বিলিভ ইট অর নট

অক্টোপাসও কি ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে?

অক্টোপাসও কি ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখে?
ছবি: সংগৃহীত

নিউইয়র্কের রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অক্টোপাস দুঃস্বপ্ন দেখতে পারে। 'কোস্টেলো'র বৈজ্ঞানিক নাম অক্টোপাস ইনসুলারিসের ঘুমন্ত অবস্থার বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি নেন পোস্টডক্টরাল গবেষক এরিক অ্যান্জেল র‍্যামোস। এতে দেখা যায়, অক্টোপাসটি শান্তিতে ঘুমোচ্ছিল। এরপর সেটির শুঁড় বা টেন্টিকলগুলো হঠাৎ করেই জোরে জোরে ছুঁড়তে থাকে! মনে হয় তার ঘুম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। 

৪ সপ্তাহে আলাদা ৪ বার এমন দৃশ্যধারণ করা হয়। ঘুম থেকে জেগে ওঠা ও বিক্ষিপ্তভাবে শুঁড়ের নড়ন ঘুমে বাধা আসার ইঙ্গিত করে। এমন আচরণ অস্বাভাবিক, তবে এটি দুঃস্বপ্নের কারণেই ঘটছে কি না তা নিশ্চিত নয় বলে জানান র‍্যামোস। 

এই ৪ বারের ছবি নেওয়ার সময় অন্তত দুবার অক্টোপাস 'কোস্টেলো' শুঁড় দিয়ে কালো কালি ছোঁড়ে। এটি তাদের আত্মরক্ষামূলক আচরণ। প্রতিকূল পরিবেশে কিংবা শত্রুর মুখোমুখী হলে তারা এভাবে কালি ছড়ায়। 

র‍্যামোসের কাছে মনে হয়েছিল ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। তিনি বলেন, 'মনে হচ্ছিলো ও যন্ত্রণার মধ্যে আছে, এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল ও কোনো কষ্টে ভুগছে। তারপর ও যখন জাগল, মনে হলো কিছুই ঘটেনি। এরপর দিনের বাকি সময় সে স্বাভাবিক ভাবেই কাটালো।'

গবেষকরা মনে করছেন, কোস্টেলো  পর্যায়ক্রমিকভাবে আসা কোনো নেতিবাচক স্মৃতির প্রতি সাড়া দিচ্ছে, অথবা প্যারাসমনিয়ার কোনো ধরন তার ভেতর আছে। 

'এতটুকু উপাত্ত দিয়েই কোনো স্পষ্ট উপসংহারে পৌঁছতে চাইছি না আমরা। তবে আমরা প্রাপ্ত উপাত্ত ও বিশ্লেষণগুলো সবার সঙ্গে শেয়ার করছি। কেউ হয়তো এর মাধ্যমেই আরও দুর্লভ কিছু খুঁজে পাবে।' 

সম্ভাব্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ 

মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মতোই সেফালোপডদেরও  ঘুমের সক্রিয় ও অক্রিয় অবস্থা থাকে। ঘুমের ভেতরের সক্রিয় পর্যায়ে অক্টোপাসদের 'ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্ন' ও 'বেসাল ইলেকট্রিকাল রিদম' প্রদর্শন করতে দেখা যায়। তবে বাইরের উদ্দীপনার প্রতি তারা তেমন একটা সাড়া দেয় না। 

কারও কারও মতে, এই পর্যায়কে স্তন্যপায়ীদের স্বপ্ন দেখার সঙ্গে তুলনা করা যায়! 

২০২১ এ আইসায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় অক্টোপাসের ঘুমের সক্রিয় ও অক্রিয় ধরন পরীক্ষা করা হয়। এর সঙ্গে মানুষের রেম ও নন-রেম পর্যায়ের সাদৃশ্য পাওয়া যায়! রেম (REM) পর্যায়ে মানুষ সাধারণত স্বপ্ন দেখে থাকে।

তবে কোস্টেলো যা দেখেছে তা দুঃস্বপ্ন কি না তা এ ক্ষেত্রে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। 

সান ফ্রান্সিসকো স্টেস্ট ইউনিভার্সিটির তুলনামূলক স্নায়ুজীববিদ্যার শিক্ষক রবীন ক্রুক এই গবেষণার সঙ্গে ছিলেন না। তবে তার মতে, 'সেফালোপডের নিদ্রাসংক্রান্ত আচরণ নিয়ে  ওরকম গভীর গবেষণা হয়নি, যাতে করে একদম নির্দিষ্ট কোনো উপসংহার টানা যায়। তা ছাড়া, অক্টোপাস স্বপ্ন দেখলেও তা মানুষের দেখা স্বপ্নের চেয়ে বেশ খানিকটা আলাদা হওয়ার কথা।' 

ক্রুক মনে করেন কোস্টেলোর কাজ-কর্ম খুব আগ্রহ জাগানিয়া। তবে তার মতে, এটি বাইরের উদ্দীপনা থেকেও হতে পারে, কিংবা অক্টোপাসটি থাকতে পারে অতলান্তিক পর্যায়ে। এ পর্যায়টি আসে তাদের মৃত্যুর ঠিক আগে, শরীরকে ক্রমে শিথিল করে দেয়।  

ক্রুক ও তার সহকর্মীরা এই অতলান্তিক পর্যায় প্রত্যক্ষ করেছেন প্রশান্ত মহাসাগরের অক্টোপাসে (এন্টারক্টোপাস দোফ্লেইনি)। তারা সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন এই পর্যায় ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্রমশ শিথিলতার। কাজেই কোস্টেলোর এই আচরণের পেছনে প্রতিরক্ষামূলক দিক না থেকে, থাকতে পারে স্নায়ুবিক নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতাও। 

একটি অক্টোপাস সাধারণত বাঁচে ১ থেকে দেড় বছর। এসব পর্যবেক্ষণের কিছুদিন পর কোস্টেলোও মারা গেছে। র‍্যামোসের মতে, বার্ধ্যকে উপনীত হওয়া বা অতলান্তিক সেই পর্যায় তার আচরণের ক্ষেত্রে 'নিয়ামকগুলোর একটি' হতে পারে। এ ছাড়া ল্যাবে বহু অক্টোপাসকে এই বার্ধক্যে পৌঁছনোর আগেই 'ইউথানাইজেশন' বা স্বল্পব্যথা দিয়ে মেরে ফেলা হয়। প্রায় কোনো ল্যাবেই ধারাবাহিকভাবে প্রাণীর গতিবিধির চলমান দৃশ্য ধারণ করা হয় না। কাজেই কোস্টেলোর যে আচরণ দেখা গেছে, তা ল্যাবে থাকা অন্য কারও ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই লক্ষ্য করা হয়নি। 

 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়
 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women retain SAFF glory

Bangladesh retained the title of SAFF Women's Championship with a 2-1 win against Nepal in an entertaining final at the Dasharath Stadium in Kathmandu today. 

14m ago