এই দেশে একজনের দোষ আরেক জনের ওপর চাপানোর প্রবণতা আছে: প্রধানমন্ত্রী
এই দেশে কোনো একটা ঘটনা ঘটানোর পর একজনের দোষ আরেক জনের ওপর চাপানোর প্রবণতা আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আধুনিক প্রযুক্তির ফলে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা সহজ হয়েছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে কুর্মিটোলা র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে, কিছু মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগও আছে। সব থেকে দুঃখের বিষয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের দেশে আমরা দেখি, আমাদের বিরোধী দল নামে সংগঠন, তারাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। আমরা দেখেছি ২০১৩ সালে তাদের ভূমিকা, কীভাবে অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষকে হত্যা করেছে। ট্রাকে ছেলেকে বসিয়ে রেখে বাবা বাইরে গেছে, এসে দেখে ট্রাকসহ ছেলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে আছে। চলন্ত বাসে আগুন দেওয়া, পরিবারসহ সেখানে নিহত হয়েছে। পুলিশকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে হত্যা করা, গাড়িতে আগুন দেওয়া, পুলিশ হাসপাতালে আক্রমণ করা, অ্যাম্বুলেন্সে রোগী যাচ্ছে সেখানে বাধা দেওয়া, চিফ জাস্টিসের বাড়িতে আক্রমণ, জাজেস কোয়ার্টারে আক্রমণ; এই ধরনের নানা ঘটনা—ট্রেনে আগুন, যেখানে মা আর শিশু সন্তান পুড়ে মারা যায়। এই ধরনের বীভৎস ঘটনা আমরা ঘটাতে দেখেছি। বেশি দিন আগের কথা না, ২০২৩ সালে।'
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'এই ধরনের ঘটনাগুলো মোকাবিলা করা এবং আসামি, যারা ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে সেগুলোকে গ্রেপ্তার করা, এ ক্ষেত্রে আমি দেখেছি, র্যাব সিসিটিভি ফুটেজ, তার থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাও যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। যার মাধ্যমে এই সমস্ত ফুটেজগুলো জনসম্মুখে চলে এসেছে। নইলে এই দেশে কোনো একটা ঘটনা ঘটানোর পর একজনের দোষ আরেক জনের ওপর চাপানোর একটা প্রবণতা আছে।
'২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা যখন আমাদের ওপর করা হলো, তখন আমি বিরোধী দলের নেতা। তখন দেখা গেল, বাংলাদেশের যিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি আমার ওপরই দোষ দিচ্ছেন যে, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে নিজেই নিজেকে মেরেছি। মনে হয় যেন আমি আত্মহত্যা করতে গেছি। এই ধরনের কথা রটিয়ে দেওয়া হয়েছি। ঠিক এইভাবে ২৮ অক্টোবর যখন আক্রমণ করা হয় এবং এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হয়, জ্বালাও-পোড়াও করা হয়, এই ঘটনাগুলো তারা অন্যের ওপর চাপাতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এখন আধুনিক প্রযুক্তি আছে, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সত্যিকার তথ্যগুলো বের হয় এবং যথাযথ লোকগুলোকে শনাক্ত করতে খুব সুবিধা হয়েছে। যার ফলে সঙ্গে সঙ্গে এই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা সহজ হয়ে গেছে,' বলেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা নির্বাচন করেছি। এই নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা ছিল। এর পূর্বে আমি জানি কোনো একটা সময়ে একটি বড় দেশ আমাদের ওপর হঠাৎ স্যাংশন দিলো, বিশেষ করে র্যাবের ডিজিসহ সেই সময় র্যাবে কর্মরত অনেকের ওপর স্যাংশন দেওয়া হলো। সেখানে আমার প্রশ্ন ছিল, যারা আমাদের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, জলদস্যু, বনদস্যু, এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা বা মানুষের অধিকার সংরক্ষণে যারা কাজ করেছে, তাদের ওপর কীভাবে স্যাংশন আসে? তাদের অপরাধটা কী আর কেউ যদি অপরাধ করে, তাহলে কেউ তো আইনের ঊর্ধ্বে নয়! সে যে কোনো সংস্থার লোকই হোক, তাকে তো আমরা আইনের আওতায় আনি এবং আমরা তার বিচারও করেছি। বিচার হচ্ছে, হবে এটা স্বাভাবিক। ভবিষ্যতেও হবে। যার যার কর্তব্য পালন যথাযথভাবে করছে কি না সেটা দেখার কথা। কিন্তু আমাদের সংস্থা দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য যখন কোনো অপরাধী শনাক্ত করবে, ধরবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সে জন্য আরেকটি দেশ এসে স্যাংশন দেবে এটা আমাদের কাছে কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।'
পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, আমি অন্তত এটুকু বলতে পারি, এবারের নির্বাচন সব থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জনগণ ভোট দিতে পেরেছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'আমি জানি যে, বাংলাদেশের এই নির্বাচনে হয়তো সকলে খুশি হতে পারেনি। খুশি কারা হতে পারেনি? যারা চায়নি কোনো নির্বাচন হোক, যারা চায়নি এখানে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক। তারা হয়তো অখুশি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এবং আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ-সংস্থা, তারা সকলেই আনন্দিত। বেশিরভাগ, সকলের কাছ থেকে একটা অভিনন্দনপত্র আমরা পেয়েছি এই নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে হওয়ার জন্য ও আবার সরকার গঠন করার জন্য।'
Comments