জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাত জনগণের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে: সিপিবি

‘এই ভুলনীতি ও দুর্নীতির কারণে আজ জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাত অর্থনীতিতে ও জনগণের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।'
সিপিবি
ছবি: সংগৃহীত

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের গালগল্প এমনই জায়গায় পৌঁছেছে যে আজ বলা হচ্ছে, নিয়মিত লোডশেডিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন। 

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, 'সরকারের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ নিয়ে নীতি, যাকে আমরা ভুলনীতি বলে অভিহিত করি। এই ভুলনীতি ও দুর্নীতির কারণে আজ জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাত অর্থনীতিতে ও জনগণের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। এই কাঁটা উপড়ে ফেলার পরিবর্তে জনগণকেই কাঁটায় বিদ্ধ করার নীতি নিয়েছে সরকার। তাই তো প্রকৃত আয় কমে যাওয়া সাধারণ মানুষের কাঁধে আবারও এই মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপানো হচ্ছে।'

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম যে প্রধানত গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভর করেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। সরকার সে পথে না হেঁটে কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও কমিশনভোগীদের সুবিধা দেওয়ার জন্য আমদানি নির্ভর জ্বালানি দিয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদনের নীতি গ্রহণ করেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও কেন্দ্র বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এদের দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে।'

তিনি অবিলম্বে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও বিদ্যুতের ভুলনীতি ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানান।

সমাবেশে নেতারা আগামী ৩ মার্চ থেকে সপ্তাহব্যাপী সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর মধ্যে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা ডা. জয়দীপ ভট্টাচার্য, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের নেতা শামীম ইমাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির আব্দুল আলী ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির আমেনা আক্তার। সভা পরিচালনা করেন সিপিবি নেতা আনোয়ার হোসেন রেজা।

বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, 'গ্যাস ও কয়লার বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ও ফার্নেস ওয়েলের মাধ্যমে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচের ফারাক অনেক। সরকার ফার্নেস ওয়েলে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেশি দেখাচ্ছে। জনগণের মতামত শুনে এই খাত পরিচালিত করলে আজ দুরাবস্থায় পড়তে হতো না। এই দুরাবস্থার দায় জনগণ নেবে না।'

জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, 'সরকার বিদেশের পাচারকৃত টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়নি। কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে খরচ বাড়ানো হয়েছে। আজ এই ব্যয় জনগণের কাঁধে চাপানোর  প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে।'

শামীম ইমাম বলেন, 'বিনা ভোটের নির্বাচিত সরকার জনস্বার্থে ভূমিকা রাখছে না। এটা তার আরেক প্রমাণ। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হলে সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষের জীবন আরও কষ্টকর হবে।'

আব্দুল আলী বলেন, 'সরকার গুটিকয়েক ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করছে আর সাধারণ জনগণের পেটে লাথি মারছে।'

সমাবেশে বক্তারা গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশে পুলিশি হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, জনগণের আন্দোলন দমনের এ ধরনের নিপীড়নমূলক পথ থেকে সরকার সরে না আসলে জনগণই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

সমাবেশ থেকে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সংগঠক মো. নাজমুল হাসানকে গতকাল গাবতলী বাসস্ট্যন্ড এলাকা থেকে অপহরণের খবরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে তাকে উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের নেতা ডা. হারুন-অর-রশিদ, বাসদ মার্কসবাদীর সীমা দত্তসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব-তোপখানা ঘুরে পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আজ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

Comments