গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা: দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-ব্লকেড

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা।
আজ বুধবার রাজধানীর উত্তরা ও শাহবাগে ব্লকেড অনুষ্ঠিত হয়।
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, নবীনগর ও জিরানী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হান্নান দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট এলাকা এবং বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নবীনগর এলাকায় মহাসড়ক অবরুদ্ধ ছিল।
এ সময় মহাসড়ক দুটির উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসাদুল ইসলাম মুকুল বিকেলে ডেইলি স্টারকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছিলেন, 'কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিলে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।'
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্লকেডের জন্য কিছু সময় সড়কে যানচলাচল স্থবির ছিল, এখন স্বাভাবিক রয়েছে।'
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বিকেল ৫টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাঁশ ফেলে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
অবরোধ চলাকালে দেশের ব্যস্ততম এই মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জে হামলার নিন্দা ও সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
বিকেলে মানিকগঞ্জের জাগীর এলাকায় প্রায় আধা ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন নেতাকর্মীরা।

জনভোগান্তি এড়াতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুরোধ করলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অবরোধকারীরা সড়ক থেকে সরে যান।
আধা ঘণ্টায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
এনসিপি মানিকগঞ্জ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী জাহিদুর রহমান তালুকদার, যুগ্ম সমন্বয়কারী এ এইচ এম মাহফুজ, আমিরুল ইসলাম, কাজী হারুনুর রশিদ পিন্টু, সদর উপজেলার যুগ্ম সমন্বয়ক কাজী মাসুকুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির আহ্বায়ক ওমর ফারুক, সদস্যসচিব নাহিদ মনির, যুগ্ম আহ্বায়ক রমজান মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা আশরাফুল ইসলাম রাজু, মেহরাব হোসেনসহ অন্যান্যরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
তারা গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামীতে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে, হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
জাহিদুর রহমান বলেন, 'গোপালগঞ্জে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এখনো অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তবে আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাব।'
মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ বলেন, 'জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করলে তারা সড়ক থেকে সরে যান।'
নোয়াখালীর মাইজদীতে বুধবার বিকেল ৫টায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এর আগে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তুহিন ইমরান, নোয়াখালী জেলা সংগঠক কাজী মাঈন উদ্দীন তানভীর, ইয়াছিন আরাফাত, হাবীবুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, মুখ্য সংগঠক ফরহাদুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তী ও দেশ গড়ার নতুন প্রত্যয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রায় এই হামলা মেনে নেওয়া যায় না। এর দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রশাসন এড়াতে পারে না।
গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
রাত ৮টার দিকে শহরের তিতাস সিনেমা হল মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পৌরসভার মোড়ে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।
তারা বলেন, অবিলম্বে যদি গোপালগঞ্জের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা না হয়, নাহিদ-হাসনাত-সারজিসসহ সকল বিপ্লবীদের যদি সরকার নিরাপত্তা দিতে না পারে, তাহলে ঢাকা-কুযাকাটা মহাসড়ক অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে আমরা বাধ্য হবো।
এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও ১২ দলীয় জোট।
ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, বছর ঘুরতে-না ঘুরতেই পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি আবার গোপালগঞ্জে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গত বছর জুলাই-আগস্টে হাজারো ছাত্র-জনতা জীবন দিলো, আহত হলো, পঙ্গুত্ব বরণ করল, সেই জুলাই মাসেই আবার সেই সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের ওপর এই হামলা আক্রমণ সংঘঠিত করল।
তিনি বলেন, এটা পরাজিত ফ্যাসিবাদীদের চরম ঔদ্ধত্বের বহিঃপ্রকাশ। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। তারপরও কেন আগাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না?
তিনি অনতিবিলম্বে হামলাকারী ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে অনুসোচনাহীন ফ্যাসিবাদী শক্তির সহিংস তৎপরতার বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আরেক বিবৃতিতে ১২ দলীয় জোটের নেতারা বলেন, জুলাই-আগস্ট ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও তার সন্ত্রাসীরা আবারও দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ নৈরাজ্যের মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে।
আজ গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে বর্বরোচিত হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, ইউএনওসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্যদের আহত করার বর্বর ঘটনা সেই অপতৎপরতারই বহিঃপ্রকাশ।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে আওয়ামী দোসররা মরণ কামড় দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও দেশকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লুটতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব দুষ্কৃতিকারীদের কঠোরভাবে দমন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশে যাতে আবারও ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে না পারে সেজন্য দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এর ব্যতয় হলে দেশ আবারও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হুমকির মুখে পড়বে, উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
Comments