‘আ. লীগ নেতাকর্মীরা ভয়ংকর নারী নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে’

রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বরই কখনো খেজুরের ‘ডামি’ হতে পারে না।
রুহুল কবির রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'গত ১৬ বছরের কুশাসনে সবচেয়ে বেশি লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়েছেন নারীরা।' 

আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, 'আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস এমন এক সময় পালিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশে নারীরা ঘরে-বাইরে-কর্মস্থলে সর্বত্রই নির্যাতিত-নিপীড়িত-লাঞ্ছিত-খুনের শিকার হচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হাতে। কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার গত ১৬ বছরের কুশাসনে সবচেয়ে বেশি লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছেন নারীরা।' 

তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সারাদেশে ভয়ংকর নারী নিপীড়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতার আশ্রয়, প্ররোচনায় এদের অসভ্যতা রুচিহীন বর্বর শক্তিতে পরিণত করেছে। বর্তমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে শুধু রাত-বিরাতে নয়, দিনে দুপুরে পথ চলতে নারীসহ সাধারণ মানুষের গা ছমছম করে।'

'নবধারার আওয়ামী বাকশাল রাজ্যে নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার মাত্রায় এখনো কোন ছেদ যতি টানা হয়নি, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তা দিন দিন বেড়েই চলেছে,' যোগ করেন তিনি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) সর্বশেষ পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে রিজভী বলেন, 'দেশে গত ১৩ মাসে এক হাজারের বেশি নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। গত বছর নারীর প্রতি সহিংসতা ছিল উদ্বেগজনক বিষয়। এ সময়ে সারাদেশে ৫৭৩ জন নারী ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে কোনো কোনো নারীকে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২২ পুরুষ। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আটজন নারী-পুরুষ খুন হন।' 

তিনি বলেন, 'দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন মহীয়সী নারী, যিনি অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে বারবার মুক্ত করেছেন। যিনি বাংলাদেশ নারী সমাজের অগ্রগতিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। অথচ তাকে সীমাহীন হয়রানি ও হেনস্তা করার জন্য অন্যায় ও বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। সব মৌলিক মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকারকে পদদলিত করে তাকে সুচিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।'

'চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে বিনা ভোটের ডামি সরকার। পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার প্রধান টার্গেট এখন দেশনেত্রী। অন্যায়ভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রীকেই নয় বরং বাংলাদেশের কণ্ঠকেই রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনা নারী অধিকারের কথা বললেও, আদতে সব ভাঁওতাবাজি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকলে ভয় প্রাধান্য লাভ করে,' বলেন তিনি।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, 'শেখ হাসিনার চলমান দুঃশাসনে কারও রেহাই নেই। আপনি রাজনীতি করেন কিংবা না করেন, কেউই নিরাপদ নন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহারও রেহাই মেলেনি। কারণ শেখ হাসিনার ক্ষমতার নাটাই দেশের জনগণ কিংবা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে নয়। শেখ হাসিনার ক্ষমতার নাটাই বাংলাদেশের সীমানার বাইরে। সুতরাং, আপনার কিংবা আপনাদের স্বার্থ দেখা তাবেদার শেখ হাসিনার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকি তাবেদার সরকার আপনার স্বার্থ দেখার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে।'

'সরকার কাউকে মানুষ বলেই গণ্য করছে না' মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'শেখ হাসিনার থাবা থেকে বর্তমানে একজন নোবেল লরিয়েটেরও রেহাই মিলছে না। এক যুগের বেশি পার হলেও এখনো সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়নি। গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর একটি হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত কিংবা বিচার হয়নি। দেশে সংঘটিত একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনারও বিচার হয়নি। ব্যাংকখেকোদের বিচার হয়নি। অথচ ঠুনকো অভিযোগে একজন নোবেল লোরিয়েটকে প্রায় প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া, ড. ইউনূস, শহিদুল আলম, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ এবং ভিন্নমতের মানুষের প্রতি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্মম আচরণ দেখেও এখনো যারা না দেখার ভান করছেন কিংবা এখনো যারা শেখ হাসিনার অবিচার-অনাচারের বিরুদ্ধে সাধ্যমতো প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন না আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি চুপ করে থেকে কেউ নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবেন না।'

তিনি বলেন, 'দেশের সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা, এমনকি বিজিবি সদস্য মেরে ফেললেও বাংলাদেশের প্রতিবাদ করার সাহস নেই। বরং, দিন দুয়েক আগে "ডামি প্রধানমন্ত্রীর ডামি উপদেষ্টা"র একটি বক্তব্য রীতিমতো বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য উদ্বেগজনক। তিনি বলেছেন, সীমান্তে মৃত্যুর ঘটনা হত্যাকাণ্ড নয়, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নাকি দুর্ঘটনা।'

রিজভি বলেন, 'দেশে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিদিন বেড়েই চলছে চাল-ডাল-লবণ-তেল-চিনি-পেঁয়াজ-রসুন, তরি-তরকারির দাম। এমনকি রোজাদারদের জন্য ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দাম পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার "ডামি সরকার" বলছে খেজুর নাকি বিলাসী পণ্য। এই অজুহাতে খেজুর আমদানির ওপর অস্বাভাবিক হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।'

'সাধারণ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বর্তমানে দেশে ১১০ টাকা কেজি দরে আমদানি করা খেজুরের শুল্ক দিতে হয় ১৪০ টাকা। ১২০ টাকা কেজি দরে আমদানি করা খেজুরের শুল্ক দিতে ২১০ টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, খেজুরের ওপর এমন অস্বাভাবিক হারে শুল্ক আরোপ করলে বাজারে খেজুরের দাম কমবে কী করে? সুতরাং, অন্তত রমজান মাসের জন্য হলেও খেজুর আমদানির ওপর শুল্ক মওকুফ সময়ের দাবি,' যোগ করেন তিনি।

রিজভী আরও বলেন, 'দুর্নীতিবাজ সরকার তথাকথিত মেগা প্রজেক্ট কিংবা ব্যক্তি বিশেষের "মূর্তি কিংবা ভাবমূর্তি"' প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বছরের পর বছর ধরে অকারণে রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা খরচ করেই চলেছে। দুর্নীতির মেগা প্রজেক্ট কুইক রেন্টালের মাধ্যমে ভর্তুকি কিংবা ক্যাপাসিটি চার্জের নামে দলীয় দুর্নীতিবাজদেরকে কমপক্ষে ১ লাখ কোটি টাকা দিয়েছে। অথচ, দেশের কোটি কোটি মুসলমানদের ইফতারের জন্য খেজুর আমদানির উপর ভর্তুকি দূরে থাক উল্টো খেজুর আমদানির উপর অস্বাভাবিক হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।'

'মাংসের বদলে কাঁঠাল, পেঁয়াজ ছাড়া তরকারি, পেঁপে দিয়ে বেগুনি বানানোর হাস্যকর পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা জনগণের সঙ্গে মশকরা করেছেন। আওয়ামী লীগের "ডামি" মন্ত্রী-এমপিরা জানে না সব জিনিসের "ডামি" হয়না। 'বরই' কখনো 'খেজুরের ডামি' হতে পারেনা। দেশের জনগণ বিশ্বাস করে "ডামি সরকার", অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং পরিকল্পিতভাবেই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং সামাজিক রীতি ও মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments