হালদায় লবণাক্ততা স্বাভাবিক, মা মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে উদ্বেগ নেই

হালদা নদী (ইনসেটে ডিম সংগ্রহের চিত্র)। ছবি: সংগৃহীত

হালদা নদীতে কিছুদিন আগে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তা কার্প জাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন ডিম সংগ্রহকারী ও সাধারণ মানুষ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মৌসুমে হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মাছের ডিম ছাড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু এখনো ঘটেনি।

কামাল উদ্দিন সওদাগর প্রায় ৫০ বছর ধরে হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে হালদাতে কার্প জাতীয় মাছ এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে ডিম না ছাড়ায় তিনি হতাশ।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'মা মাছ গত ১৮ মে নমুনা ডিম ছেড়েছে। কয়েক শ ডিম সংগ্রহকারী ডিম সংগ্রহের জন্য সারা রাত নদীতে অপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তাদের অনেকেই একটি ডিমও পাননি। কয়েকজন সংগ্রহকারী ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।'

'ডিম সংগ্রহকারীরা মনে করেন যে হালদা নদীর জলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া ও জলবায়ুর প্রতিকূল প্রভাবের কারণে মা মাছ ডিম ছাড়ছে না। এই মৌসুমে মা মাছ আদৌ ডিম ছাড়বে কি না, তা নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন', বলেন তিনি।

তবে এই আশঙ্কা সত্যি নয় বলে মনে করছেন গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, 'এটি সত্য যে ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার আগে হালদা নদীতে লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল। কারণ এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত হয়নি। তবে ঘূর্ণিঝড়ের পর বৃষ্টি হওয়ায় লবণাক্ততার মাত্রা কমেছে।'

'আমি প্রায় ১ মাস আগে যখন নদীর পানির লবণাক্ততা পরীক্ষা করেছিলাম, তখন নদীর স্পনিং জোনে (যেখানে মা মাছ ডিম ছাড়ে) লবণাক্ততার মাত্রা পেয়েছিলাম ২ পিপিটি (পার্ট পার থাউজেন্ড)। তবে, আমি গত শনিবার পুনরায় পরীক্ষা করলে একই স্থানে লবণাক্ততার মাত্রা পাই দশমিক ৫ পিপিটি।'

ড. শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, 'মিঠা পানিতে লবণাক্ততার স্বাভাবিক রেফারেন্স মাত্রা দশমিক ৫ পিপিটি বা তার চেয়ে কম। গবেষণায় দেখা গেছে, রুই, কাতলা, কালি বাউশসহ কার্প জাতীয় মাছ ৫ পিপিটি মাত্রার লবণাক্ততায় নদীতে বেঁচে থাকতে পারে এবং ডিম ছাড়তে পারে। এমনকি প্রতিকূল পরিবেশে তারা ১৪ পিপিটি মাত্রার লবণাক্ততায়ও বেঁচে থাকতে পারে।'

'সুতরাং হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়তে দেরি হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আসলে মা মাছের ডিম ছাড়ার সময় এখনো পেরিয়ে যায়নি। কারণ এই মৌসুমে এখনো সামনে ২টি জোয়ার (পূর্ণিমা ও অমাবস্যার সময়) আছে', বলেন তিনি।

একই কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তার ভাষ্য, 'হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়তে দেরি হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ এখনো সামনে ২টি জোয়ার রয়েছে।'

'পূর্ণিমা বা অমাবস্যার সময় বজ্রসহ প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত এবং সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল কার্প জাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার জন্য আদর্শ পরিবেশ। ইতোপূর্বে আমরা জুনের প্রথম সপ্তাহে, এমনকি জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহেও মা মাছকে ডিম ছাড়তে দেখেছি', বলেন তিনি।

'জোয়ারের সময়ে যদি খুব বেশি বৃষ্টি হয়, আমি মনে করি মা মাছ ডিম ছাড়বে। সুতরাং এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।'

'প্রতি বছর কর্ণফুলী ও সাঙ্গুর মতো বিভিন্ন নদী থেকে দেশীয় কার্প জাতীয় মাছ, যেমন: রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালি বাউশ হালদায় আসে এবং এপ্রিল থেকে জুন (বাংলা মাস চৈত্র থেকে আষাঢ়) সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় ডিম ছাড়ে যখন বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ, যেমন: তাপমাত্রা, পানি, প্রবল স্রোত ও বজ্রবৃষ্টি ইত্যাদি মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে', বলেন ড. মনজুরুল কিবরিয়া।

ড. কিবরিয়া বলেন, 'ডিম সংগ্রহের পর সেগুলোকে ঐতিহ্যবাহী ছোট ছোট মাটির পুকুরে ১৮ ঘণ্টা লালন-পালন করা হয় এবং ৯৬ ঘণ্টা পর ডিমগুলো পোনায় রূপান্তরিত হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Trump slaps allies Japan, South Korea with 25% tariffs

In near-identically worded letters to the Japanese and South Korean leaders, Trump said the tariffs would apply from August 1

1h ago