‘নেভার লেট মি গো’র জনি এইসের ট্রাজিক পরিণতি

জন মার্শাল আলেক্সান্ডার জুনিয়রের জন্ম ১৯২৯ সালে। বাবার নামটাও একই, বাবা পেশায় পাদরি। ছোট থেকেই তাই ‘গসপেল’-এর সঙ্গে বেশ ভালো পরিচয় গড়ে ওঠে তার। 
‘নেভার লেট মি গো’র জনি এইচের ট্রাজিক পরিণতি
ডিক ক্লার্কের সঙ্গে এক ইন্টারভিউয়ে জনি এইস (ডানে)। ছবি: সংগৃহিত

জন মার্শাল আলেক্সান্ডার জুনিয়রের জন্ম ১৯২৯ সালে। বাবার নামটাও একই, বাবা পেশায় পাদরি। ছোট থেকেই তাই 'গসপেল'-এর সঙ্গে বেশ ভালো পরিচয় গড়ে ওঠে তার। 

কিশোর বয়সে তার আগ্রহ জন্মে ব্লুজ সঙ্গীতের প্রতি। ব্লুজ ছিল মূলত দাসদের বেদনা প্রকাশের গান। তবে শুরুর দিকে অনেকে শয়তানি চর্চার সঙ্গে একে মিলিয়ে ফেলায় তার বাবার আপত্তি ছিলো ব্লুজ চর্চায়। 

মেমফিসের বিয়েলি স্ট্রিটে তখন গানে মাতেন বি বি কিং, ববি ব্লান্ড, জুনিয়র পার্কার, আর্ল ফরেস্ট ও রোসকো গর্ডনরা। জন মার্শাল জুনিয়র তাদের সঙ্গে পিয়ানিস্ট হিসেবে বাজাতে শুরু করেন। এই দলটি পরিচিতি পায় বিয়েলি স্ট্রিটারস নামে। 

জনি এইস। ছবি: সংগৃহিত

বি বি কিংয়ের বিভিন্ন গানে এ সময় তিনি পিয়ানো বাজাতেন৷ ১৯৫১ সালে কিং লস এঞ্জেলেস চলে গেলে তিনি দলটির দায়িত্ব নেন। 

১৯৫২ সালে ডিউক রেকর্ডসের ডেভিড জেমস ম্যাটিস তার প্রথম রেকর্ড প্রকাশ করেন। জন মার্শালকে সংক্ষেপ করে 'জনি' আর দ্য ফোর এইসেস থেকে 'এইস'- এই হলো জন মার্শাল আলেক্সান্ডার জুনিয়রের গায়কী নাম 'জনি এইস'। 

তার সেই গানটির নাম ছিল 'মাই সং'। রিদম অ্যান্ড ব্লুজ ধাঁচের গান। তখনকার দিনে হাউলিন উলফ, এলমোর জেমস, মাডি ওয়াটারস, সনি বয় উইলিয়ামসনের মতো ব্লুজ গায়ক-বাদকেরা মূলত বিভিন্ন ক্লাবে গাইতেন। তবে তখনো এই ধরনের গানের রেকর্ড তেমন হিট হতো না। 

জনি এইস ব্লুজের রিদমের সঙ্গে নিয়ে এলেন হৃদয়গ্রাহী মেলোডি। এর ফলে তার গানগুলো তুমুল জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। 'মাই সং' আরঅ্যান্ডবি চার্টে ৯ সপ্তাহ ধরে প্রথম অবস্থানে ছিল। 

এরপর তিনি প্রচুর কনসার্ট ও মিউজিক্যাল ট্যুর করতে শুরু করেন। বিশেষত উইলি মে ওরফে 'বিগ মামা' থরটনের সঙ্গে। 

পরের দু বছরে টানা ৮টি সুপারহিট গান উপহার দেন তিনি। 'ক্রস মাই হার্ট', 'দ্য ক্লক', 'প্লিজ ফরগিভ মি', 'সেভিং মাই লাভ ফর ইউ' ও 'নেভার লেট মি গো।' 

১৯৫৪ সালের নভেম্বরে রিদম অ্যান্ড ব্লুজ-এর প্রিয় শিল্পী তালিকায় ডিস্ক জকি পোল এ তিনি ১৬তম স্থানে ছিলেন। এত অল্প বয়সে অন্য কেউ এর আগে শীর্ষ ২০ এ আসেননি। সে বছরের ডিসেম্বরে সাপ্তাহিক 'ক্যাশ বক্স' তাকে 'দ্য মোস্ট প্রোগ্রামড আর্টিস্ট'-এর স্বীকৃতি দেয়। 

