এখন বিএনপির নেতাকর্মীরাও বলছে আন্দোলন ভুয়া: কাদের
লন্ডন থেকে যার হুকুমে বিএনপি চলে, তার যে ফ্রি স্টাইল নেতৃত্ব এখন বিএনপি নেতাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এখন বিএনপির নেতাকর্মীরাও বলছে আন্দোলন ভুয়া।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপন ও সাংগঠনিক বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালনে বড় দলগুলোর কোনো কর্মসূচি নেই উল্লেখ করে কাদের বলেন, 'আজকে বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে যারা বিতর্কের সৃষ্টি করছে, এসব দিবস পালন করে কঠিন জবাব দিতে হবে। যারা ৭ মার্চ, ৭ জুন, ১৭ এপ্রিল পালন করে না, যারা এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ভাবে পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো কোনো ঘটনা। যারা এখনো ভাবে যে একজন বংশীবাদক হঠাৎ করে বাঁশিতে ফুঁ দিলেন, অমনি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেল। এমন একজনকে ঘোষক বানানো হয়েছে, অথচ ইতিহাস বলে, অন্য যুক্তি দেওয়ার দরকার নেই। আমাদের কাছে একটাই সত্যি, ঘোষণা দেওয়ার ম্যানডেট জনগণ থেকে পেয়েছিলেন শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু।'
গণতন্ত্র হত্যাকারীরা গণতন্ত্রের নামে মায়া কান্না কাঁদে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'পঁচাত্তরের ঘটনায় নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় হন্তারক তারা।'
তিনি বলেন, 'শুনলে হাসি পায়, আজকে বিএনপি যখন বলে গণতন্ত্র নেই। অথচ এই বিএনপি ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন করেছে। এক কোটি ভুয়া ভোটার তালিকা করেছে।'
কাদের বলেন, 'এখনো আমি বলতে পারি, আওয়ামী লীগ একমাত্র রাজনৈতিক দল, যে দল দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা করে। বিএনপির গণতন্ত্র চর্চা নেই। তাদের সম্মেলনের মধ্যে আমি তিনবার সেক্রেটারি হয়ে গেছি। মির্জা ফখরুলের টার্ম এখনো শেষ হয় না।'
বিএনপির নির্যাতিত ৮০ শতাংশ নেতাকর্মীর তালিকা চেয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আর মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করবেন না। ৮০ শতাংশ নেতাকর্মী নির্যাতিত হচ্ছে এবং এটা বলতে বলতে ফখরুল প্রায়ই কেঁদে ফেলেন।
'আসল কথা হচ্ছে, লন্ডন থেকে যার হুকুমে বিএনপি চলে তার যে ফ্রি স্টাইল নেতৃত্ব, এই নেতৃত্ব এখন বিএনপি নেতাদের নেমে নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিএনপি এখন বুঝতে শুরু করেছে যে, তারেক রহমান যতদিন নেতৃত্বে আছে, ততদিন বিএনপি নামক দলটির রাজনীতি ভুলের চোরাবালিতে আটকে থাকবে এবং ভুলের চোরাবালিতে তারা আটকে আছে। এখান থেকে তারা বের হতে পারবে না,' বলেন তিনি।
নির্বাচনবিরোধী কোনো দল এ দেশে রাজনীতি করবে রিমোট কন্ট্রোল নেতৃত্বের অধীনে সেটা কি হয়—প্রশ্ন রেখে কাদের বলেন, 'সাহস থাকে, দেশে আসেন। দেশে এসে রাজনীতি করুন। জেলে যাওয়ার সাহস সঞ্চার করুন। আজকে লন্ডনে বসে আন্দোলনের ডাক দেবেন, সে আন্দোলনে আর কেউ সাড়া দিক, জনগণ দেবে না। এখন বিএনপির নেতাকর্মীরাও বলছে আন্দোলন ভুয়া। এ আন্দোলনকে তারাও ভুয়া আন্দোলন বলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এই বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ, রমজানকে ঘিরে রাজনীতি করে ব্যর্থ, ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েও ব্যর্থ। সেটাও কেউ শোনে না। বিএনপি নেতাদের শোবার ঘরে, রান্না ঘরে গেলেই ভারত।'
অর্থনৈতিক অবস্থা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, 'বিশ্ব পরিস্থিতিই খারাপ, আমরা ভালো হবো কেমন করে! আমাদের অর্থনীতিতে সংকট একেবারে কেটে গেছে এ কথা যেমন বলা ঠিক না, অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা যারা বলেন, সেটাও ঠিক না।'
প্রবৃদ্ধি সাড়ে পাঁচ ভাগ নিয়ে খুশি থাকতে হবে জানিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমরা ভয়াবহ কোনো সংকটে পড়ব না।'
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, 'উপজেলা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কেউ চেষ্টা করবেন না। কেউ প্রার্থী হতে চাইলে হবে। নৌকা কোনোদিনও ডুববে না। নৌকা এই সংকটের নির্বাচনেও; বিএনপি নির্বাচন করেনি, তারপরও ৪২ দশমিক আট শতাংশ ভোটার উপস্থিতি। এটা সন্তোষজনক একটা টার্ন-আউট। কাজেই নৌকা আছে, নৌকা কোনোদিনও ডুববে না।'
এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপকমিটির উদ্যোগে স্বাস্থ্য সহায়তা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি বড় ও আধুনিক হাসপাতালের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, 'আজকে কথায় কথায় ছুটতে হয় বাইরে। আমরা বড়, আধুনিক হাসপাতাল করার একটা প্রস্তাব পেয়েছি। প্রস্তাবটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে।
'আমাদের একটা বড়, আধুনিক হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। ক্যানসারের জন্য, কিডনির জন্য, কিছু কিছু জটিল রোগ আছে; আমাদের বাইরে দৌড়াতে হয়,' বলেন তিনি।
এ সময় নিজের অসুস্থতার স্মৃতিচারণ করেন ওবায়দুল কাদের।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ওবায়দুল কাদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হন।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর এনজিওগ্রাম করে তার করোনারি ধমনিতে তিনটি ব্লক পান চিকিৎসক। যার মধ্যে একটি অপসারণও করা হয়। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে দুই মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা নেন কাদের।
Comments