জানা-অজানা

হোয়াইট রুম টর্চার এত মারাত্মক কেন

হোয়াইট টর্চার, হোয়াইট রুম টর্চার,
প্রতীকী ছবি, সংগৃহীত

পৃথিবীতে যত প্রকার সাইকোলজিক্যাল টর্চার বা মানসিক শাস্তি আছে, 'হোয়াইট টর্চার' বা 'হোয়াইট রুম টর্চার' তার মধ্যে অন্যতম। কাউকে অনভূতিশূন্য করতে এবং চূড়ান্ত একাকীত্বের শাস্তি দিতে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

ইরান, ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো কিছু দেশে বন্দীদের ওপর হোয়াইট টর্চার চালানো হয় বলে অভিযোগ আছে।

২০০৮ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ভিন্নমতাবলম্বী ইরানি রাজনৈতিক আমির-আব্বাস ফখরাভারের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে।

ওই সাক্ষাৎকারে হোয়াইট টর্চারের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, 'যদি আপনি ইরানের জেলে হোয়াইট টর্চারের কষ্টের সঙ্গে তুলনা করতে চান, তাহলে মার, মারের চোটে হাড় ভেঙে যাওয়া, অবহেলিত ও জঘন্য অবস্থা... এগুলো কিছুই না।'

২০০৪ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইরানের জেলে ফখরাভারের ওপর চালানো হোয়াইট টর্চারের কথা জানতে পারে। তখন সংস্থাটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের দুর্বল করতে এমন ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে অনুভূতিশূণ্য অবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। তখন ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডের বিরুদ্ধে এমন নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়েছিল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই শাস্তিকে 'বধিরতার দিকে ঠেলে দেওয়া' এবং 'অমানবিক' বলে বর্ণনা করেছে।

জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ফখরাভার বলেন, 'আমি সেখানে ৮ মাস ছিলাম। এরপর আমি আমার বাবা-মায়ের চেহারা মনে করতে পারতাম না। আমাকে যখন তারা ছেড়ে দেয়, আমি ততদিনে আর স্বাভাবিক মানুষের পর্যায়ে ছিলাম না।'

ইরানের মানবাধিকার কর্মী নার্গিস মোহাম্মাদি 'হোয়াইট রুম টর্চারের' আরেক ভুক্তভোগী। মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকার দায়ে ইরান সরকার তাকে ১৯৯৮-২০০০ সাল পর্যন্ত তাকে বন্দী করে রাখে। ২০১৯ সালে তাকে আবারও আটক করে ইরান সরকার। ২০২০ সালের অক্টোবরে মুক্তি পেয়ে তিনি বন্দী সময়ে হোয়াইট রুম টর্চারের রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি একটি ডকুমেন্টারিও নির্মাণ করেছেন, যা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় পরিবেশিত হয়েছিল।

'সলিটারি কনফাইনমেন্ট বা একাকী রুমে বন্দী থাকার অর্থ হচ্ছে আপনাকে খুব ছোট একটি রুমে দীর্ঘ সময় বন্দী রাখা হবে। কোনো প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করতে পারে না, রুমের সবকিছু একই রঙের- সাধারণত সাদা, কোনো বাতাস নেই, কোনো শব্দ নেই, আপনি কারও সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না, কোনো মানুষের সংস্পর্শে আসতে পারবেন না। কোনো বই, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, কাগজ, কলম নেই।'

'জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় হুমকি, ভয় ও চাপ দিয়ে। বন্দীকে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয় এবং মানসিক চাপ দিয়ে মিথ্যা দায় স্বীকার করানো হয়। পরিবার, বন্ধু ও আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। আপনি আক্ষরিক অর্থেই একাকী ও নিঃসঙ্গ। এই একাকীত্ব ও অসহায়ত্ব মানুষের মনের ওপর ধারাবাহিকভাবে প্রভাব ফেলে।'

মনোবিদরা বলেন, মানুষ যখন দীর্ঘদিন কোনো তথ্য, খবর, দেখা-শোনা-স্পর্শের অনুভূতি থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে সেটি তার মানসিক অবস্থার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ভয়, উদ্বিগ্নতা, ঘুমের অভাব, মনোযোগের অভাব এবং মাঝে মাঝে বিভ্রম বন্দীকে স্বাভাবিক চিন্তা করার মতো অবস্থা থেকে দূরে ঠেলে দেয়। ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই জিজ্ঞাসাবাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ ও মিথ্যা দায় স্বীকার করিয়ে নেওয়া হয়।

হোয়াইট রুম টর্চারের ক্ষেত্রে বন্দীদের রুমের সবকিছু হয় সাদা। দেয়াল, বিছানার তোষক, বেড কাভার, পোশাক, ফার্নিচারসহ যাবতীয় সবকিছুর রং হয় সাদা। তাদেরকে খাবারও দেওয়া হয় সাদা (যেমন- ভাত)। রুমে নিয়ন টিউব ব্যবহার করা হয়, যাতে আলোর কোনো ছায়া না পড়ে। রুমগুলো হয় সাউন্ডপ্রুফ, গার্ডরাও এমন জুতা পরেন, যেগুলো পরে হাঁটলে কোনো শব্দ হয় না। বন্দীর স্পর্শের অনুভূতি হ্রাস করার জন্য রুমের যাবতীয় আসবাবপত্রের সারফেস খুবই মসৃণ রাখা হয়।

দীর্ঘদিন এ ধরনের রুমে বন্দী থাকলে বন্দীর সব ধরনের অনুভূতি লোপ পায়, মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় যার প্রভাব হয় দীর্ঘস্থায়ী।

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

17h ago