বিজ্ঞান ও ঔষধশাস্ত্রে ক্লিওপেট্রার ৩ অবদান

বিজ্ঞান ও ঔষধশাস্ত্রে ক্লিওপেট্রার ৩ অবদান
জুলিয়াস সিজার ও ক্লিওপেট্টা। ছবি: গ্রানজার কালেকশন, নিউ ইয়র্ক

রানি ক্লিওপেট্রার কথা উঠলেই আমাদের মনের পর্দায় ভেসে ওঠে জুলিয়াস সিজার, অ্যান্টোনিওদের কথা। তবে আবেদনময়তা বা সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে কিংবা প্রেম ও প্রতারণার জন্য তার নাম যতটা আসে, ততটা উঠে আসেনি বিজ্ঞান সাধনায় তার অবদানের কথা।
 
তবে প্রাচীন আরবীয় লেখাগুলোতে ৩টি ক্ষেত্রে তার অবদানের কথা উল্লেখ আছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিষতত্ত্ব, রসায়ন ও ওষুধশাস্ত্র। 

বিষের প্রতি অনুরাগ 

আপনারা জেনে অবাক হবেন, ক্লিওপেট্রা বিষ নিয়ে খেলতে ভালোবাসতেন। রোমানদের হাতে ধরা পড়ে জেল খাটবেন, এমনকি মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে হবে- এমন ভয় নাকি কাজ করতো রানির মনে! 

তার মৃত্যুও কিন্তু বিষেই হয়েছিল৷ প্রতিষ্ঠিত মত অনুযায়ী, তিনি নিজে শরীরে নিয়েছিলেন সাপের ছোবল। অন্য মতে, কোকেন ও আফিম মিশিয়ে খেয়েছিলেন। 

রানি ক্লিওপেট্রা। ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু বিষের প্রেমে মগ্ন রানি ছিলেন গবেষকও। নানারকম বিষ খাইয়ে দেখতেন পশু-পাখি থেকে শুরু করে দাসদেরও। স্বামী অ্যান্টোনিওর জন্য ডিনার টেবিলের বিনোদন হিসেবেও হাজির থাকতো এই গিনিপিগেরা। রানি তারিতে তারিয়ে উপভোগ করতেন তাদের যন্ত্রণা, নোট রাখতেন বিষগুলোর আলাদা লক্ষ্মণের বিষয়েও। 

রসায়নে আগ্রহ 

বিষের খেলা রানি খেলতেন মজার জন্যই! এর বাইরেও তার ছিল রসায়নের প্রতি আগ্রহ। প্রচলিত এমন একটা গল্প আছে- মার্ক অ্যান্টোনিওকে জড়িয়ে। রানি স্বামীর সঙ্গে বাজি ধরেছিলেন ১০ মিলিয়ন সেসটারসেস (তৎকালীন প্রচলিত মুদ্রা) সমমূল্যের একটি মহাভোজের আয়োজন করবেন। 
অ্যান্টোনিও ভাবলেন রানির খেয়াল! আচ্ছা হোক আয়োজন। 

প্রথম পর্বের খাওয়া-দাওয়া হলো তৃপ্তি নিয়ে। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতেই একজন চাকরকে তিনি বললেন, এক গ্লাস ভিনেগার নিয়ে আসতে। তারপর মুক্তার একটি কানের দুল  ফেলে দিলেন ভিনেগারে। ৩ মিনিটের ভেতর সেটি গলে মিশে গেলো গ্লাসে। রানি এক চুমুকে গ্লাসে থাকা তরলটা পান করলেন। এই  মুক্তার দুল-এর দামই ছিলো সেই বাজির (১০ মিলিয়ন সেসটারসেস) সমপরিমাণ অর্থ। রানি জিতলেন। 

সবচেয়ে বড় বিষয়, মুক্তার সেই কানের দুল ভিনেগারের সঙ্গে বিক্রিয়া করে এর অম্লীয় মাত্রা কমিয়ে তরলটিকে পানের উপযোগী করেছিল। 

ওষুধ ও চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদান 

নিছক আনন্দের জন্য তো রানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেনই, পাশাপাশি চিকিৎসা করার ইতিহাসও কিন্তু আছে তার! 

ক্লিওপেট্রার চিকিৎসার ধরন ছিল মাথা ন্যাড়া করে মিশ্রণ মালিশ করা। উপকরণের ভেতর থাকতো- হরিণের মজ্জা, ভালুকের চর্বি, রিড এর বাকল, পোড়া ইঁদুর, ঘোড়ার দাঁত, পুরনো কাপড়ের টুকরো ও মধু। এক সঙ্গে সবকিছু চূর্ণ করে ও পিষে নিয়ে বানানো হতো মলম। তারপর ন্যাড়া করানো ব্যক্তির মাথায় সেই মলম মালিশ করা হতো আশেপাশে এর ঘ্রাণ পুরোটা ছড়িয়ে পড়া পর্যন্ত৷ 

ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো ও ক্ষত নিরাময়েও কাজ করেছেন রানি। তিনি রূপসজ্জার বই লিখেছেন, কালো আইলাইনারের মতো মিশরীয় সাজসজ্জা উপকরণের উল্লেখ আছে তাতে।
 
এখানে খুব অল্প মাত্রায় সীসা থাকে, যাতে কোনো ক্ষতি হয় না; বরং এতে থাকা নাইট্রিক অক্সাইড ব্যাকটেরিয়াঘটিত চক্ষু সংক্রমণ রোধে ভূমিকা রাখে। 

তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল তার পেইনকিলার উদ্ভাবনের ব্যাপারটি। বিষের বিষয়ে তার আগ্রহের কথা তো আপনারা জেনেছেন, সেখান থেকেই তিনি বানিয়ে নিয়েছিলেন ব্যথানাশক। 

রানির ভয় ছিলো রোমানদের হাতে বন্দি হতে পারেন। তাই স্বেচ্ছামৃত্যুর প্রস্তুতি হিসেবে এটি বানিয়ে থাকতে পারেন। শেষপর্যন্ত অবশ্য সে পথেই হেঁটেছিলেন তিনি, পরাজিত বন্দির মতো শেকল পায়ে না হেঁটে সাপের ছোবল নিয়েই শেষ করেছিলেন নিজের জীবন।

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিভিল ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

 

Comments

The Daily Star  | English

'Why should an innocent person be punished?' says Jahangir on Hamid's arrival

The home adviser says Hamid will face legal consequences only if an investigation finds him guilty

4h ago