খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপির ৩ দিনের কর্মসূচি

‘আমরা আশা করি, দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে আপামর জনসাধারণ একাত্ম হবেন।’
ছবি: সংগৃহীত

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায় নিতে প্রথম দফায় তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

আজ বুধবার দুপুরে দলের অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, 'বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে আরও বেগবান করা হবে। আমরা এই মুক্তির আন্দোলনকে একটা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমাদের আজকের যৌথ সভায় কয়েকটি সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।'

'এই সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আছে যে, আগামী ২৯ জুন শনিবার বিকেল তিনটায় নয়াপল্টনের অফিসের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে। ১ জুলাই সোমবার সারাদেশে মহানগরগুলোতে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ৩ জুলাই সারাদেশের জেলা সদরে তার মুক্তির দাবিতে সমাবেশ হবে।'

গত ২৩ জুন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হৃৎপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়েছে। তার এমন শারীরিক অবস্থায় মুক্তি আন্দোলন কেন করতে যাচ্ছেন, সেই ব্যাখ্যা দেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, 'আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আপনারা জানেন, কিছু দিন পরপরই তাকে হাসপাতালে আসতে হয়। এবার যে তিনি এসেছিলেন আল্লাহর অশেষ রহমত যে তাকে আমরা ফিরে পেয়েছি। তার ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কঠিন ছিল, যদি ঠিক সময়ের মধ্যে ডাক্তার চিকিৎসা দিতে না পারতেন। এই অবস্থার মধ্যে আমাদের চিকিৎসকরা বারবার বলেছেন, তাকে বাইরে উন্নত কেন্দ্রে নেওয়া উচিত। কিন্তু সরকার তাকে যেতে দিচ্ছে না। তারা পরিকল্পিতভাবে আদালতকে ব্যবহার করে সেটা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এজন্য বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন জোরদার করার।'

এই আন্দোলন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করা হবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের এই দাবি জনগণকে সঙ্গে নিয়েই করছি। আমরা জনগণের কাছে প্রত্যাশা করব, জনগণ তাদের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার প্রাণ রক্ষা করা, তাকে মুক্ত বাতাসে রাজনীতি করার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করবে এবং তারা আন্দোলনের ঝাঁপিয়ে পড়বে।'

'আমরা আশা করি, দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে আপামর জনসাধারণ একাত্ম হবেন। আমাদের বিশ্বাস আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, আপনারা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছেন তারা অনেকে বিবৃতি দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তার মুক্তির কথা বলেছেন।'

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপিসহ দলের অঙ্গসংগঠনের এই যৌথ সভা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'দেশনেত্রীকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সরকার আটক করে রেখেছে। এটা আইনবিরোধী, এটা সংবিধানবিরোধী। আপনার যেকোনো সাধারণ একজন মানুষের যদি পাঁচ বছরের সাজা হয়, সে সঙ্গে সঙ্গে জামিন পেয়ে যায়।'

'আপনি ইতোমধ্যে দেখেছেন, আমাদের দলেরই নেতারা অনেকে আছেন যাদের ১৩/১৪ বছর সাজা হয়েছে, তাদেরকে জামিন দেওয়া হয়েছে এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের এই ধরনের সাজা হওয়ার পরে তাদের প্রত্যেকটা মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে… তাদের মধ্যে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন, এমপি নমিনেশন পেয়েছেনে। তাহলে শুধুমাত্র দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারেই এটার মানে হচ্ছে এরা (সরকার) বিধানটাকে প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন। আপনি জামিন দিতে পারবেন না এরকম কোনো বিধান নাই।'

তিনি বলেন, 'এটা আর প্রাপ্য, এটা সাংবিধানিক অধিকার। এখনো উনার মামলা সুপ্রিম কোর্টের কাছে পেইন্ডিং আছে। সুতরাং এই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা (সরকার) পরিকল্পিতভাবে তাকে কারাগারে আটক করে রাখছে, যেটা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। আপনি দেখবেন কারা কারা জামিন পাবে। সেখানে আছে বয়স্ক মহিলা, অসুস্থ মানুষ তারা জামিন পাওয়ার অধিকার রাখে। যত বড় মামলাই হোক।'

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফরহাদ হালিম ডোনার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মীর সরাফত আলী সপু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইয়েদুল আলম বাবুল, মাহবুবুল হক নান্নু, মনির হোসেন, বেনজীর আহমেদ টিটো, নজরুল ইসলাম আজাদ, তাবিথ আউয়াল উপস্থিত ছিলেন।

অঙ্গসংগঠনের মধ্যে ছিলেন—ঢাকা মহানগরের আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের গোলাম মাওলা শাহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজিব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, উলামা দলের মাওলানা সেলিম রেজা, কাজী আবুল হোসেন, তাঁতি দলের আবুল কালাম আজাদ, মজিবুর রহমান, জাসাসের লিয়াকত আলী, জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব।

Comments