কেউ যেন মাইনাস-২ ফর্মুলার কথা না ভাবে: মির্জা ফখরুল

অনুষ্ঠানে কথা বলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: ইউএনবি থেকে নেওয়া

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে কেউ যেন আবার চিন্তা না করে। অথবা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রে যেন লিপ্ত না হন।

স্মরণসভায় তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালে ১/১১-এর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় বিরাজনীতিকরণে এবং মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের ব্যর্থ চেষ্টা হয়েছিল।

তিনি বলেন, 'সেই পথ অনুসরণ করার কথা চিন্তাও করা উচিত নয়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপিকে কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কারণ বাংলাদেশের জনগণ কখনোই তা মেনে নেবে না।'

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নানাভাবে ভাঙার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে, ভবিষ্যতেও পারবে না।

কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা অপ্রত্যাশিত ও অযাচিত মন্তব্য করে বলেছেন, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যেতে অস্থির। 'এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তার মতো কোনো ব্যক্তি এ ধরনের মন্তব্য করবেন তা আমরা আশা করি না।'

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এর আগে শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'ব্যাংকে টাকা নেই। রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এবং আমরাও আমাদের কাজে ফিরতে চাই।'

ফখরুল বলেন, রাজনীতিবিদরা শুধু ক্ষমতায় ফেরার আকাঙ্ক্ষাই করেন না, তারা বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার কবল থেকে মুক্ত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন, নিপীড়ন ও নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, তারা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দ্রুত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পক্ষে পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ সরকার নির্বাচন যত দীর্ঘায়িত করবে, হাসিনা ও তার দোসরদের পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি হবে।

তিনি বলেন, 'আমি আবারও বলতে চাই, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করুন। আপনাদের সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং আমরা আপনাদের সহযোগিতা করছি। এখন আপনাদের আমাদের সহযোগিতা করা উচিত। আমরা ক্ষমতায় ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি বলে দাবি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না।'

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির লক্ষ্য আবার ক্ষমতায় আসা, তার নেতাকর্মীরা দেশ পরিচালনা ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপির নেতাকর্মীরা কীভাবে নির্যাতন সয়েছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন তা বর্ণনা করে ফখরুল বলেন, বিএনপির অপরিসীম ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।

দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে বা দলের সমালোচনা হতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 'কাউকে এটা করতে দেবেন না। এটা মাথায় রাখুন।'

বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এখনো সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

তিনি বলেন, 'আমরা এক ভয়ংকর দানবের খপ্পর থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু স্বস্তি নেই। কারণ মনে হচ্ছে জনগণের সরকার এখনো প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় আমরা এখনো আটকা পড়েছি।'

ফখরুল বলেন, তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন সম্মানিত ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন দিয়েছেন, যারা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সরকারের তত্ত্বাবধান করবে।

তিনি বলেন, 'আমাদের ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) তাকে সব সময় শ্রদ্ধা করেন এবং আমরাও তাকে শ্রদ্ধা করি। সারা বিশ্ব আপনাকে (ইউনূস) সম্মান করে। বিশ্বব্যাপী আপনার বিশাল খ্যাতি রয়েছে এবং এটি বজায় রাখা এখন আপনার প্রধান দায়িত্ব। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দায়িত্ব আপনাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে, যার অর্থ একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদ ও সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।'

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে বিদেশে সরকারি অর্থ লুটপাট ও পাচার করে দেশ ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের মানুষের মনোবলের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে এবং এখন ব্যাংক থেকে শুরু করে অন্যান্য অফিস পর্যন্ত চোর সর্বত্র।

তিনি দেশের মুক্তিযুদ্ধ, জাতিগঠন ও বিএনপিকে শক্তিশালী করতে সাদেক হোসেন খোকার অবদানের কথা স্মরণ করেন।

ফখরুল বলেন, খোকা এমন একজন রাজনীতিবিদের চেতনার মূর্ত প্রতীক, যিনি তার কর্মীদের সঙ্গে সত্যিকার অর্থেই বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহজবোধ্য।

বিএনপির এই নেতা বলেন, জাতীয় ও রাজনৈতিক সংকটে খোকার মতো ক্যারিশম্যাটিক নেতার অভাব তারা অনুভব করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Crores spent, but Ctg roads still crumble

Commuters in Chattogram are enduring severe hardships due to the appalling condition of major roads, a crisis worsened by the apparent indifference of the authorities.

7h ago