অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে, তাদের কাজ করতে দিন: মির্জা ফখরুল

জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান তিনি।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে চলমান অস্থিরতা 'ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইঙ্গিতে' হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্টগুলোতে যে অশান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে…এ পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরই ইঙ্গিত আছে। এটা পরিস্কার হয়েছে…বোঝা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে একটা চক্রান্ত চলছে।'

তিনি বলেন, 'সোশ্যাল মিডিয়ায়…সীমান্তের ওপার থেকে ফ্যাসিবাদী হাসিনার অডিও ফাঁস করে দেওয়া হয়…যেগুলোতে বিভ্রান্তিকর খবর থাকে। অন্যদিকে আবার প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে যারা তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হচ্ছে…যেটা একেবারে বাকওয়াজ। এটা আমরা শুধু নয়, ভারত থেকে যে সাংবাদিকরা এসেছিলেন তারা পর্যন্ত দেখে গেছেন। তারা রিপোর্ট করেছেন, যেটা বলা হচ্ছে সেটা সঠিক নয়।'

'যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, রাজনৈতিক কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটা সবসময় হয়। আমরা চক্রান্ত পছন্দ করি না,' বলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথযাত্রায় বিএনপির ভূমিকা, অবদান এবং প্রত্যাশা তুলে ধরতে বিএনপি মহাসচিব এ সংবাদ সম্মেলন করেন।

আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে বিএনপির অন্তত ৪২২ জন

মির্জা ফখরুল বলেন, 'দেশের স্বাধীনতাকে যখনই গ্রাস করেছে স্বৈরতন্ত্র, প্রতিবারই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বিএ্নপি। অসংখ্য ব্যক্তি ও পরিবার রয়েছে, যাদের বছরের পর বছর ধরে ত্যাগের মহিমায় আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি।'

'বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী জুলাই গণহত্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে শহীদ হন ৮৭৫ জন, যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দেশজুড়ে শহীদ হওয়া সকল শ্রেণী-পেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এই বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতাকর্মী এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল। রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক ব্যক্তি হতাহতের পরিচয় যাই হোক না কেন, প্রতিটি প্রাণের মূল্য ও রক্তের মর্যাদা সমান,' বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'শেখ হাসিনা পদত্যাগের জন্য যে জাতীয় ঐক্য আমরা দেখেছি তা কিন্তু হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। এটি মূলত অবৈধ সরকারের অত্যাচার-অবিচার, দুর্নীতি-দুঃশাসন, বঞ্চনা-অবজ্ঞা এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নেমে আসে বিএনপি ও সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।'

'অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কাজ করতে দিন'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এখন আমাদের যেটা সবচেয়ে প্রয়োজন এই মুহূর্তে ধৈর্য ধরে সহনশীলতার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা যেন কাজ করতে পারে, তাদের কাজ করতে দিন। অতি দ্রুত সংস্কার কাজে তারা হাত দিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই কাজগুলো দরকার।'

'এ কাজগুলো অতি দ্রুত শেষ করে একটা নির্বাচনের দিকে যাওয়া...নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এবং জনগণ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। তারপর বাকি কাজগুলো তারা সম্পন্ন করবে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা পরিস্কার করে বলেছি, নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সংস্কার…অর্থাৎ, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী—যেমন, আমাদের অনেককেই শাস্তি দিয়ে দিয়েছে। আমাদের শাস্তি দেওয়ায় দুই বছর তো নির্বাচনই করতে পারব না। সেটার সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। আর অন্যান্য সংস্কার যেগুলো আছে সেটা যে সরকার জনগণের ভোটে আসবে তারা করবেন।'

'প্রশাসন এখনো ফ্যাসিবাদ মুক্তি হতে পারেনি'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা জানি, প্রশাসন এখন পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ মুক্ত হতে পারেনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এতো ডিপ রুটে চলে গিয়েছিলো ফ্যাসিবাদ…ডিপ স্টেট তৈরি হয়েছিল যে, সেখান থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লোকজনকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।'

'এখানে আমাদের যেটা প্রয়োজন, ঐক্য অটুট রাখা, ধৈর্য রাখা, এই সরকারের সব কাজকে সমর্থন দিয়ে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা,' যোগ করেন তিনি।

'বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের তুলনা নয়'

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের তুলনা হতেই পারে না। কারণ আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়, গণবিরোধী একটা দল…গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মানুষ হত্যাকারী একটি দল। আর বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রকে জীবন্ত করার দল। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান তিনি একদলীয় রাজনীতি থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন…বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছেন…আমরাই কেয়ারটেকার সিস্টেম চালু করেছি। এদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ফান্ডামেন্টাল জিনিস প্রত্যেকটা আমাদের হাতে গড়া এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর আমরা করেছি'।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago