টিভি দেখার সঙ্গে বেশি খাওয়ার সম্পর্ক
সারাদিনের কাজ শেষে বাসায় ফিরে সোফায় বসে লম্বা সময় ধরে খাবার খেতে খেতে টিভি দেখাটা বিশ্বের বহু জায়গাতেই অনেক জনপ্রিয়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে। টিভিতে মনোযোগ আকর্ষণকারী অনুষ্ঠান কিংবা নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম বা অ্যাপল টিভির মতো স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো মানুষের এই অভ্যাসকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তার কারণ এসব স্ট্রিমিং সার্ভিসে কোনো একটা সিরিজের একটা এপিসোড শেষ হলে স্বয়ংক্রিংয়ভাবে পরের এপিসোড চলতে শুরু করে। তাই প্রতি এপিসোড শেষে রিমোর্ট দিয়ে কিংবা নিজে উঠে গিয়ে পরের এপিসোড পরিবর্তন করার কাজটুকুও আর করতে হয় না।
কিন্তু সত্যিই কি টিভি দেখার সঙ্গে খাবারের রুচি পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক আছে?
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অলাভজনক মেডিকেল সেন্টারের তথ্য অনুসারে টেলিভিশন আমাদের রুচি পরিবর্তন করে না, বরং খাবারের দিক থেকে মনোযোগ অন্যত্র সরিয়ে নিতে সাহায্য করে। আমরা যখন টিভি দেখতে দেখতে খাই, তখন খাবারের ওপর থেকে আমাদের মনোযোগ সরে যায়। এমনকি পেট ভরে গেলে যে আমরা এক ধরনের নিউরোলজিক্যাল সিগন্যাল পাই, সেটিও টিভিতে মনোযোগের কারণে অনেক সময় খেয়াল করি না। খাবারের দিকে মনোযোগ না থাকার কারণে অনেক সময় আমরা কী খাচ্ছি, সেটাও টের পাই না।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টনের ৫৯১ জন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীর ওপর একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছিল, যেটি দ্য ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড হেলথ এ প্রকাশিত হয়েছিল। এই গবেষণায় দেখা গেছে অতিমাত্রায় টিভি দেখার সঙ্গে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিযুক্ত খাবার বাছাইয়ের সম্পর্ক রয়েছে।
ধরুন, আপনি একটি সংবাদ অনুষ্ঠানে দেখলেন বেশি করে ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, পরক্ষণেই একটি বিজ্ঞাপনে দেখলেন বেশি করে ঠান্ডা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আবার টিভিতে লোভনীয় খাবার দেখেও আপনার খাওয়ার ইচ্ছা জাগতে পারে। ধরুন, আপনি একটি পিৎজার বিজ্ঞাপন দেখলেন। ক্ষুধার্ত না থাকলেও আপনার তখন পিৎজা খেতে মনে হতে পারে। আবার আপনি যে টিভি অনুষ্ঠানটি দেখছেন, সেটির দৈর্ঘ্যের সঙ্গেও খাবারের পরিমান নির্ভর করতে পারে। আপনি আধাঘণ্টার একটা এপিসোড দেখতে দেখতে যে পরিমান খাবার খাবেন, এক ঘণ্টার এপিসোডে তার চেয়ে বেশি খেতে পারেন।
টিভিতে কোন ধরণের অনুষ্ঠান দেখছেন, তার উপরও আপনার খাবারের পরিমাণ নির্ভর করতে পারে। ২০১৩ সালে করা একটি গবেষণায় অর্ধেক মানুষকে রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠান এবং বাকি অর্ধেককে প্রকৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখতে দেওয়া হয়। উভয় গ্রুপকেই সমান পরিমাণ চকলেট, চিজ এবং গাজর দেওয়া হয়। দেখা গেছে, যারা রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখেছেন, তারা অন্য গ্রুপের চেয়ে বেশি পরিমাণ খেয়েছেন। অ্যাপিটাইট জার্নালে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল
Comments