প্রকৃত অপরাধীদের না খুঁজে বিরোধী নেতাকর্মীদের পেছনে লেগেছে সরকার: মির্জা ফখরুল

দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্র-জনতা এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার-নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রী-নেতারা বারবার বলছেন প্রকৃত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, কিন্তু বাস্তবতা হলো—প্রকৃত অপরাধীদের না খুঁজে বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার।'

দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্র-জনতা এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার-নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও ভয়-ভীতির কারণে দেশব্যাপী সরকারের নির্মম ও নির্দয় অত্যাচার এবং নিপীড়নের সব তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্নভাবে যেসব তথ্য আসছে সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক এবং মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।'

তিনি বলেন, 'সাধারণ ছাত্র-জনতাকে এবং একইসঙ্গে বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মী- সমর্থকদের দিনে-রাতে ব্লকরেইড দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেককে তুলে নিয়ে গেলেও তাদের খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না। আটক করার পর, রিমান্ডে, এমনকি কারাগারে আটককৃতদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। শিক্ষার্থী বা নেতাকর্মীদের আটক করতে বাসাবাড়িতে অভিযানের নামে পরিবারের সদস্যদের সাথে অশালীন আচরণ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছে।'

'নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের অজ্ঞাত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের কর্মস্থলে পর্যন্ত হানা দেওয়া হচ্ছে আটকের জন্য,' যোগ করেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি কার্যালয়ে তুলে নিয়ে চাপ দিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা যায়, কিন্তু আবেগ-অনুভূতি এবং সঙ্গীদের রক্তমাখা শার্টের গন্ধ শিক্ষার্থীদের বিবেককে সবসময় তাড়া করবে, সুযোগ পেলেই তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেটির বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।'

'গণগ্রেপ্তারের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা নেতাকর্মীদের বাসায় ছিনতাই ও লুটপাটের দৃশ্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে' জানিয়ে তিনি বলেন, 'এর আগেও এসব অন্যায়, অত্যাচার, আটক, নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট ও কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী ভোটারবিহীন সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরকারের এসব মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে বন্ধের আহ্বান জানালেও, সরকার তা অব্যাহত রেখেছে এবং দিনদিন তা বৃদ্ধি করছে।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অনির্বাচিত ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। আন্দোলন দমনের নামে নিষ্ঠুরভাবে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস চালিয়ে শতশত ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা নিহত কিংবা আহত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রী-নেতারা বারবার বলছেন, প্রকৃত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—প্রকৃত অপরাধীদের না খুঁজে বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার।'

'তাদের এই হত্যাযজ্ঞ থেকে বাসাবাড়ির বেলকনি, পড়ার ঘর বা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট সোনামনিরা পর্যন্ত বাদ যায়নি। শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে সেটির সর্বশেষ প্রমাণ হলো—দেশ বিদেশের সব নাগরিক দেখার পরও রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যুকে গুলিতে নয়, ইটের আঘাতে মৃত্যু বলা হচ্ছে। তবে মিথ্যাচার, অপকৌশল ও নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে প্রকৃত সত্যকে জনগণ থেকে আড়াল করতে পারবে না অবৈধ আওয়ামী সরকার। তাই সব দায় নিয়ে সরকারের উচিৎ জনদাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পদত্যাগ করা,' বলেন মির্জা ফখরুল।

'সরকারের প্রকাশিত আন্দোলনে নিহতদের নাম ও সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে এর সংখ্যা অনেক বেশি। কিশোর ও আগে নিহতের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। অবিলম্বে সঠিক তালিকা প্রকাশ করুন,' দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে রিমান্ডে নেওয়া, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াদ ইকবাল এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিবৃতি দেন বিএনপি মহাসচিব।

বিবৃতিতে গ্রেপ্তার বিএনপি ও বিরোধী দলের সব নেতাকর্মীসহ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ এবং অবিলম্বে সবার নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'বারবার রিমান্ডে নেওয়া এবং রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতন সংবিধানবিরোধী। সর্বোচ্চ আদালতের এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। নিম্ন আদালতে ঢালাও রিমান্ড দেওয়া সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। এছাড়া, গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত অনেকে নিখোঁজ থাকা গভীর উদ্বেগজনক।'

 

Comments