বিড়াল তাদের সঙ্গী ও কাছের মানুষের নাম-চেহারা মনে রাখতে পারে: গবেষণা

বিড়াল তাদের সঙ্গী ও কাছের মানুষের নাম-চেহারা মনে রাখতে পারে: গবেষণা
ছবি: সংগৃহীত

জাপানের একদল বিজ্ঞানী তাদের গবেষণায়  দেখেছেন, ফেলিস ক্যাটস অর্থাৎ, বিড়ালরা পরিচিত বিড়ালদের নাম ও চেহারা এবং বাড়ির মানুষদের নাম ও চেহারা মিলিয়ে তাদের চিনতে পারে।

পৃথিবীতে বিড়ালের অনেকগুলো প্রজাতিই গৃহপালিত। যদিও ফেলিস লিবিকা বলে পরিচিত লিবিয়ান বন্য বিড়াল পোষ মানে না, কিন্তু এর বাইরে ঘরে পালিত বিড়ালদের ভেতর মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো সামাজিক আচরণ করতে দেখা যায়। 

পোষা বিড়ালেরা খাবার খোঁজার জন্য মানুষের প্রতি ইঙ্গিত করে থাকে। কিংবা চোখের দৃষ্টি দিয়েও বুঝিয়ে দেয় তারা খাবার খুঁজছে। তারা ভিন্ন মানুষদের মুখভঙ্গির পার্থক্য বুঝতে পারে, ধরতে পারে ভিন্ন ধরনের আবেগিক প্রকাশগুলোও। নিজেদের মালিকের কণ্ঠস্বরও তারা ঠিক চিনতে পারে। উপরন্তু, বিড়ালরা বড় ফ্রেম বা পর্দায় ছবি দেখে চিনতে পারে তাদের মালিককে, মানুষদের আবেগ প্রকাশক শব্দ ও ভঙ্গিমা থেকে মালিকের কণ্ঠের স্বরকে আলাদা করে চিনে নিতে পারে। 

নতুন দুটো পরীক্ষায় কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান উন্নয়ন সংসদের (জাপান) ড. সাহো তাকাগি ও তার সহকর্মীরা দেখেছেন, বিড়ালরা পরিচিত বিড়ালদের নাম ও চেহারা মেলাতে পারে  কি না এবং পরিবারের মানুষদের নাম ও চেহারা মেলাতে পারে কি না। 

তাদের মতে, 'আমাদের পূর্বানুমান (হাইপোথিসিস) ছিল বিড়ালরা তাদের মালিকের সংস্পর্শ আছে এমন মিথস্ক্রিয়াগুলো খেয়াল করার মাধ্যমে চেহারা চেনা ও নাম মনে রাখতে পারার ব্যাপারটা আয়ত্ত্ব করে। যত বেশি পর্যবেক্ষণ করতে পারে, চেনা-জানাটা তত দৃঢ় হয়।'

'আমরা বিড়ালদের দুটো দলকে নিয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে থাকা বিড়ালদের সংখ্যায় ছিল পার্থক্য। একদল ছিল ক্যাট ক্যাফেতে থাকা বিড়াল- অনেকগুলো বিড়াল থাকে একসঙ্গে; আরেকদিকে ছিল বাড়িতে পোষা বিড়াল।' 

এ ক্ষেত্রে গবেষণার 'সাবজেক্ট' হিসেবে নির্দিষ্ট বিড়ালটিকে পরিচিত বা অপরিচিত কোনো বিড়ালের নাম বলা হয় ও স্ক্রিনে সেই বিড়ালটির ছবি দেখানো হয়। এখানে নাম শোনানোর কাজটি তার মালিক যেমন করেন, তেমনি করেন গবেষকরাও।  

পরীক্ষণে অর্ধেক অংশে নাম ও চেহারার মিল রাখা হলেও বাকি অর্ধেকে তা করা হয়নি। 

প্রথম পরীক্ষণের ফল মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পোষা বিড়ালরা নাম ও চেহারায় অসঙ্গতি পেলে বেশি সময় ধরে মনিটরে তাকিয়ে থাকে। অর্থাৎ, ব্যাপারটি তাদের কাছে তুলনামূলক বেশি অপ্রত্যাশিত। কিন্তু ক্যাফের বিড়ালদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, ক্যাফেতে অনেকগুলো বিড়াল একসঙ্গে থাকে, একই বিড়ালকে দর্শণার্থীদের একেকজন একেক নামে ডাকতে পারে। কিন্তু বাড়িতে থাকা অল্প কয়েকটি বিড়ালের ভেতর কার কী নাম তা সহজেই অন্য বিড়ালদের মনে গেঁথে যায়। 

দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, তুলনামূলক বড় পরিবারে থাকা বিড়ালরা নাম-ছবির অসঙ্গতির ক্ষেত্রে বেশি সময় ধরে মনিটরে তাকিয়ে থাকে। অধিকন্তু, যে বিড়ালরা তুলনামূলক বেশি সময় ধরে অনেক মানুষদের সঙ্গে আছে, তাদের ভেতর এই প্রবণতা বেশি। যদিও বয়সের সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে কি না তা এই গবেষণায় নির্ণয় করা হয়নি। তবে ক্যাফেতে থাকা বিড়ালদের সুনির্দিষ্ট মানুষকে চেনার সুযোগ হয় না। বাড়ির বিড়ালরা কিছু মানুষের সঙ্গে দীর্ঘসময় থাকার ফলে তাদের স্পষ্টত চিনতে পারে। 

গবেষকদের মতে, 'আমাদের গবেষণা এমন প্রমাণ দিচ্ছে যে, বিড়ালরা তাদের সঙ্গীর নাম ও তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ চেহারাকে মেলাতে পারে খুব বড় কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই।' গবেষণাকর্মটি সায়েন্টিফিক রিপোর্টস নামের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। 

তথ্যসূত্র: সাইনিউজ ও বিগথিংককম অবলম্বনে
 

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয়

 

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Prof Yunus named among Time’s 100 Most Influential People of 2025

A tribute article on Prof Yunus was written by Hillary Clinton for the magazine

36m ago