১৮৮০ সালের লিভাইস জিন্স বিক্রি হলো ৮৭ হাজার ডলারে

নিউ মেক্সিকোর এক ছোট শহরে আয়োজিত নিলামে ৮৭ হাজার ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি হলো আশির দশকের ‘লিভাইস’ ব্র্যান্ডের একটি জিন্স। 
নিলামে ৮৭ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছে লিভাইস ব্র্যান্ডের এই জিন্স। ছবি: ডেনিমডক্টরের ইনস্টাগ্রাম পেজের সৌজন্যে
নিলামে ৮৭ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছে লিভাইস ব্র্যান্ডের এই জিন্স। ছবি: ডেনিমডক্টরের ইনস্টাগ্রাম পেজের সৌজন্যে

নিউ মেক্সিকোর এক ছোট শহরে আয়োজিত নিলামে ৮৭ হাজার ডলারেরও বেশি দামে বিক্রি হলো ১৮৮০ সালের 'লিভাইস' ব্র্যান্ডের একটি জিন্স। 

পরিত্যক্ত খনি থেকে পাওয়া দুষ্প্রাপ্য এই জিন্স একজন 'ডেনিম প্রত্নতত্ত্ববিদ' এর কাছ থেকে কেনেন ২৩ বছর বয়সী কাইল হাউনার এবং ধ্রুপদি ডেনিম বাজার বিশেষজ্ঞ জিপ স্টিভেনসন। এতো ডলার খরচ করে জিন্স কেনার কোনো পূর্বপরিকল্পনা না থাকলেও নিলাম শুরুর পর এমন দুষ্প্রাপ্য পণ্য হাতছাড়া করতে চাননি তারা।

ক্রেতার ১৫ শতাংশ প্রিমিয়ামসহ ৮৭ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলারে কোনো এই ডেনিম জিন্স বিক্রি হওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ডগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এই ঘটনা। মোট মূল্যের ৯০ শতাংশ পরিশোধ করেন হাউনার এবং বাকি ১০ শতাংশ দেন স্টিভেনসন।  

ছোট শহর অ্যাজটেকের উপকণ্ঠে ডুরাঙ্গো ভিনটেজ ফেস্টিভাসে নিলামটি অনুষ্ঠিত হয়। ৪ দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করেন ধ্রুপদি ডেনিম বিশেষজ্ঞ ব্রিট ইটন। ইটনের কাছে পুরনো জিন্সের খোঁজ করা এক ধরনের নেশার মতো।

ইটন প্রায় ২৫ বছর ধরে ডেনিম জিন্সের ব্যবসা করছেন এবং গড়ে প্রতিটি "ভিনটেজ" ডেনিম জিন্সের মূল্য ধরা হয় গড়ে প্রায় ১০০ মার্কিন ডলার। এবারই প্রথম তিনি এ ধরনের উচ্চ মূল্যের ডেনিম পেলেন।

আধুনিক যুগের লিভাইস জিন্স। ছবি: রয়টার্স
আধুনিক যুগের লিভাইস জিন্স। ছবি: রয়টার্স

এরকম একটি দুষ্প্রাপ্য লিভাইস জিন্স পাওয়ার পর সেটি বিক্রি করার তেমন কোনো ইচ্ছা ছিল না ইটনের, তাই এমন চড়া মূল্য নির্ধারণ করেছিলেন তিনি।

তবুও এমন বিরল ডেনিম শেষমেশ বিক্রি হয়ে যাওয়া খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়। নিলামের সময় সম্ভাব্য ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তিনি বেশ উপভোগ করেছেন।

এই জিন্সটি আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলের ঐতিহ্যের পরিচায়ক হলেও এর মাঝে লুকিয়ে আছে ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায়। এর ভেতরের পকেটে মুদ্রিত আছে একটি আপ্তবাক্য, 'একমাত্র (জিন্সের) ধরন, যেটি শুধু শ্বেতাঙ্গদের শ্রমে নির্মিত।'

পুরনো হলেও পরার অবস্থায় রয়েছে জিন্সটি। ছবি: ডেনিমডক্টর্স এর ইনস্টাগ্রাম পেজের সৌজন্যে
পুরনো হলেও পরার অবস্থায় রয়েছে জিন্সটি। ছবি: ডেনিমডক্টর্স এর ইনস্টাগ্রাম পেজের সৌজন্যে

তবে লিভাইসের এক মুখপাত্র ব্যাখা দেন, ১৮৮২ সালে 'চৈনিক কর্মী বর্জন আইন' প্রবর্তনের পর প্রতিষ্ঠানটি এই শ্লোগান ব্যবহার করা শুরু করে। মুখপাত্র নিশ্চিত করেন, ১৮৯০ সালে এই নীতি ও শ্লোগান উভয়ই বর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৪৩ সালে এই আইন বাতিল করা হয়।

লস অ্যাঞ্জেলসে তিন দশক ধরে ডেনিম মেরামতের দোকান চালানোর পরেও এমন ডেনিম পাননি বলে জানান স্টিভেনসন। তার মতে, বিশেষ করে জীর্ণ অবস্থা এবং আকারের জন্য এ ধরনের জিন্স খুবই বিরল।

স্টিভেনসন এই জিন্স সম্পর্কে জানতে পারেন প্রায় ৫ বছর আগে, যখন এটি প্রথম আবিষ্কার হয়। তারপর মাইকেল হ্যারিস টানা ৫ বছর পশ্চিম আমেরিকার প্রায় ৫০টি পরিত্যক্ত খনি খুঁজেও সমমানের কোনো ডেনিমের সন্ধান পাননি।

যদিও বা কয়েকটি পাওয়া গেছে, সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষিত অবস্থায় আছে। ফলে এরকম পুরনো কোনো জিন্স পরার সুযোগ নেই বললেই চলে।

তবে এই ডেনিমটি বেশ টেকসই, এবং এখনও পরার মতো অবস্থায় আছে বলে আশা করা যায়। এতে অল্প কিছু দাগ রয়েছে যা একটু চেষ্টা করলেই মুছে ফেলা যাবে। এটি এখনো বেশ শক্তপোক্ত আছে। এমন কী, জনি ডেপ বা জেসন মোমোয়াকেও পরতে দেখা যেতে পারে এটি, ঠাট্টার সুরে জানান স্টিভেনসন। 

কিন্তু এই জিন্স নিয়ে পরিকল্পনা কী? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা একজন আগ্রহী ব্যক্তিগত ক্রেতার কাছে এটি বিক্রি করতে পারি। তবে তারা চান এটি স্মিথসোনিয়ান বা মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টের মতো জাদুঘরে এই জিন্স সংরক্ষিত থাকুক, যাতে পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা এটি দেখতে পারেন।

এই ধ্রুপদি লিভাইস ডেনিম জিন্সটি বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলসে স্টিভেনসনের ডেনিম ডক্টরস দোকানের পাশে একটি "সেফ ডিপোজিট বাক্সে" রাখা আছে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট সাপেক্ষে দর্শনার্থীরা এটি দেখার সুযোগ পেতে পারেন।

তথ্যসূত্র:  সিএনএন স্টাইল

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া

Comments