জানা-অজানা

কাতুকুতু দিলে মানুষ হাসে কেন

প্রতীকী ছবি। ছবি: মেনটাগৎট, পেকজেলসডটকম

ছোট বাচ্চাদের আদর করতে গিয়ে আমরা অনেকেই তাদেরকে কাতুকুতু দেই। বড়দেরকেও কাতুকুতু দেওয়া হয়, তবে সেটা নির্ভর করে পরিস্থিতি, ব্যক্তি ও তার সঙ্গে সম্পর্কের ওপর।

কাতুকুতুর একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অন্য কেউ আমাদেরকে কাতুকুতু দিলে আমরা হাসি, কিন্তু নিজেরা নিজেদেরকে কাতুকুতু দিলে হাসি আসে না। কাতুকুতু সম্পর্কিত এমন আরও কিছু রহস্যের কূলকিনারা করার চেষ্টা হবে এই লেখায়।

কাতুকুতু কীভাবে লাগে

আমাদের ত্বকের সবচেয়ে ওপরের অংশের নাম এপিডার্মিস। এই অংশটির নিচে থাকে হেয়ার ফলিকলস, ঘাম গ্রন্থি, পেশী ও বিভিন্ন নার্ভের প্রান্ত। নার্ভপ্রান্তগুলো নার্ভ ফাইবারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই নার্ভ ফাইবার দিয়েই আমাদের শরীরের কেন্দ্রীয় নার্ভ সিস্টেম গঠিত। কোনো কিছু যখন আমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন এই নার্ভপ্রান্ত আমাদের ব্রেনে সংকেত দেয়, যার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি স্পর্শিত বস্তুটি ঠাণ্ডা না গরম, কিংবা সেটির চাপ কেমন।

কাতুকুতু দেওয়ার সময় যেভাবে স্পর্শ করা হয়, সেটা খুবই মৃদু স্পর্শ। কিন্তু এই মৃদু স্পর্শ কেন আমাদেরকে হাসতে উদ্বুদ্ধ করে?

মস্তিষ্কের দুটি ভিন্ন অংশ এর জন্য দায়ী। স্পর্শের ফলে যে অনুভূতি হয়, সেটা বিশ্লেষণ করে ব্রেনের সেমাটোসেন্সরি কর্টেক্স (somatosensory cortex) অংশ। একই বিষয় আবার এনটেরিয়র সিংগুলেট কর্টেক্সও (anterior cingulated cortex) বিশ্লেষণ করে। মস্তিষ্কের এই অংশটি বিভিন্ন প্লেজারেবল ফিলিংসের জন্য দায়ী। তাই স্পর্শের পর আমাদের কেমন অনুভূতি হবে, সেটা মস্তিষ্কের এই দুটি অংশের জটিল বিশ্লেষণের ফল।

নিজেকে কাতুকুতু দিলে হাসি আসে না কেন

এর জন্য দায়ী মস্তিষ্কের পেছনের অংশে অবস্থিত সেরেবেলাম নামক অংশ। এই অংশটি আমাদের নড়াচড়া আগে থেকে অনুমান ও পর্যবেক্ষণ করে এবং সেই অনুসারে আমাদেরকে সতর্ক করে। আমরা যখন নিজেকে কাতুকুতু দিতে যাই, তখন মস্তিষ্কের এই অংশটি আমাদের আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করে, যার ফলে সেটা আর কাতুকুতু হয় না।

কেন মস্তিষ্ক আগে থেকেই সতর্ক করে

আমাদের মস্তিষ্ক প্রতি মুহূর্তে বহু তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে। তাই এটি অপ্রয়োজনীয় ও অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যতটা সম্ভব কম গুরুত্ব দেয়। এর পরিবর্তে মস্তিষ্ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের সজাগ ও সতর্ক রাখে, যা আমাদের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য।

কাতুকুতু দিলে মানুষ হাসে কেন

চার্লস ডারউইন ও এওয়াল্ড হেকার উভয়ই বলেছেন কাতুকুতুতে হাসির জন্য মানসিক অবস্থা ভালো থাকতে হবে এবং মনের মধ্যে হিউমার বা হাস্যরস থাকতে হবে। এই দুটির সমন্বয় ছাড়া কাতুকুতু দিলে হাসির বিপরীতে অন্য কিছু হতে পারে। যেমন: আপনি যদি ইউটিউবে হাসির কোনো ভিডিও দেখার সময় কেউ আপনাকে কাতুকুতু দেয়, তাহলে আপনার হাসির সম্ভাবনা বেশি থাকবে। কিন্তু অফিসে বসের চাপিয়ে দেওয়া কাজের বোঝা হালকা করার সময় কেউ কাতুকুতু দিলে তার কপালে কী আছে, কে জানে!

শরীরের কোন কোন জায়গায় স্পর্শ করলে আমরা হাসি, সেটা লক্ষ্য করলেও বোঝা যাবে যে কেন আমরা কাতুকুতু দিলে হাসি।

বগলের নিচে, গলা-হাঁটুর পেছনের অংশ এবং পায়ের পাতায় স্পর্শ করলে আমরা কাতুকুতু অনুভব করি। বগলের নিচে অনেকগুলো আর্টারি আছে। গলাতেও অনেক আর্টারি আছে এবং এখানে আছে আমাদের ট্রাকিয়া। পায়ের পাতায় উচ্চ সংবেদনশীল রিসেপ্টর আছে, যেগুলো মাইজনার করপাসলস (missner corpuscles) নামে পরিচিত।

এই জায়গাগুলো খুবই স্পর্শকাতর এবং খুব সহজেই জায়গাগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। জীববিজ্ঞানী ও নিউরোসায়েন্টিস্টরা বলেন, আমরা যখন হাসি, তখন এটি আমাদের আক্রমণকারীদের কাছে একরকম আত্মসমর্পণের মতো বার্তা দেয়। যেমন: কেউ যখন আপনাকে আক্রমণ করতে আসে আর আপনি যদি হেসে দেন, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং উত্তেজনার দ্রুত অবসান হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, কাতুকুতুর ফলে হাসির কারণে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ উদ্দীপিত হয়। আমরা যখন কোনো কষ্টের আশঙ্কা করি, তখনও মস্তিষ্কের একই অংশই উদ্দীপিত হয়।

গরিলাকে কাতুকুতু দিলে তারা যে প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেটাও অনেকটা মানুষের হাসির মতোই। এটা দেখে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, কাতুকুতুর এই হাসি প্রায় ৩০-৬০ মিলিয়ন বছর পুরোনো একটি প্রতিক্রিয়া।

অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও কাতুকুতুর প্রতিক্রিয়ায় হাসির প্রবণতা আছে। যেমন: ইঁদুর।

সূত্র: বিবিসি

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

14m ago