১৯৫৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর। পরদিন বড়দিন। হস্টনের সিটি অডিটোরিয়ামে সেদিন সারারাত ধরে চলছে উৎসব। জনি এইস ও তার টিম মাতিয়ে দিয়েছেন। দিবাগত রাতে বিরতির ফাঁকে তিনি খেলছিলেন তার পয়েন্ট ২২ ক্যালিবার রিভলভার দিয়ে। প্রায়ই তিনি এমনটা করতেন শখের বশে। গাড়ি থেকে রাস্তার বিভিন্ন সাইনের দিকে গুলি ছোঁড়ার ভঙ্গি করতেন। কিন্তু পিস্তল লোড করা থাকতো না। 

কিন্তু এদিন আর তেমনটি হয়নি। কী হয়েছিল তা জানা যায় 'বিগ মামা' থরটন-এর বেজ প্লেয়ার কার্টিস টিলম্যানের কাছ থেকে। তিনি বলেন, 'আমি বলছি আপনাদের ঠিক কী ঘটেছে! জনি খুব মদ খাচ্ছিল আর পিস্তলটা টেবিলের আশপাশে ঘুরাচ্ছিলো। কে যেন বললো, 'এই, ওটার বিষয়ে সাবধান থাকেন।'

জনি বলল, 'আরে ঠিক আছে। পিস্তলে গুলি ভরা নেই। দেখবেন?' 

তারপর এটাকে সে তাক করলো তার দিকে, মুখে হাসি নিয়ে ট্রিগার চাপলো এবং 'দ্রাম'.....  বাজে,  খুব বাজে একটা ব্যাপার ঘটলো। বিগ মামা ড্রেসিং রুম থেকে আর্তনাদ করে বেরিয়ে এলেন, 'জনি এইস নিজেকে মেরে ফেলেছে!!'

তবে সে সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় বেরিয়েছিল জনি নাকি রাশিয়ান রুলেট দিয়ে খেলছিলেন৷ কার্টিস ও থরটন উভয়ই এটি অস্বীকার করেন।

‘নেভার লেট মি গো’র জনি এইচের ট্রাজিক পরিণতি
জনি এইস মেমোরিয়াল অ্যালবামের কভার। ছবি:সংগৃহিত

 
বিগ মামা থরটন জানান, এইস ওর গার্লফ্রেন্ডের দিকে বন্দুকটি তাক করে। সেখানে আরেকজন মহিলাও ছিলেন। তবে ও গুলি করেনি। তারপর ও বন্দুকটা তাক করলো নিজের দিকে। বন্দুক থেকে গুলি বেরোলো, তার মাথার একপাশে বিঁধল। 

জনি এইসের শেষকৃত্য হয় ১৯৫৫ সালের ৯ জানুয়ারি, মেম্ফিসের ক্লেবর্ন টেম্পল এএমসি চার্চে। ৫ হাজারের অধিক লোক সমবেত হন সেখানে। 

১৯৫৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয় তার শেষ গান 'প্লেজিং মাই লাভ।' এই গানটি সে সময় দশ সপ্তাহ আরঅ্যান্ডবি চার্টে এক নম্বরে থেকে রেকর্ড সৃষ্টি করে। ডিউক রেকর্ডসের এক হিসেব থেকে জানা যায়, তার ১৯৫৪ সালের ৩টি গান ও থরটনের 'হাউন্ড ডগ' মিলে মোট ১৭ লাখ ৫০ হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। ডিউক রেকর্ডস তার ১২টি গান একত্র করে 'জনি এইস মেমোরিয়াল অ্যালবাম' প্রকাশ করে। এটি বর্তমানে ইউটিউবে পাওয়া যায়। 

জনি এইস যে সময়টায় খ্যাতির শীর্ষে উঠছিলেন সে সময়ই তার মৃত্যু হয়। তবে তিনি ব্লুজ ধাঁচের গানকে মূলধারায় অবিস্মরণীয় সাফল্য এনে দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে 'নেভার লেট মি গো' গানটি বব ডিলান ও জোয়ান বায়েজ তাদের 'রোলিং থান্ডার রিভ্যু' নামের ওয়ার্ল্ড কনসার্ট ট্যুরে গেয়েছিলেন। বব তার সুরের দ্বারা বেশ প্রভাবিত ছিলেন। এলভিস প্রিসলি তার শেষ অ্যালবাম 'মুডি ব্লু'-তে 'প্লেজিং মাই লাভ' গানটি কভার করেন। 
জনি এইস ছিলেন তার কিশোর বয়সে আলোড়ন তোলা গায়ক। তাদের মতো অনেক তরুণ তখন জনির মতো গাইতে চাইতেন।

সত্তর থেকে নব্বই দশকে বিভিন্ন সিনেমায় গানটির মূল রেকর্ড ব্যবহৃত হয়। বিশেষত জন কার্পেন্টারের হরর সিনেমা 'ক্রিস্টিন' (১৯৮৩) -এ  গানটির চমকপ্রদ ব্যবহার জনি এইসকে আবারও নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করায়।

তথ্যসূত্র: বিচঅ্যামজার্নাল.কম

 

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago