বিলিভ ইট অর নট

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মানসা মুসা। ছবি: ছবি: সংগৃহিত

ধনকুবের হওয়ার চিন্তা অনেকের রয়েছে। একদিনের জন্য হলেও বিলিয়নিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি কিংবা লটারি জিতে বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়ার চিন্তা করেননি এমন লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম নেই পৃথিবীতে। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে- ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস নাকি বিল গেটস। 

আপনার হয়তো এদের নামই ঘুরে ফিরে মাথায় আসছে। কিন্তু এদের সবাইকে ছাড়িয়ে অপরিমেয় সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন চতুর্দশ শতাব্দীর মালির এক সম্রাট- প্রথম মুসা বা মানসা মুসা। 

'মানসা' শব্দটির অর্থ রাজা। চতুর্দশ শতাব্দীতে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি ছাড়াও আরও বেশকিছু অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছিলো তার শাসন। 

প্রথম প্রাপ্তি উত্তরাধিকারসূত্রে 

১৩১২ খিষ্ট্রাব্দের কথা। মালির রাজা দ্বিতীয় আবু বকর আটলান্টিক সাগরে বৃহৎ নৌবহর নিয়ে অভিযানে গিয়ে হারিয়ে যান। তারপর তার স্থলাভিষিক্ত হন প্রথম মুসা। তার বয়স তখন ৩২ বছর। সে সময় পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ ধনী সাম্রাজ্য ছিলো মালি। 

তবে মানসা মুসা এখানেই থেমে থাকেননি। নতুন করে আরও ২৪টি জনপদ অধিকার করে নেন। সঙ্গে শুরু করেন বাণিজ্য বিস্তার ও খনিজ সম্পদ আহরণের চেষ্টা। সে সময় পৃথিবীর মোট লবণের চাহিদার অর্ধেক মেটাতো তার দেশ। 

এজন্য হাজার হাজারে মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে খনি শ্রমিক হিসেবে আনা হয়। এছাড়া সেখানে ছিলো প্রচুর পরিমাণে হাতি। মুসা হাতির দাঁত সংগ্রহ ও রপ্তানির জন্য নির্বিচারে হাতি নিধন শুরু করেন। 

২৫ বছরের সাম্রাজ্য 

১৩১২ থেকে ক্ষমতায় আসীন প্রথম মুসা মারা যান ১৩৩৭ সালে। এর ভেতর মালি পরিণত হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী সাম্রাজ্যে। আজকের দিনের বুরকিনা ফাসো, মৌরিতানিয়া, চাদ, নাইজেরিয়া, নাইজার, গুয়েনিয়া, গাম্বিয়া, সেনেগাল ও মালিজুড়ে ছিলো তার সাম্রাজ্য। সে সময় আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্থপতিদের এনে তিনি পুরো নগরসভ্যতার পরিকল্পিত নকশা ও গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেছিলেন। যার ফসল গাও ও তিম্বুকতুর মতো অত্যাধুনিক নগরীর গড়ে ওঠা। 

এ ছাড়া মালিকে কৃষিতে ও শিক্ষায় অনন্য করে তোলেন তিনি। তিম্বুকতুতে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা আসতেন জ্ঞানার্জনের জন্য। 

মক্কা অভিমুখে সেই হজ 

১৩২৪ সালে মানসা মুসা মক্কায় পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য গিয়েছিলেন। মালি থেকে মিশর হয়ে মক্কায় পৌঁছেছিলেন তারা। যাত্রাপথে লোকের মুখে মুখে ফিরতে শুরু করে তার নাম। এই হজ্বের পর পৃথিবীজুড়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। 

এই সফরে মুসার সঙ্গে ছিল ৬০ হাজার মানুষ ও ১২ হাজার ব্যক্তিগত দাসের এক বিশাল বহর! প্রত্যেকে সজ্জিত ছিল পারস্যের রেশমি পোশাকে। মুসা যখন ঘোড়ায় চড়ে যেতেন, তার সামনে থাকতো ৫০০ ভৃত্য। সবার হাতে থাকতো সোনার ছড়ি। 

কায়রোয় থাকাকালীন মুসা অকাতরে বিলিয়ে দিতে শুরু করেন সোনা। এতে করে সোনা সেখানে এতটাই সস্তা হয়ে পড়ে যে, এর দাম আগের অবস্থায় ফিরে আসতে লেগেছিলো ঠিক এক যুগ! তবে মুসা এই সফরের মাধ্যমেই পৃথিবীজুড়ে পরিচিতি পান। ১৩৭৫ সালে তৈরি স্প্যানিশ ম্যাপ কাতালান অ্যাটলাসে পশ্চিম আফ্রিকাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেখানে দেখানো হয় সিংহাসনে বসে এক হাতে সোনার লাঠি ও আরেক হাতে সোনার নাগেট ধরে থাকা মানসা প্রথম মুসাকে। 

বর্তমান সময় হিসেবে সম্পদের পরিমাণ 

বর্তমানে ধনকুবের ইলন মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ১৯৬ বিলিয়ন ডলার ও জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ১২৩.৭ বিলিয়ন ডলার। মানসা মুসার সময়ে জিনিসপত্র ছিলো নিতান্তই সস্তা। তাই তাকে সর্বকালের শীর্ষ ধনী মানতে অনেকেরই কষ্ট হতে পারে। তবে হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেছে, ১৩৩৭  সালে মৃত্যুর সময় মুসা যা রেখে গিয়েছিলেন, বর্তমান সময়ের হিসেবে সেই সম্পদের মূল্য অন্তত ৪০০ বিলিয়ন ডলার! 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়
 

Comments

The Daily Star  | English

‘People's will, not mine’

Yunus tells Malaysia's Bernama why he stepped into Bangladesh's political hot seat

9h ago