চাহিদার বিপরীতে গ্যাস সরবরাহ কম, ভোগান্তিতে নগরবাসী

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে গ্যাস সংকট চলছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। রান্নার জন্য তারা বিকল্প উপায়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, কেউ কেউ বাইরে থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে গ্যাস সংকট চলছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। রান্নার জন্য তারা বিকল্প উপায়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, কেউ কেউ বাইরে থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন।

গ্যাস সংকটের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের দৈনিক গ্যাস চাহিদার বিপরীতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল), যেটি জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস গ্রহণ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরবরাহ করে, প্রতিদিন প্রায় ৫০ মিলিয়ন মেট্রিক স্ট্যান্ডার্ড ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস কম পাচ্ছে।

কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধের কারণে চট্টগ্রামের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ৩২০ এমএমসিএফ থেকে কমিয়ে ২৬৭ এমএমসিএফ করা হয়েছে।

তা ছাড়া, দেশের কৃষি খাতে সারের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রামে ২টি সার কারখানা— চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) এখন পুরোপুরি চালু রয়েছে। এই কারখানাগুলো গ্যাস দিয়ে পরিচালিত। নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের স্বার্থে কেজিডিসিএলকে কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে।

সেই কারণে গৃহস্থালিসহ অন্যান্য শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেজিডিসিএল।

নগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা মো. আলমগীর জানান, সরবরাহ লাইনে গ্যাস না থাকায় গত ৩ দিন ধরে সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার বাইরে থেকে কিনছেন।

'গ্যাস সরবরাহ ভোরে বন্ধ হয়ে যায় এবং সন্ধ্যার দিকে স্বল্পচাপে আসে। ১ সপ্তাহ ধরে এই অবস্থা চলছে। কী করব, বুঝতে পারছি না। বৈদ্যুতিক হিটারের মতো রান্নার বিকল্প উপায়ে যাবো কি না, ভাবছি', যোগ করেন তিনি।

দক্ষিণ খুলশী এলাকার বাসিন্দা পলাশ বড়ুয়া জানান, ১ সপ্তাহ ধরে এই কঠিন পরিস্থিতি সামলাতে হচ্ছে। 'ভোর সাড়ে ৬টার পর থেকেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। খাবার তৈরি করতে আমার স্ত্রীকে মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়', বলেন তিনি।

পলাশ আরও বলেন, 'সরকার বারবার গৃহস্থালি ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাসের চার্জ বাড়িয়েছে। কিন্তু, এরপরেও আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস পাচ্ছি না। আমরা নিয়মিত বিল পরিশোধ করি। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ব্যবহার করতে পারি না।'

কাজির দেউড়ি এলাকার বাসিন্দা তমাল দত্ত বলেন, 'আমার স্ত্রী আমাদের স্কুলপড়ুয়া ছেলের জন্য টিফিন তৈরি করতে পারে না। আমার ছেলে প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে টিফিন ছাড়াই স্কুলে যায়। গ্যাসের অভাবে সকালের নাশতাও তৈরি করা যাচ্ছে না। বাইরে থেকেই কিনতে হচ্ছে।'

'আমরা যদি নিয়মিত বাইরে থেকে খাবার কিনতে থাকি, তাহলে গ্যাসের চুলার কী দরকার? কেন আমরা গ্যাসের বিল দেবো?', বলেন তিনি।

গ্যাস সংকট শুধু গৃহস্থালিরই ক্ষতি করেনি, চট্টগ্রামের শিল্প খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রামে গ্যাস-নির্ভর ৪ শতাধিক কারখানা ঠিকমতো গ্যাস না পাওয়ায় কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রচণ্ড গ্যাস সংকটের প্রেক্ষাপটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য যথাসময়ে পাঠাতে পারছে না। এর প্রভাব পড়ছে দেশের রপ্তানি খাতে।'

কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন্স) ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস না পাওয়ায় আমরা ঠিকমতো গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা ৩২০ এমএমসিএফের বেশি হলেও চট্টগ্রামে গড়ে ২৬৭ এমএমসিএফ গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে।'

'এ ছাড়াও, নিরবচ্ছিন্ন সার উৎপাদনের জন্য আমাদের সিইউএফএলকে ৩১ এমএমসিএফ গ্যাস ও কাফকোকে ৪২ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে এবং তাই আমরা উচ্চচাপে গৃহস্থালি খাতে গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। শিল্প খাতও একই কারণে কম গ্যাস পাচ্ছে', বলেন তিনি।

আমিনুর রহমান আরও বলেন, 'আমরা কোনো সেক্টরে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করিনি। তবে গৃহস্থালি ও শিল্প খাতে গ্যাসের চাপ কম। চট্টগ্রামে আরও গ্যাস বরাদ্দের জন্য ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই চট্টগ্রামের গ্যাস সংকটের সমাধান হবে।'

Comments