চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে নেই পদচারী সেতু, ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন মোড়ে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন এড়িয়ে রাস্তা পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ এসব পয়েন্টের বেশিরভাগেই কোনো পদচারী সেতু নেই।
পদচারী সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন নগরবাসী। ছবিটি লালখান বাজার থেকে তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী রাজীব রায়হান।

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন মোড়ে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন এড়িয়ে রাস্তা পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ এসব পয়েন্টের বেশিরভাগেই কোনো পদচারী সেতু নেই।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা দিনকে দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে অন্যতম কারণ পদচারী সেতুর অভাবে পথচারীদের অনিরাপদভাবে রাস্তা পার হওয়া। চট্টগ্রাম নগরীও এর ব্যতিক্রম নয়।

বন্দর নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চকবাজারের গুলজার মোড়, চকবাজারের পয়েন্টে নবাব সিরাজউদ্দৌলা রোড, কোতয়ালী, বহদ্দারহাট, ষোলশহর গেট নম্বর ২, ওয়াসা, দেওয়ান হাট, চৌমুহনী, আগ্রাবাদ বাদামতল, অক্সিজেন, আন্দরকিল্লা, লালদিঘী, একে খান, অলঙ্কার, কাজীর দেউড়ি ও জিইসি মোড়সহ নগরীর প্রায় ৪০টি এলাকায় পদচারী সেতু নেই। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ: মনোয়ারা বেগমের কথা ধরা যাক। লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা মনোয়ারা তার মেয়েকে জামাল খান এলাকার স্কুলে নিয়ে যান, তাই প্রতিদিন মা-মেয়েকে লালখান বাজার মোড় পার হতে হয়, যেখানে কোনো পদচারী সেতু নেই।

পদচারী সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন নগরবাসী। ছবিটি লালখান বাজার থেকে তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী রাজীব রায়হান।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'মেয়ের সঙ্গে আমিও স্কুলে যাওয়া-আসা করি৷ আমরা গণপরিবহনে যাতায়াত করি, তাই আমাদের প্রতিদিন খুব প্রশস্ত লালখান বাজার মোড় হেঁটে পার হতে হয়। এটি পার হতে কমপক্ষে ১৫ সেকেন্ড সময় লাগে এবং পথচারীরা যখন রাস্তার মাঝখানে থাকে, তখন গাড়িগুলো প্রায়শই খুব দ্রুত চলাচল করে। আমাদের প্রতিদিন এই ঝুঁকি নিতে হচ্ছে।'

অবিলম্বে এখানে একটি পদচারী সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানান মনোয়ারা বেগম।

নগরীর বিভিন্ন মোড়ে বর্তমানে ১২টি পদচারী সেতু রয়েছে। এই সেতুগুলোর মধ্যে একটি মুরাদপুর চৌরাস্তায় অবস্থিত। ২০১৯ সালে এটি স্থাপনের পর সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পথচারীরা এটি ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন।

মো. আসাদ প্রায় ১ দশক ধরে মুরাদপুরে ফল বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, 'আগে রাস্তা পারাপারের জন্য মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো। এখন পদচারী সেতু স্থাপনের পরে তারা নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারছেন।'

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছর দেশে ৬ হাজার ৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ৯৫১ জন নিহত এবং ১২ হাজার ৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। মহাসড়কে, বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। শহর এলাকায় দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো ছিল ব্যস্ত সড়কের মোড়ে পদচারী সেতু না থাকা, ব্যস্ত সড়কে ফুটপাথ না থাকা এবং যাত্রী নেওয়ার জন্য গাড়িগুলোর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা।'

নিরাপদ সড়ক চাই, চট্টগ্রাম ইউনিটের সভাপতি এস এম আবু তৈয়বও একই কথা বলেছেন। নগরীর প্রায় ৪০টি এলাকায় পদচারী সেতু নির্মাণ এখন জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ওই এলাকাগুলোতে পদচারী সেতু না থাকায় রাস্তা পারাপারের জন্য মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।'

পদচারী সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন নগরবাসী। ছবিটি লালখান বাজার থেকে তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী রাজীব রায়হান।

৩৮টি পদচারী সেতু নির্মাণ করবে চসিক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৮টি পদচারী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চসিক। 'এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন' শীর্ষক একটি প্রকল্পের অধীনে এই সেতুগুলো নির্মিত হবে বলে জানা গেছে।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, গত বছরের ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।

'আমরা আশা করছি ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

9 die of dengue

Highest single-day deaths this year

2h ago