংখ্যা; আপস-মীমাংসা বা সমঝোতায় পৌঁছতে পারি সে রকম একটা ধারণা জাতীয় পার্টিকে আমরা দিয়েছি।

'জাতীয় পার্টির নিজস্ব চাওয়া আছে। তারা তো চাইবে আমাদের কাছে, কাজেই চাওয়াটা বড়ই হতে পারে। চাওয়া তো কারও ছোট হয় না কিন্তু আমাদেরও সামর্থ্য কতটা আছে সেটা আবার আমরা যখন বসি তখন আমাদেরও ভাবতে হয়। আমাদেরও সমন্বয়ের ব্যাপার আছে; বিরাট পার্টি। পার্টি কতটুকু দিতে পারবে সেটা আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের বিষয়,' বলেন কাদের।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা যেসব আসনগুলোতে সমঝোতায় পৌঁছাব, সেখানে নৌকা তো আমাদের প্রত্যাহার করতে হবে নীতিগতভাবে।'

শরিকদের কতগুলো আসন দেওয়া হবে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'সেটা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে।'

আপনারা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের কথা বলছেন। আসন সমন্বয় করে নৌকার প্রার্থী তুলে নেওয়া হচ্ছে, তাহলে জাতীয় পার্টিকে তো আগেই জয়ের নিশ্চয়তা দেওয়া হলো—গণমাধ্যমকর্মী দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, 'নৌকা প্রার্থী তুলে নিলেই কি জয় হবে? বাংলাদেশে এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী কত? এরা কি প্রতিদ্বন্দ্বী না? নৌকা না থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। অন্যান্য আরও দল আছে। ২৮টি দল, আওয়ামী লীগ তো একটা দল।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার এখন পর্যন্ত মনে হয় না জাতীয় পার্টি সরে যাবে। তারা নির্বাচন করবে এই মর্মে তাদের সিদ্ধান্ত আছে। তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে এখন পর্যন্ত আমার কাছে সেই তথ্য নেই।'

নির্বাচনী সহিংসতা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, 'নির্বাচন, টুকটাক দুএকটা ঘটনা ঘটতেই পারে। এই দেশের ইতিহাস সব নির্বাচনে কিছু না কিছু তো ছোটখাটো ঝামেলা হয়। এটাতে সামগ্রিকভাবে আশঙ্কা করার কী আছে? আমাদের কোনো শঙ্কা নেই। কোনো উদ্বেগ নেই। আমরা নির্ভীক চিত্তে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যতই বাধা দেবে, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে না। এটা আমাদের অঙ্গীকার।'

Comments

The Daily Star  | English

Public medical colleges: 86 doctors, 136 students punished since August 5

Over the last two months, at least 86 physicians and 136 students in eight public medical colleges and hospitals across the country have faced different punitive actions on various allegations, including “taking a stance against” the quota reform movement.

10h ago